বাবরি মসজিদের সেই জায়গায় হাজারবার খুঁড়েও পাওয়া যায়নি মন্দিরের অস্তিত্ব

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের নিচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হাজারবার খুঁড়েও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ওই এলাকায় বেশ কয়েকবার খোঁড়াখুঁড়ি চালানো হয়েছে।

কিন্তু কোনো প্রতœতাত্তি¡কই মন্দির পাননি।
এমনকি সর্বশেষ ভারতের প্রতœতত্ব বিভাগ ‘দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র (এআইএ) প্রতœতাত্তি¡ক খননেও কোনো মন্দির মেলেনি। এএসআই’র চূড়ান্ত রিপোর্টেও কোনো মন্দির থাকার কথা উল্লেখ করা হয়নি।

সংস্থাটির দুই প্রতœতাত্তি¡কের মতে, মসজিদের নিচে প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ ছিল। বাবরি মসজিদ ভূমি সংক্রান্ত মামলার রায়ে এএসআই’র রিপোর্টের ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভারতের সুপ্রিমকোর্টি।

গত শুক্রবার দ্য ওয়ারের এক রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল।

এখন থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয় বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি, শিব সেনা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্রপন্থীরা। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচন সামনে করে এমনকি চূড়ান্ত রায়ের আগেই সেখানে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে চাপে রেখেছিল সংগঠনটি।

মসজিদ ধ্বংসের প্রায় ১০ বছর পর ২০০২ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে অযোধ্যার বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের জমিতে খনন কাজ চালানোর নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে প্রতœতাত্তি¡কদের একটি দল।

২০০৩ সালের আগস্টে ৫৭৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট কোর্টে জমা দেয় এএসআই। রিপোর্টে সংস্থাটি দাবি করে, বিধ্বস্ত বাবরি মসজিদের নিচে মাটি খুঁড়ে তারা একটি ‘বিশালাকার কাঠামো’ খুঁজে পেয়েছে। তবে সেটা যে কোনো মন্দিরের, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ তারা তাদের রিপোর্টে বলেননি।

এএসআই’র এই রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি ওঠে দলের অন্যান্য প্রতœতাত্তি¡কদের মধ্য থেকেই। রিপোর্টকে ‘অস্পষ্ট ও স্ববিরোধী’ নাকচ করে দেয় বাররি মসজিদ মামলার বাদী সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

রিপোর্ট নিয়ে আপত্তি জানানো দুই প্রতœতাত্তিক হলেন সুপ্রিয়া ভার্মা ও জয়া মেনন। উভয়েই সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের পক্ষে এএসআই’র খননকার্যে অংশ নিয়েছিলেন।
এএসআই’র রিপোর্ট এবং এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ২০১০

সালে ‘ইকনোমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি’ শীর্ষক জার্নালে একটি প্রবন্ধ লেখেন এই দুই প্রতœতাত্তি¡ক।

প্রবন্ধে তারা বলেন, ‘খননকালে এএসআই এমন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে যাতে মনে হয়েছে এএসআইর অন্য সদস্যরা মনে মনে আগেই একটা ফলাফল তৈরি করে রেখেছিলেন।’
এএসআই’র রিপোর্ট নিয়ে কেন আপত্তি জানিয়েছিলেন সে বিষয়ে স¤প্রতি হাফিংটন পোস্টকে এক সাক্ষাৎকারে সবিস্তারে জানিয়েছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পতœতত্ত¡ বিভাগের অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভার্মা।

তিনি বলেন, ‘আজও পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, বাবরি মসজিদের নিচে কোনো মন্দির ছিল।’ তার মতে, ‘মসজিদের নিচে আসলে পুরনো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ ছিল।’

ইতিপূর্বে বাবরি মসজিদ এলাকায় আরও বেশ কয়েকবার খনন হয়েছিল বলে জানান ভার্মা। প্রথমবার ১৮৬১ সালে খনন করেন এএসআই’র প্রথম মহাপরিচালক আলেক্সান্ডার কানিংহাম। খোড়াখুড়িতে তিনিও ধ্বংষাবশেষ পেয়েছিলেন। তবে সেগুলো কিছুটা বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্য ও বিহার ধরনের। কিন্তু এ বিষয়ে তার রিপোর্টে কিছু উল্লেখ নেই।

১৯৬৯ সালে দ্বিতীয়বারের মতো খনন করে বারানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত¡ বিভাগ। তারা তাদের রিপোর্টে জানায়, ওই এলাকায় প্রাগৈতিহাসকি ও মধ্যযুগেও মানববসতি ছিল। তবে মন্দির বিষয়ক কোনো কথা বলেননি তারা।

নিজেস্ব প্রতিনিধি