বড় হচ্ছে দেশের মোবাইল গেমিং খাত

প্রযুক্তির অগ্রগতির এ সময়ে অন্য যে কোনো খাতের মতো আমাদের দেশেও মোবাইল গেমসের বাজার বড় হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলারের এ মোবাইল গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২.৫ বিলিয়ন একটিভ প্লেয়ার আছে যারা নিয়মিত নানা ধরনের মোবাইল গেমস খেলছে। গেমিংয়ের এ বিলিয়ন ডলার বাজার ধরতে দেশে শতাধিক গেমিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান; আসছে বিদেশি বিনিয়োগ। ২০১৯ সালে ভারতের প্রথম সারির মোবাইল গেমস নির্মাতা কোম্পানি মুনফ্রগ ল্যাবস্ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এবং এখানে তাদের অঙ্গসংগঠন উল্কা গেমস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। সম্প্রতি এ প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করেছে সুইডেনভিত্তিক মোবাইল গেমস নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্টিলফ্রন্ট গ্রুপ। এর মাধ্যমে উল্কা গেমস লিমিটেড বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল গেমিং কোম্পানি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলো।

বাংলাদেশের গেমিং খাতের অবস্থা

বিগত কয়েক বছর ধরে বিশাল এ বাজার ধরতে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো নিজ উদ্যোগে নিরলস প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু সম্ভাবনাময় বাজারে আমাদের অবদান মাত্র ৫০-৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো যা কিনা এক শতাংশেরও অনেক নিচে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানে আমাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে মুনফ্রগ ল্যাবস ও উল্কা গেমস লিমিটেড-এর লুডো ক্লাব, তিন পাত্তি গোল্ড, আড্ডা, ক্যারাম ইত্যাদি গেম বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বজুড়ে ১৮ কোটির বেশি ডাউনলোড হয়েছে গেমগুলো। আলফা পটেটো, বাংলাদেশের আরেকটি পুরোনো এবং স্বনামধন্য গেম স্টুডিও। তারা তাদের প্রকাশক লায়ন স্টুডিওর সঙ্গে মিলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু জনপ্রিয় গেমস তৈরি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আই পিল গুড, আইসিং অন দ্যা কেক, পন শপ মাস্টার, প্র্যাঙ্ক মাস্টার থ্রিডি।

এ ছাড়াও থান্ডার গেমস ও প্লেয়েন্স বিদেশি নামকরা প্রকাশক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে এবং চেষ্টা করে যাচ্ছে নতুন নতুন গেম নিয়ে আসার জন্য।

গেমিং নীতিমালা জরুরি

রাইজ আপ ল্যাবস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এরশাদুল হক বলেন, গেমিং স্টুডিওগুলো তাদের গেম থেকে বিজ্ঞাপন, সাবস্ক্রিপশন ও ইন-অ্যাপ পারচেজ-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে থাকে। তা ছাড়া সাধারণত সব মোবাইল গেমে ভার্চুয়াল স্টোর থাকে। প্লেয়াররা তাদের গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে আরও ভালো করার জন্য এ স্টোর থেকে ভার্চুয়াল প্রোডাক্ট অথবা সাবস্ক্রিপশন ক্রয় করেন। এখান থেকেই গেম সবচেয়ে বেশি উপার্জন করে থাকে। গেম ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মসংস্থান ও আয়ের দারুণ সুযোগ রয়েছে। এখন ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে নীতিমালা খুব জরুরি। আশা করি সরকার এ দিকটা দেখবে।

উল্কা গেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামিলুর রশিদ বলেন, আমাদের দেশে তৈরি গেম থেকেও এখন অনলাইন এবং অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশনের মাধ্যমে আয় হচ্ছে। মূলত গেমের অ্যাড, সাবস্ক্রিপশন ও ইন-অ্যাপ পারচেজ থেকে এ আয় হয়ে থাকে। দেশীয় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এই আয় থেকে সরকারকে ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করে। জামিলুর রশিদ বলেন, সঠিক পরিচর্যা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও অনেক গেমিং স্টুডিও এ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও সরকারের রাজস্ব আয়ে অবদান রাখবে বলেও জানান জামিলুর রশিদ।

এ ছাড়াও যেসব বিদেশি গেমস বাংলাদেশের বাইরে থেকে ব্যবসা করছে, তাদের এ দেশে লোকাল অফিস ও ডেভেলপমেন্ট সেন্টার করার জন্য তাগিদ দেওয়া যেতে পারে। তাতে করে সরকার তার ন্যায্য ভ্যাট-ট্যাক্স পাবে এবং সেই সঙ্গে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান।