ভাবিকে ‘শিক্ষা’ দিতে আপন ভাতিজিকে হত্যা

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুর এলাকায় মাঠের পাশে পরিত্যক্ত শৌচাগার থেকে ছয় বছরের মেয়ে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির নাম সানজিদা খাতুন (৬)। গতকাল রোববার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হয়েছে একজন। প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছে সে। পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে ‘শিক্ষা’ দিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

উপজেলার হরিনারায়ণপুর এলাকার সোহাগ হোসেনের মেয়ে। বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে তাকে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকে পুলিশ রহস্য উদঘাটনে একটানা কাজ করে।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাতের ভাষ্যমতে, ঘটনার পরপরই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ও আতিকুর রহমান (সদও সার্কেল) ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনার রহস্য উৎঘাটনের কাজ শুরু করে। একটানা নয় ঘণ্টা কাজ শেষে রাত তিনটায় সময় তারা নিশ্চিত হন শিশুটির আপন ফুপু এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তাকে বাড়ি থেকেই আটক করে রাতেই থানায় নেওয়া হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুর রহমান বলেন, রাতেই পরিবারের সব সদস্যদের বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের সারাদিনের চাল-চলন বিষয়ে নানা কথা শোনা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই কাউকে সন্দেহ করা যাচ্ছিল। পরিবারের সকল সদস্যই স্বাভাবিক আচরণ করছিল। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়নি এমন তথ্য কয়েক মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে কীভাবে হত্যা এবং কেন করা হলো সেটা বের করার জন্য কাজ শুরু করা হয়।

রাত বারটার দিকে ওই এলাকার এক মাইক্রোবাস চালক আকতার হোসেন পুলিশকে জানায়, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পরিত্যক্ত ইউপি ভূমি কার্যালয় থেকে সানজিদার ফুপুকে বের হতে দেখে। এমন কথা শোনার পরই পুলিশ বাড়িতে থাকা সানজিদার ফুপুকে আলাদা একটা কক্ষে নিয়ে নারী পুলিশ কর্মকর্তা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে সে জানায়, শিশুটিকে সেই হত্যা করেছে।

পুলিশ বলছে, শিশুটির মায়ের সাথে তার দাদি ও অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া ফুপুর পারিবারিক কলহ চলছিল। প্রায় দিনই তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। শিশুটির বাবার স্থানীয় বাজারে একটি দোকান রয়েছে। শিশুটির মা ও ফুপুর মধ্যে নানা সময়ে গালমন্দ ঝগড়া চলতো। ভাবিকে শিক্ষা দিতেই সানজিদাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

ঘটনার দিন বিকেলে চানাচুর কিনে খাবার জন্য সানজিদাকে নিয়ে তার ফুপু বাড়ির পাশেই পরিত্যক্ত ভূমি কার্যালয়ে যায়। সেখানে দুজন মিলে চানাচুরও খায়। একপর্যায়ে সানজিদাকে একটা থাপ্পড় দিলে সে পড়ে গিয়ে কান্না করে। এর পরপরই শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সুমনা বাড়ি ফিরে আসে।

সানজিদার বাবা সোহাগ হোসেন বলেন, সানজিদা দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন আশপাশে খোঁজা শুরু করেন।

একপর্যায়ে মেয়ের সন্ধান চেয়ে বিকেলে হরিনারায়ণপুর বাজারে মাইকিং করেন। এরপরও তার হদিস না পাওয়ায় খোঁজ চলতে থাকে। সন্ধ্যার পর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা কাচারি মাঠের পাশের পরিত্যক্ত শৌচাগারে একটি শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে। পরে সানজিদার পরিবারের লোকজন এসে তার লাশ শনাক্ত করেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আতিকুর রহমান বলেন, থানায় হত্যা মামলা নেওয়া হচ্ছে। লাশ ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।