মনিরুজ্জামানের জাতীয় পুরস্কারের ৩টি ট্রফি চুরি

বিখ্যাত গীতিকার মনিরুজ্জামান মনিরের বাসায় চুরি হয়েছে। তবে চোর শুধু তার ৫টি ট্রফি নিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ট্রফি।

চুরি যাওয়া ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে, ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দুই জীবন’ সিনেমার ‘তুমি ছাড়া আমি একা পৃথিবীটা মেঘে ঢাকা’, ১৯৮৯ সালের ‘চেতনা’ ছবির ‘এই হাত করে নাও হাতিয়ার’ এবং ১৯৯০ সালের ‘দোলনা’ চলচ্চিত্রের ‘তুমি আমার কত চেনা’ গানগুলো। বাকি দুটি হচ্ছে চায়না বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ অ্যাওয়ার্ড ও চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির পুরস্কার।

ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গীতিকবি সংঘ। সেইসাথে অবিলম্বে ট্রফিগুলো উদ্ধারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে গীতিকবি সংঘ জানায়, গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ-এর আজীবন সদস্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় মনিরুজ্জামান মনিরের অনবদ্য সৃষ্টির সুবাদে অর্জিত ৫টি ট্রফি চুরি হয়ে গেছে। ৩ নভেম্বর রাতে তার পশ্চিম মেরুল বাড্ডার বাসার জানালা ভেঙে চুরি হওয়া এই ট্রফিগুলোর মধ্যে ৩টিই ছিলো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

উদ্বেগ জানিয়ে সংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুরির ঘটনাটি আমাদের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানতে পেরেছি, চুরির ঘটনার পর যথাযথ প্রক্রিয়ায় পুলিশি সহায়তা চেয়েছেন মনিরুজ্জামান মনির। কিন্তু হতাশার বিষয় এই যে, ২০ দিনেও (২৩ নভেম্বর) ট্রফিগুলো উদ্ধার হয়নি কিংবা কারা চুরি করেছে সেটিও চিহ্নিত করা হয়নি। যা আমাদের জন্য হতাশার বিষয়। দেশের নন্দিত এই অগ্রজ গীতিকবির চুরি হওয়া সম্মান পুনরুদ্ধারের বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে জোর দাবি জানাই পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি। আমরা চাই অবিলম্বে ট্রফিগুলো উদ্ধার এবং দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

মনিরুজ্জামান মনিরের বরাতে সংগঠনটির পক্ষে বিবৃতি আরও বলা হয়,‘মনিরুজ্জামানের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, ৩ নভেম্বর রাতে তার বাসার জানালা ভেঙে মোট পাঁচটি পুরস্কারের ট্রফি নিয়ে যায় অজ্ঞাতনামারা। বিষয়টি সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর টের পান তিনি। এরপর সেগুলো উদ্ধারের লক্ষ্যে ৫ নভেম্বর বাড্ডা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ডায়েরি নম্বর ৩৬১। পুলিশ তার বাসা পরিদর্শন করে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়ে যান। কিন্তু এখনও (২৩ নভেম্বর) পর্যন্ত এ বিষয়ে পুলিশের কাছে আর কোনও অগ্রগতি মেলেনি।’

ট্রফি না পেলে কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা মনে করি, এই ঘটনাটি দেশের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলার প্রতি বড় হুমকি এবং শিল্পীদের প্রতি অসহায়ত্বের বার্তা দেয়। তাই জাতীয় এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখার অনুরোধ করছি সরকার তথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। আমরা মনে করি, সরকারের দেওয়া স্বীকৃতি চুরি বা ডাকাতি হলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়া সরকারের ওপরেই বর্তায়। অবিলম্বে এই বিষয়টির সমাধান না হলে আমরা সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচিতে যাবো। কারণ আমাদের প্রতিটি সদস্য ও সংগীত সংশ্লিষ্টদের কাছে এই বিষয়টি প্রচণ্ড আবেগ ও অভিমানের।’

জানা গেছে, মনিরুজ্জামান মনিরের চুরি যাওয়া ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে, ১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দুই জীবন’ সিনেমার ‘তুমি ছাড়া আমি একা পৃথিবীটা মেঘে ঢাকা’, ১৯৮৯ সালের ‘চেতনা’ ছবির ‘এই হাত করে নাও হাতিয়ার’ এবং ১৯৯০ সালের ‘দোলনা’ চলচ্চিত্রের ‘তুমি আমার কত চেনা’ গানগুলো।

বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সফল এবং খ্যাতিমান গীতিকবি মনিরুজ্জামান মনির। আশির দশকের শেষভাগ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা গান রচনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি গান হলো- ‘বুকে আছে মন, মনে আছে আশা’, ‘কী জাদু করিলা পিরিতি শিখাইলা’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, কী দিয়া মন কাড়িলা’, ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ও আমার বন্ধু গো চির সাথি পথচলার’, ‘আমি চিরকাল প্রেমেরও কাঙাল’ ইত্যাদি।

সিনেমায় তার লেখা সর্বশেষ জনপ্রিয় গান ‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও, আমি এক সিন্ধু হৃদয় দেবো’। এছাড়া অডিও ভুবনেও মনিরুজ্জামান মনির প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। লিখেছেন ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন’, ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি’র মতো বিখ্যাত সব গীত।