
মেহেরপুর শহরের রাস্তাঘাট একসময় ছিলো নানান ধরনের রাস্তার খাবারের দোকানে ভরপুর। ফুটপাতজুড়ে চলতো জমজমাট ব্যবসা, তবে এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তিও ছিলো কম নয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে মেহেরপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালামের সিদ্ধান্তে ফুটপাতকে পুরোপুরি পথচারীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এবং এসব দোকানিকে গড়পুকুর এলাকায় স্থানান্তর করা।
গড়পুকুর চত্বর ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সেটি ধীরে ধীরে রূপ নেয় এক অনন্য আড্ডাখানায়। এখন গড়পুকুর শুধু পুকুর নয় এটি এক প্রকারের মেলা। প্রতিদিনই এখানে মানুষের সমাগম বেড়েই চলেছে। পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, তরুণ-তরুণী সকলের ভিড় জমে থাকে সারাদিন।
ঘুরতে আসা মোঃ সাওন হোসেন বলেন, গড়ে এখন একটা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি। খাওয়া-দাওয়া করব আর সময় কাটাবো।
মাহি মুবাশ্বেরা বলেন, এখন খাবার কিনতে অনেক সুবিধা হচ্ছে। আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার কেনার সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি ছিল, কিন্তু এখন আর সে ঝুঁকি নেই। বাচ্চারাও গড়ের পাশে গিয়ে খেলতে পারে। যদিও পুকুরে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে একটু খেয়াল রাখলেই ঠিক থাকবে। এখন বসে খাওয়া যায়, গল্প করা যায় একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
শুবতিপুরের মোঃ রাব্বি বলেন, রাস্তার তুলনায় গড়ের খাবার অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আগে ধুলাবালি, ময়লা খাবারে পড়ত, এখন আর সেই সমস্যা নেই। এছাড়া যানজটের সমস্যা থেকেও আমরা মুক্ত।
এনামুল হক বলেন, আগে রাস্তায় প্রচুর যানজট হতো। কিন্তু দোকানগুলো গড়ে স্থানান্তর হওয়ায় রাস্তা ফাঁকা হয়েছে এবং গড় এখন মেলার মতো লাগছে।
বিভিন্ন ধরনের খাবারের সমাহার ও খোলামেলা পরিবেশ সবমিলিয়ে গড়পুকুর এখন ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম জনপ্রিয় স্থান। দোকানিরাও নতুন জায়গায় স্বস্তি নিয়ে ব্যবসা করছেন। তাদের মতে, আগে ফুটপাতে জায়গা সংকট, যানজট আর বসার স্থানের সংকটে ব্যবসা করা কঠিন ছিলো। এখন গড়পুকুরে তারা নির্ভয়ে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করতে পারছেন।
এ জে মোমো স্টেশনের আয়শা বলেন, আগে রাস্তায় মানুষজনকে বসানো সম্ভব ছিল না। কিন্তু এখন বসার ব্যবস্থা করায় ব্যবসা ভালো হচ্ছে।
মিস্টার স্মুদির ব্যবসায়ী সাকিব মাহমুদ বাপ্পী বলেন, রাস্তার তুলনায় এখানে অনেক ভালো ব্যবসা করছি। আগে জায়গা ছিল ছোট, অস্বাস্থ্যকর এবং নানা সমস্যায় পড়তে হতো। এখন আমরা ভালোভাবে খাবার রান্না করতে পারি, বিক্রি করতে পারি সবই সুবিধা হচ্ছে।
বার্গার ব্রাইটের রাকিবুল হাসান বলেন, এখানে খেতে আসা মানুষ আছে, কিন্তু খাবার নিয়ে যাওয়ার (টেকঅ্যাওয়ে) মানুষ কম। রাস্তায় যতটা বিক্রি হতো, এখানে তার চেয়ে কিছুটা কম বলা যায়।
গড়পুকুরের এই রূপান্তর শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, পথচারীদের চলাচল সহজ করেছে এবং ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য সৃষ্টি করেছে নতুন সম্ভাবনা।


