মেহেরপুর জেলা শহরের বড় বাজারের চাঁদনি মার্কেটে দাঁড়িয়ে আছে এক শতাব্দী প্রাচীন একটি দোকান। নামের চেয়ে তার পরিচয় যেন আরও বড়- কারণ এই দোকান শুধু কেনা-বেচার স্থান নয়, বরং এটি সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা এক টুকরো ইতিহাস। ১৯১১ সালে শুরু, এখনো বহাল তবিয়তে বংশ পরম্পরা দোকানটি টিকে আছে সুনামের সাথে।
এই দোকানের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো একটি বাঁশ, যা প্রতিষ্ঠার সময় দোকানের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ঠেকা দিয়ে বসানো হয়েছিল কিছু সামগ্রি দৃশ্যমান করতে। এই বাঁশে ঝুলিয়ে রাখা হতো নানা রকম পণ্য ঝুড়ি, প্যাকেট, ওষুধ, থলে ইত্যাদি। শত বছর পার হয়ে গেলেও বাঁশটি আজও মজবুত, অক্ষত এবং ব্যবহৃত।
এই বাঁশটি এখন কেবল একটি কাঠামো নয়, বরং পরিবারের ঐতিহ্যের প্রতীক। স্থানীয় অনেকেই বলেন, “দোকানটা দেখে বোঝা যায় সময় কত বদলেছে, কিন্তু এই বাঁশ যেন আজও ১৯১১ তেই আছে!”
এই একটি বাঁশ মনে করিয়ে দেয়, ইতিহাস কেবল পাথরে লেখা থাকে না, কখনও কখনও তা ঠাঁই নেই কাঠ, বাঁশ কিম্বা মানুষের হাতে গড়া কোন জায়গায়। মেহেরপুরের এই দোকান ঠিক তেমনই যেখানে বাঁশের ভিতর গাঁথা আছে শত বছরের গর্ব, শ্রম, আর উত্তরাধিকারের গল্প। জেলার কবিরাজির সাথে জড়িতদের এই প্রতিষ্ঠানই একমাত্র ভরসা। এখানেই পাওয়া যায় ভেষজ সামগ্রি।
এই দোকানটির শুরু হয়েছিল ১৯১১ সালে, নিবারণ চন্দ্র চন্দ্র নামের এক ব্যবসায়ীর হাতে। ভেষজ (বানিয়াতি) ওষুধ, দশকর্মা আর মুদি মালামাল বিক্রির মাধ্যমে। তিনি এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেন অল্প সময়েই। তাঁর মৃত্যুর পর দুই পুত্র খগেন্দ্র নাথ চন্দ্র ও কমল চন্দ্র চন্দ্র ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেন।
ওই দুই ভাইয়ের মৃত্যুর পর খগেন চন্দ্রর ছেলে প্রদীপ চন্দ্র ও কমল চন্দ্রর ছেলে সাধন চন্দ্র‘র মধ্যে দোকান ভাগ হয় শুধু কাঠামো, ঐতিহ্য নয়। দুইটি দোকানই আজও সমান সম্মানে টিকে আছে। বাঁশটি প্রসঙ্গে প্রদীপ চন্দ্র বলেন- এই বাঁশ ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের খুঁজে পায়।