
মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতির ব্যস্ততা। প্রায় সব মণ্ডপে প্রতিমার কাঠামো গড়ে উঠেছে, রং-তুলির আঁচড় দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। কোনো কোনো মণ্ডপের প্রতিমা প্রায় প্রস্তুত হয়ে এসেছে। পাশাপাশি মণ্ডপ নির্মাণ, আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জার কাজও এগিয়ে চলছে পুরোদমে।
গতকাল মঙ্গলবার মেহেরপুর শহরের কয়েকটি পূজা মণ্ডপ ঘুরে এবং আয়োজক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার মোট ৪০টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজার আয়োজন হবে। এর মধ্যে মেহেরপুর শহরসহ সদর উপজেলায় ১৪টি, মুজিবনগরে ৮টি এবং গাংনী উপজেলায় ১৮টি মণ্ডপে দেবী দুর্গাকে বরণ করার প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে।
মেহেরপুর সদর উপজেলায় রয়েছে শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, শ্রীশ্রী নায়েববাড়ি রাধামাধব মন্দির, শ্রীশ্রী হরিসভা মন্দির, শ্রীশ্রী হরিজন বালক পূজা মন্দির, গোভীপুর রায়পাড়া দুর্গাপূজা মণ্ডপ, শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির (দাসপাড়া, গোভীপুর), শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির, শ্রীশ্রী রাধের শ্যাম মন্দির, শ্রীশ্রী রাম মন্দির, বামনপাড়া সার্বজনীন কালী মন্দির, পিরোজপুর বারেয়ারী দুর্গা মন্দির, শ্রীশ্রী কালীমাতা মন্দির (পিরোজপুর দাসপাড়া) এবং শ্রীশ্রী দুর্গা মন্দির এসব মণ্ডপে প্রস্তুতি শেষের পথে।
মুজিবনগর উপজেলায় চলছে মহাজনপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বাবুপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, কোমরপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, মোনাখালী পূজা মণ্ডপ, রতনপুর দাসপাড়া পূজা মণ্ডপ, বল্লভপুর পূজা মণ্ডপ, দারিয়াপুর ও খানপুর শ্রীশ্রী কালীমাতা মন্দিরে শারদীয় পূজার প্রস্তুতি।
গাংনী উপজেলায়ও চলছে সাজসজ্জার ব্যস্ততা। এখানে রয়েছে গাংনী কেন্দ্রীয় মন্দির, গাংনী কেন্দ্রীয় রাম মন্দির, চৌগাছা দাসপাড়া কালী মন্দির, গাড়াডোব দাসপাড়া কালী মন্দির, কচুইখালী যুগিন্দা দুর্গা মন্দির, শ্রীহরি মন্দির (নিত্যান্দপুর), রায়পুর দাসপাড়া কালী মন্দির, চাঁদপুর দাসপাড়া কালী মন্দির, আমতৈল দাসপাড়া কালী মন্দির, ষোলটাকা কর্মকারপাড়া দুর্গা মন্দির, ষোলটাকা দাসপাড়া কালী মন্দির, মটমুড়া হালদারপাড়া কালী মন্দির, বাওট দাসপাড়া কালী মন্দির, মোহাম্মদপুর দাসপাড়া কালী মন্দির, বেতবাড়িয়া দাসপাড়া কালী মন্দির, বামুন্দী কোলপাড়া কালী মন্দির, ভোমরদহ দাসপাড়া কালী মন্দির এবং হিজলবাড়িয়া দাসপাড়া কালী মন্দির প্রতিটি জায়গায় চলছে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ।
শহরের শ্রীশ্রী হরিসভা মন্দির, শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, শ্রীশ্রী নায়েববাড়ি রাধামাধব মন্দির এবং শ্রীশ্রী হরিজন বালক পূজা মন্দির প্রাঙ্গণেও আয়োজনের শেষ মুহূর্তের কাজ এগিয়ে চলেছে। আগামী রবিবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা।
শ্রীশ্রী নায়েববাড়ি রাধামাধব মন্দিরের প্রতিমাশিল্পী শংকর বলেন, আসন্ন দুর্গা পূজা উপলক্ষে আমরা প্রতিমা শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছি। ২৮ তারিখে আমাদের পূজা শুরু হবে। সেজন্য রঙের কাজ নিয়ে আমরা খুবই ব্যস্ত। এবং আমাদের তিন-চারটা মূর্তি আছে, দিনরাত পরিশ্রম করে রঙের কাজটা যাতে তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারি, সেজন্য আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি।
প্রতিমাশিল্পী দীপঙ্কর বলেন, স্টেপ বাই স্টেপ আমাদের কাজ চলছে। ইতিমধ্যেই রঙের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রঙের কাজ করতে এখনো আমাদের দুই দিন মতো সময় লাগবে। ভারত থেকে এসে কাজ করে ভালোই লাগছে।
শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য ভাস্কর হালদার বলেন, আমাদের সার্বিক প্রস্তুতি চলছে। কিছুদিন পরেই আমাদের রঙের কাজ শুরু হবে। তারপরে আলোকসজ্জা এবং প্রশাসনিক সমস্ত কাজ শুরু করা হবে। প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম সম্পন্নের মাধ্যমে আমাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবী দুর্গা সব অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। পূজা উপলক্ষে মণ্ডপগুলোকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের প্রস্তুতিও চলছে এবং পূজার দিনগুলোতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
পূজা আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের দুর্গাপূজায় প্রতিমার শৈল্পিক কারুকাজ, মণ্ডপের সৌন্দর্য এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে মণ্ডপে গিয়ে পূজা উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য সার্বিক কাজ শেষ করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।