মেহেরপুরে বেকার কেন এতো বেশী?

কোনো দেশের জনশক্তির তুলনায় কর্মসংস্থানের স্বল্পতার ফলে সৃষ্ট সমস্যাই বেকার সমস্যা। বর্তমান বাংলাদেশে এই সমস্যা জটিল ও প্রকট আকার ধারণ করেছে তার চেয়েও আরোও বেশী প্রকট মেহেরপুরে, কেন? বেকারত্ব বলতে মূলত বোঝায় কর্মক্ষম শ্রমশক্তির পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব।

আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, “Unemployment (or joblessness) occurs when people are without work and actively seeking work.” The Bureau of Labour Statistics (BLS) বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলেছে- ‘বেকারত্ব হচ্ছে এমন কিছু মানুষের কর্মহীন অবস্থা; যাদের কোনো কর্ম নেই। মেহেরপুরের ভৌগোলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সামাজিক অবকাঠামো, মানুষের মানুষিকতার বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারনে অন্য জেলার চেয়ে বেকারত্বের হার এখানে বেশী। আবার কাজের ধরণের সঙ্গে শ্রমশক্তির দক্ষতার অসঙ্গতির ফলে সৃষ্টি হয় এক ধরণের বেকারত্বের হার আরোও বৃদ্ধি হয়।

মেহেরপুরে বেকার সমস্যা সৃষ্টির পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানাবিধ কারণ রয়েছে। কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো- মেহেরপুর সীমান্তবর্তী একটি জেলা। এর শহরটিও সীমান্তঘেসা। এর জেলার অন্তর্গত বিশাল অংশই পাশের দুই জেলার বাজারমূখী। এই অংশটি অন্য পার্শ্ববর্তী দুই জেলার উপর বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। তাই মেহেরপুর শহরমুখীতা হ্রাস পেয়েছে। শহর তার বাজার হারাচ্ছে।

মেহেরপুর সাধারণত কৃষিকাজ নির্ভর জেলা যেখানে জীবিকার একমাত্র মাধ্যম কৃষি। এখানকার জমিতে একটি বছরে চারটি শষ্য উৎপাদন সম্ভব। তাই ভাত কাপড়ের তেমন অভাব না থাকলেও এখানে শিল্প না থাকায় বেকারত্বের হার দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। শিল্প বা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে না উঠলে বেকারত্বের হার কমানো সম্ভব না।

তাছাড়া জনসংখ্যার সীমাহীন চাপই মূলত এর জন্য প্রধানত দায়ী। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, সেই অনুপাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে না। কৃষকের অসচেতনতা ও অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার বেকার সমস্যার অন্যতম কারণ। জমির উর্বরতা হ্রাস, কোনো কোনো ক্ষেত্রে জমি উৎপাদন শক্তিহীন হয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয় কাজের সুযোগ। কায়িক শ্রমের প্রতি অনীহা বেকার সমস্যার একটি অন্যতম প্রধান কারণ। অভাব থাকলেও মেহেরপুরের মানুষ কায়িক পরিশ্রম করতে আগ্রহী নয়। প্রাতিষ্ঠানিক চাকরি না পেয়ে বেকার হয়ে বসে থাকে, কিন্তু নিজেই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ভাগ্যোন্নয়নে উদ্যোগী হয় না। এখানকার যুবকরা ঘরে বসে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

বেশীরভাগই নিজ যোগ্যতা না বুঝে শুরুতেই বড় মাছটি ধরতে চাই, শুরুতেই বড় পদটি চায়। ছোট কাজের প্রতি নাক শিটকানো 
স্বভাব আমার এই এলাকায় প্রবল। বেকার বসে রাস্তায় সারাদিন আড্ডাবাজি করবে কিন্তু কর্মইচ্ছা নেই। আর আমাদের এই অঞ্চলের পিতামাতা অভিভাবকগনও অসচেতন। এরা যাকে বলি হোমসিকনেস বা সন্তানদের ঘরে আবদ্ধ করে রেখতে পছন্দ করেন। অন্য জেলার পিতামাতাদের দেখেছি সন্তানদের খুব অল্প বয়সেই কর্মমূখী করে তোলেন, কর্মের জন্য সন্তানকে বাহিরে পাঠিয়ে দেন। তাদের সন্তানরাও কয়েক বছরের মধ্যে স্বাবলম্বী হয়ে ঘরে ফিরে। 

কিন্তু মেহেরপুরে সন্তানের সন্তান হওয়ার পরও পিতামাতা কোলের ভিতর আগলে রাখে। সন্তানের নাকি খুব বয়স হয় নি। এই মানসিকতাও বেকারত্বের হার বৃদ্ধির আর এক কারন। শিল্প কারখানা সৃস্টি, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, যুবকদের ভিতর কর্ম স্পৃহা জাগিয়ে তোলা, মন মানুষিকতা পরিবর্তনই বেকারত্বের হার কমানোর উপায় বের করা সম্ভব।