মেহেরপুর আদালতে হোটেল আটলান্টিক নিয়ে নাজনীন খান প্রিয়ার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী

অনৈতিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অন্যতম হোতা নাজনীন খান প্রিয়া ওরফে প্রিয়া খান রিমাণ্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে।

গত সোমবার বিকালে মেহেরপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো: তারিক হাসানের খাস কামরায় প্রিয়া খান জবানবন্দী দেন।

প্রিয়া খান তার জবানবন্দীতে আটলান্টিক হোটেল মালিক মতিয়ার রহমান, তার ছেলে মামুন ও কয়েকজন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি জানান, মউক পরিচালিত মানবতার চোখ অনলাইন পোর্টালে কাজ করার সুবাদে হোটেল আটলান্টিকায় বিজ্ঞাপন নিতে গিয়ে হোটেল মালিক মতিয়ার ও তার ছেলে মামুনের সাথে পরিচয় হয়। সাংবাদিকতা ছেড়ে দেওয়ার পর হোটেল আটলান্টিকায় গিয়ে কাজ চাইলে তারা আমাকে কাজ দেওয়ার কথা বলে। আনুমানিক দেড় মাস আগে সকাল ১১ টার দিকে হোটেল মালিকের ছেলে মামুন আমাকে ফোনে ডাকে। আমি সেখানে যাওয়ার পর মামুন আমাকে অন্যের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। মামুন আমাকে আমঝুপির মৃত মোজাফফর হোসেনের ছেলে সাইদ ও সাইদের সাথে থাকা আরেকজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য বলা হয়। আমি নির্দিষ্ট রুমে অপেক্ষা করতে থাকি। কিছুক্ষণ পর সাইদ ও তার সাথে আরেকজন ব্যক্তি আসে। আমি প্রথমে সাইদের সাথে এবং পরে ওই ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্ক করি। এ জন্য মামুন আমাকে ৪হাজার টাকা দেয়। আমি পরে জানতে পারি মামুন তাদের কাছে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমি জানতাম না যে, মামুন গোপনে সেগুলো ভিডিও কওে এবং বিভিন্ন সাংবাদিকদের কাছে দিয়ে দেয়। পরে জানতে পারি, সাংবাদিকরা ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে সাইদের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। মামুন ও তার পিতা মতিয়ার সাংবাদিকদের মাধ্যমে এইসব কার্যক্রম করে থাকে।

প্রিয়া খান জবানবন্দীতে আরো জানায়, সে, বর্ষা বিপাশা, বিপাশার মা সবাই মল্লিকপুকুরের পাশে ডক্টরস ল্যাবের ৩য় তলায় জিমে গিয়ে জিম করেন এবং অবসরে সেখানে আড্ডা দেন। বর্ষা, নুসরাত, বিপাশা, ছন্দা, আরমা, আকসা, তামান্না ছাড়াও অনেকে আটলান্টিক হোটেল মালিক মতিয়ার ও তার ছেলে মামুনের সহায়তায় গোপনে ভিডিও করে এবং সাংবাদিকদের মাধ্যমে সেই ভিডিও দিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে মোটা অংকের চাঁদাবাজী করে।

জবানবন্দী শেষে জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তারিক হাসান তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত ২৩ নভেম্বর ভোররাতে মেহেরপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সদর থানা পুলিশ মঙ্গলবার দিবাগত রাতে শহরের হোটেল বাজার এলাকার ভাড়া বাসা থেকে প্রিয়া খানকে গ্রেফতার করেন।

এর আগে মনোয়ার হোসেন নামের এক ভূক্তভোগী মঙ্গলবার তাকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৪১৭/৩৮৫/৩৮৬/৫০৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৩২, তারিখ ২২/১১/২০২২ইং।

নাজনীন খান প্রিয়া চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দুলালনগর গ্রামের নাজমুল হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসাতে বসবাস করছেন তিনি।

বাদীর অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউকে চাকুরী সূত্রে মোছা: নাজনীন খান প্রিয়া ওরফে প্রিয়া খানের সাথে পরিচয় হয়। কাজের সূত্রে আমঝুপি ফার্ম সংলগ্ন মউক হেলথ কেয়ারের দায়িত্ব পালনের সময়ে গত তিন মাস আগের ২৩/০৮/২২ তারিখে আনুমানিক বেলা ১২টার সময়ে আমাকে ছাদে যাওয়ার জন্য ডাকলে, আমি সরল বিশ্বাসে ছাদে উঠলে, আমাকে জড়িয়ে ধরে বেশ কয়েকটি ছবি তোলে, আমি স্বাভাবিকভাবে সহজ-সরল বিশ্বাসে সহকর্মী হিসাবে তখন কিছু বলিনি। কিন্তু বর্তমানে নাজনিন খান প্রিয়া আসামাজিক আচারণের দায়ে মানব উন্নয়ন কেন্দ্র মউক হতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাকুরিচ্যুত হন।

চাকরিচ্যুত হওয়ার পর গত দুই মাস যাবৎ তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে পূর্বের সেই ঘনিষ্ট ছবিগুলি ভাইরাল করে দিবে ও পত্রিকায় সংবাদ ছাপানোর ভয় দেখিয়ে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। ইতোমধ্যে আমি সামাজিক ও পারিবারিক ভয়ে তাকে বিশ হাজার টাকা প্রদান করেছি। এর পরে নাজনীন খান প্রিয়া বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দেওয়ায়, ভয়ে আমি আমার ব্যবহৃত সিমটি ফেলে দিয়েছি। বর্তমানে আমি সব সময় আতঙ্কিত আছি যেকোন সময়ে নাজনীন খান প্রিয়াসহ তাদের গ্রুপ আমাকে ব্ল্যাক মেইল করে বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি ও মামলা-মোকদ্দমা করিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে নিঃস্ব করে দেবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ নভেম্বর দিবাগত রাতে হোটেল আটলান্টিকের মালিক মতিয়ার, তার ছেলে মামুন ও ছন্দা নামের এক নারী আটক হয়। পরে ছন্দা আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দীতে উঠে আসে নানা তথ্য। এ চক্রের সাথে জড়িত চার সাংবাদিক ও এক আইনজীবী শিরোনামে ১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মেহেরপুর প্রতিদিনে প্রধান শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ ঘটনার পর থেকে জবানবন্দীতে আসা ব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। এ কার্যক্রমের সাথে জড়িত নারীরা পলাতক রয়েছেন।