মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে আজও কাঁদছেন বাবা

মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার গৌরিনগর গ্রামের বিল্লাল হোসেন এর বড় মেয়ে অনিতা খাতুন। পারিবারিক রীতি নীতি মেনেই ২০১৪ সালের ২৮আগষ্ট বিয়ে হয় একই উপজেলার দারিয়াপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে কলিমুদ্দিন ওরফে কালু’র সাথে।

বিয়ের সময় কোন দাবি দাওয়া না থাকলেও পরবর্তিতে বিভিন্ন দাবি নিয়ে অনিতার উপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে কালু। নির্যাতনের নতুন মাত্রা যোগ করতে কালু’র সাথে যুক্ত হয় তার মা উনজিলা খাতুন।

অসহ্য যন্ত্রনা সইতে না পেরে মাঝে মধ্যেই অনিতা চলে আসতো তার বাপের বাড়ি। পরে বিভিন্ন ভাবে ফুসলিয়ে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যেতো কালু ও তার পরিবার।
এরই মধ্যে কালু-অনিতার দাম্পত্য জীবনে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান। এর পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে অনিতার উপর অনামানবিক নির্যাতন শুরু করে কালু সহ তার পরিবার।

অভিমান করে অনিতা আবারও তার বাপের বাড়ি চলে আসে। আর ফিরে যাবে না বলে জানিয়ে কালুকে। কিন্তু কয়েকমাস পর ব্রাক অফিসের মাধ্যমে সমোঝতা করে অনিতাকে পুনরায় ফিরে নিয়ে আসে কালু।
এর পরেই ঘটে অঘটন। ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর অনিতাকে হত্যা করে তার লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে কালু সহ তার পরিবারের লোকজন।

কান্না জড়িত কন্ঠে এভাবেই ঘটনার বর্ননা দেন নিহত অনিতার পিতা বিল্লাল হোসেন।
এ ঘটনায় নিম্ন আদালতে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আসামীরা হলেন, কলিমুদ্দিন কালু(৩০), উনজিলা খাতুন(৪৫), আমজাদ হোসেন(৫২), মসলি খাতুন(২৫), সোনিয়া খাতুন(২৬) এবং ওয়াসিম(২৭)।

এ হত্যা মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় মুজিবনগর থানার এসআই আবু হুসাইনকে। অনিতা আত্মহত্যা করেছে মর্মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
কিন্তু জেলা সিভিল সার্জন থেকে ময়না তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে অনিতার মৃত্যু হয়েছে মাথায় আঘাত লেগে। তাই বাদী বিল্লাল হোসেন নিম্ন আদালতে নারাজী দিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের দারস্ত হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক রাফিজুল ইসলাম পুনরায় তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআই ইন্সপেক্টর মেহেদী হাসানকে। গত ২৭ নভেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে এই মামলার দিন ছিল।

সেখানে তদন্তকারী অফিসার মেহেদী হাসান আত্মহত্যা মর্মে চার্জশিট দাখিল করেন।
পুনরায় বাদী বিল্লাল হোসেন নারাজী দেয়। পরে বিচারক রাফিজুল ইসলাম আগামী জানুয়ারী মাসের ৭ তারিখে এই মামলার তৃতীয় দিন ধার্য করেন।

এ ঘটনায় মুজিবনগর থানার ওসি আব্দুল হাসেম বলেন, জেলা সিভিল সার্জন ময়না তদন্তের যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটাও সঠিক, আমরা যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছিলাম সেটাও সঠিক। আমরা অতি সুক্ষ তদন্ত করে যা পেয়েছি সেটা হলো, অনিতা গলাই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে সময় তার মৃত্যু হয়নি।

আশে পাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে যে গাড়িতে করে তাকে নেওয়া হচ্ছিলো সে গাড়িটি দুর্ঘনায় পড়ে। এতে অনিতার মাথায় আঘাত লাগে। মূলত এ কারনেই তার মৃত্যু হয়।

-মর্তুজা ফারুক রুপক