যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন

দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার বাদ জোহর রাজধানীর কুড়িলে যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজার আগে বাবার রুহের মাগফিরাত কামনা করে সবার কাছে দোয়া চান ছেলে যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম ইসলাম। তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় দেশের জন্য তার বাবার অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি বাবার বিদেহী আত্মার শান্তি ও বেহেশত কামনায় সবার কাছে দোয়া চান।

পরে জানাজা শুরু হয় বেলা ১টা ৪২ মিনিটে। শেষ হয় ১টা ৪৫ মিনিটে। জানাজায় ইমামতি করেন যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি ইয়াকুব শরীফ।

জানাজায় মন্ত্রিসভার সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই কঠিন সময়েও তার জানাজায় বহু মানুষের সমাগম ঘটে।

এর আগে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে নুরুল ইসলামের গোসল সম্পন্ন করা হয়। জানাজার পর এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গার্ড অব অনার দেয়া হয়।

এর পর বনানী কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার লাশ দাফন করা হবে।

সোমবার বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

গত ১৪ জুন নুরুল ইসলাম অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের আইসিইউ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুব নুরের নেতৃত্বে ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।

এর বাইরে চীনের তিনটি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন।

১৯৪৬ সালে নবাবগঞ্জের চুড়াইন ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম। তার বাবার নাম আমজাদ হোসেন। মায়ের নাম জমিলা খাতুন।

তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার তিন মেয়ে- সোনিয়া ইসলাম, মনিকা ইসলাম ও রোজালিন ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।

২৫ বছর বয়সে নুরুল ইসলাম দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া নুরুল ইসলাম যুদ্ধের পর দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির দিকে মন দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। একজন সাহসী ও সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলেন বহু শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

১৯৭৪ সালে তিনি যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৪১টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনেরও প্রতিষ্ঠাতা।

সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন শিল্প খাতের এই সফল ‘আইকন’।

এই মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন মন্ত্রী, রাজনৈতিক দলের নেতা, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ব্যাংকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এ ছাড়া তার মৃত্যুতে যুগান্তর পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প খাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় অসময় চলে গেলেন তিনি। সূত্র-যুগান্তর

মেপ্র/আরজেএম