শ্রমিকদের আন্দোলনে অসহনীয় দুর্ভোগে যাত্রীরা

নতুন সড়ক আইন ২০১৮ এর সংশোধনের দাবিতে মেহেরপুর সহ ১৮টি জেলা বাস চলাচল বন্ধ করেছে শ্রমিক ইউনিয়ন।

গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল থেকে চালু হয়েছে নতুন সড়ক আইন ২০১৮ এর প্রয়োগ সে কারনেই বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রমিক নেতারা।

এর আগে সড়ক আইন বাতিলের দাবিতে গত শ্রক্রবার মেহেরপুরের লোকাল বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল শ্রমিকরা। পরবর্তিতে শনিবার জেলা পুলিশের হস্তক্ষেপে পুনরায় চালু হয় বাস সার্ভিস। কিন্তু আইন কার্যকর হওয়ার খবরে আবারও গতকাল সোমবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে বাস চলাচল।

এ দিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রিরা। চলাচলে বিভিন্ন হয়রানি সহ গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। সেই সাথে ব্যবহার হচ্ছে যাত্রি বহনে অবৈধ যানবহন। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্তে¡ও প্রয়োজনের তাগিদে যেতে হচ্ছে যাত্রিদের।

বাস চলাচল বন্ধ হওয়াতে কপাল ফিরেছে অটো চালকদের। যাত্রি বহনে সব চেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে এই অটো। সে হিসেবে যাত্রিদের কাছ থেকে অরিক্তি টাকা আদায় করছে চালকরা। মেহেরপুরে অটো চালানোর নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস বন্ধ থাকায় সে নিয়ম চাপা পড়ে গেছে। পর্যাপ্ত পয়সা দিলেই যাওয়া যাচ্ছে বহুদুর।

মুজিবনগর থেকে আসা মইন উদ্দিন, যাবেন গাংনী কিন্তু বাহন হিসেবে ব্যবহার করছেন অটো। তিনি যানান কাজের প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে। বাস বন্ধ , কি করবো? কষ্ট হলেও উপায় নেই সেই সাথে ভাড়াও বেশি দিতে হচ্ছে।

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের কয়েক জন ছাত্রী জানান, আমাদের পরীক্ষা ১-৫ পর্যন্ত। বাস চলাচল বন্ধ সে হিসেবে সঠিক সময়ে আমরা পরীক্ষার হলে পৌঁছাতে পারছিনা আবার বাড়িতেও যেতে পারছিনা।

বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে মেহেরপুর জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, নতুন সড়ক আইন শ্রমিকদের জন্য আতঙ্কের বিষয়। এ জন্য মেহেরপুর সহ ১৮ টি জেলার শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কবে নাগাদ চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের দাবির বিষয়টি ভাববেন। সেই সাথে আমাদের যে দাবী সেটা মেনে নিয়ে সড়ক আইন সিথিল করবে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদে যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা সকাল থেকে স্বেচ্ছায় বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।
এতে সকাল থেকে অসংখ্য যাত্রী টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড ও কাউন্টার গুলোতে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে ফিরে যাচ্ছেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বাস-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম বলেন, শ্রমিকরা কাউকে ইচ্ছা করে হত্যা করে না। অনিচ্ছাকৃত দুর্ঘটনার জন্য নতুন সড়ক আইনে তাদের ঘাতক বলা হচ্ছে। নতুন আইনের অনেক ধারার ব্যাপারে শ্রমিকদের আপত্তি রয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে সংশোধন করতে হবে।

তিনি আরও জানান, সরকার সমাধানের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছে। সড়কে মোটরসাইকেল চলাচলের সংখ্যাও কমে গেছে।
এছাড়া প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ইজিবাইক, নসিমন-করিমন ছাড়াও ছোট যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়াতে সোমবার সকাল থেকে সকল রুটের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। নতুন সড়ক আইন ২০১৮ সংশোধনের দাবিতে সকল রুটের বাস সার্ভিস বন্ধ রেখেছে শ্রমিক ইউনিয়ন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুবুল হক বলেন, বর্তমানে নতুন আইন তৈরি হয়েছে, এতে ড্রাইভাররা গাড়ি চালাতে চাচ্ছেন না। তিনি আরও বলেন, যেসব চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ পাঁচ লাখ টাকার ব্যবস্থা আছে কেবল তারাই গাড়ি চালাচ্ছেন। নতুন আইনে প্রতিবাদে শ্রমিকরা সকাল থেকে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর, কুষ্টিয়া- ভেড়াামারা ও কুষ্টিয়া-খুলনা সহ সকল আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য চালকরা ধর্মঘট পালন করছেন। তবে এতে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।

-প্রতিদিন ডেস্ক