সপ্তাহের ব্যবধানে সব্জীর দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫ টাকা

এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব্জী ভান্ডারখ্যাত মেহেরপুরের বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের সব্জীর। পাইকারি বাজার দর কেজি প্রতি সব্জীতে দাম বেড়েছে প্রায় ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। আর ভোক্তা পর্যায়ে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।

তবে, মাত্র ১ দিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১৫ থেকে ১৭ টাকা। মেহেরপুরের সব্জীর বড় পাইকারি মোকাম মেহেরপুর ও গাংনীর সব্জীর বাজার ও গাংনী খুচরা বাজারে ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।

মেহেরপুর সব্জীর বাজারে চাষী পর্যায় থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে মঙ্গলবার জেলার খুচরা বাজারগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। ফলে নাভিশ্বাস বেড়েছে সাধারণ ক্রেতাদের।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মেহেরপুর কৃষক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাইকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচ, শসা, বেগুন, করলা ও পটোলের।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মেহেরপুর কাঁচা মালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, করলা কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঝিঙা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাউ পিচ প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা, পটোল ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁপে ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাল শাঁক ২০ থেকে ২৫ টাকা, পুঁই শাক ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, ফুল কপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বাঁধা কপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বরবটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, কচুমুখি ৩৫ টাকা ও কাঁকরোল ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি করলা ৩০ টাকা, শসা ২০ টাকা, বেগুন ৩০, পটোল ২০, কাঁচা মরিচ ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
বেশি দামে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে পেরে খুশি সদর উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের শাহানুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন গতকাল ১৫ কেজি মরিচ বিক্রি করেছি ৩৫ টাকা কেজি দরে। আজকে বিক্রি করলাম ৫২ টাকা কেজি দরে।

রায়পুরে গ্রামের কৃষক সমসের আলী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে খেত থেকে শসা তুলে বিক্রি করেছি ৩০ টেকা কেজি, আজ বিক্রি করলাম ৪০ টেকা কেজি।

সিরাজগঞ্জের আড়ত ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রতিদিন মেহেরপুর কাঁচা মালের আড়ত থেকে বিভিন্ন সব্জী কিনে আমার এলাকায় ট্রাক ভর্তি করে পাঠাচ্ছি। আমার এলাকার তুলনায় এখান থেকে সব্জী কম দামে পেয়ে থাকি। তাই এখান থেকে সব্জী কিনে আমি ঢাকা কারওয়ান বাজার ও চিটাগাঙে পাঠিয়ে থাকি। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বিভিন্ন সব্জী ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে বেড়েছে।

একই কথা জানালেন ঢাকার কারওয়ান বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম।
তারা বলেন, মেহেরপুরের সব্জীর মান ভাল। তাই এখানকার সব্জী আমাদের এলাকার মানুষের কাছে চাহিদাও রয়েছে। নজরুল আরো বলেন, দেশের অন্যান্য জেলাতে সব্জী সেই ভাবে উৎপাদন হয়নি এবছর। তাই ঢাকার আড়তদাররাও এখন মেহেরপুর জেলা থেকে সব্জী কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

মেহেরপুর কাঁচা বাজারের আড়ত ব্যবসায়ী আরাফাত ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী আবু ইমাম বলেন, বাইরের ব্যবসায়ীদের চাপের কারণে মেহেরপুরে সব্জীর দাম বেড়েছে। বন্যাসহ নানা কারণে, অন্য জেলায় এবছর সব্জীর আবাদ কম হয়েছে। তিনি বলেন, মেহেরপুর এবং যশোর বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সব্জী চাষ হয়। এছাড়া অন্যান্য জেলাতে সব্জী নষ্ট হওয়ার কারণে মেহেরপুরের সব্জীর উপর চাপ বেশী হচ্ছে।

বাদশা বাণিজ্যলায়ের স্বত্ত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, জেলার সব্জী জেলার মানুষের জন্য বিক্রি করা গেলে দাম হাতের নাগালে থাকতো। বাইরে চলে যাওয়ায় বিভিন্ন সব্জীর দাম বেড়েছে।

এদিকে পাইকারি আড়তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একবার হাতবদলের পর সবজির দাম বেড়েছে খুচরা বাজারেও।

মঙ্গলবার গাংনী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সব ধরনের সবজির দাম কেজিতে গড়ে ২০ টাকা বেড়েছে। গাংনী খুচরা বাজারে মঙ্গলবার প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, বেগুন ৬০, পটল ৪০, করলা ৬০, ঢ্যাঁড়স ২৫, চিচিঙ্গা ৩০, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা, মুলা ৩৫, কাঁকরোল ৪৫, লাউ ২৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, কচুমুখি ৬০, শসা ৩৫, মিষ্টিকুমড়া ৩৫, এবং চাল কুমড়া প্রতি পিচ ৩০ টাকা, পেয়াজ ৪০ টাকা কেজি, আলু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে সব ধরনের শাকেরও। এক সপ্তাহ আগে ৩০ টাকা কেজি দরের লালশাক একলাফে ৩ আটি (আধা কেজি) ২৫ টাকা, সেমতে কেজি প্রতি ৫০ টাকা , ২০ টাকা কেজি দরের লাউশাক ও কলমি শাক ৩৫ টাকা, ২০ টাকা কেজি দরের পুঁইশাক ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

গাংনী বাজারের ক্রেতা আরজ আলী, এসএম সেলিম বলেন, গত সপ্তাহেও সব্জীর দাম কিছুটা সহনশীল ছিল। আজকে মনে হচ্ছে সব্জীর বাজার আগুন। সব সব্জীর দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

গাংনী বাজারের আরেক ক্রেতা সুফিয়া আক্তার ও সামসুন্নাহার বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে সব্জী থাকলেও দাম নাগালের বাইরে। যে টাকা নিয়ে বাজারে এসেছিলাম, সেই টাকায় কিছুই হয়নি। তাই সব্জী বাজার অল্প অল্প করতে হয়েছে।

মেহেরপুর তহবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু হানিফ বলেন, মেহেরপুরে কাঁচামালের কোনো ঘাটতি নেই। জেলায় পর্যাপ্ত পরিমান কাঁচা মালের উৎপাদন হয়েছে। বন্যার কারণে, দেশের অন্যান্য জেলাতে পর্যাপ্ত সব্জী বা কাঁচা মালা উৎপাদন হয়নি এবার। ঢাকা, চিটাগাং, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়ত ব্যবসায়ীরা আগের দিন মেহেরপুরে এসে বিভিন্ন হোটেলে থাকছেন। সকালে চাষীরা কাঁচামাল নিয়ে আসার সাথে সাথে তারা উচ্চমূল্যে মাল কিনে নিয়ে চলে যাচ্ছেন। এজন্য মেহেরপুরের কাঁচা মাল মেহেরপুরের মানুষ পাচ্ছেনা।