সেতু এনজিওর সহযোগীতায় ড্রাগন চাষ করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মিরপুরের আসাদ

ড্রাগন চাষে লাখপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের মো. আসাদ আলী। অন্য ফসলে লোকসানের পর নিজের প্রায় দেড় বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। ড্রাগন চাষ লাভজনক হাওয়ায় তাকে দেখে অন্য চাষিরাও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাত থেকে আট ফুট দূরত্বে কংক্রিটের তৈরি পিলারের চারপাশে ড্রাগন গাছ রোপণ করা হয়েছে। কংক্রিটের এসব পিলারের ওপরে লোহার রডের সঙ্গে সাইকেলের পুরনো টায়ার দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক গাছে পাকা গোলাপী রয়ের ফলে পুরো বাগানজুড়ে। উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের ড্রাগন চাষি মো. আসাদ আলী বলেন, ‘আমার এই জমিতে প্রায় ৩০ বছর পানের বরজ ছিল। বরজটি ভাইরাসের কারণে মারা যায়। ফলে আমি বেকার হয়ে পড়ি।

সেতু এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম,এ, কাদের এর সার্বিক সহয়োগীতায় এবং ঝিনাইদহের এক বন্ধু পরামর্শে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেন। এরপর ঝিনাইদহের গিয়ে ড্রাগন বাগানে বেশ কয়েকবার গিয়ে ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারি। পরবর্তীতে প্রায় দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ড্রাগনের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার জন্য যখন ওই বাগানে যাই, তখন বাগানের পরিচর্যকারীরা আমাকে জানায় যে- ড্রাগনের ফল আসতে প্রায় দুই বছর সময় লাগে। তখন আমি একটু হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তু আমি নিজে যখন চাষ শুরু করেছি, তখন ধারণাটি বদলে যায়। আমি দেড় বছরের মাথায় আমার বাগানে ফুল-ফল আসতে শুরু করে। ইতোমধ্যে আমি সাড়ে তিনশ টাকা কেজি দরে দুইশ কেজি ফল বাজারে বিক্রি করেছি।

তবে এই লকডাউনের কারনে একটু হতাশ হচ্ছি বিক্রি করা নিয়ে। ফলের পাশাপাশি ড্রাগনের চারা বিক্রি করেও আমার বাড়তি আয় হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ড্রাগন চাষের ব্যয় সম্পর্কে আসাদ বলেন, ‘আমার দেড় বিঘা জমিতে ২২৫টি পিলার রয়েছে। এসব পিলার বগুড়া থেকে সংগ্রহ করেছি। প্রতিটি পিলারের খরচ পড়েছে ২৫০ টাকা। এছাড়াও গাড়ি ভাড়ায় ৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার জমিতে প্রায় এক হাজার চারা রয়েছে। পিলার, সেঁচ, সার ও চারা সব মিলিয়ে দেড় বিঘা জমিতে আমার প্রায় চার লাখ টাকা খরচ হয়েছে।’ এই দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল বিক্রি করে বছরে আমার ৬ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছি। ড্রাগন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, ‘প্রথমে জমি চাষ করে নিতে হবে। চারা রোপণের কয়েকদিন পূর্বে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে জৈব সার দিয়ে দিতে হবে। এরপর হাফ ইঞ্চি কম মাটিতে চারা রোপণ করতে হবে। একটি পিলারে চারটা ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করা যায়। এছাড়াও এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব হতে হবে সাত ফিট।’ তিনি আরও জানান, ড্রাগন ফল চাষ করতে জৈব সার বেশি প্রয়োজন হয়। কৃষি বিভাগ তাকে সেচ যন্ত্রের সুবিধাসহ ভার্মি কম্পোস্ট করতে সহায়তা করেছি। এছাড়াও প্রতিনিয়ত তার বাগানে গিয়ে পরামর্শ প্রদান করা হয়।

‘সেতু এনজিওর নির্বাহী পরিচালক এম,এ, কাদের জানান, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। এবং এটি অনেক লাভজনক। আমাদের এনজিওর মাধ্যমে মিরপুর উপজেলার হাজরাহাটি গ্রামের কৃষক আসাদ আলীকে পরীক্ষামূলকভাবে দেড় বিঘা জমিতে ড্রাগনের চাষ করতে উৎসাহিত করেছি। প্রায় দেড় বছর পর এখন বাগানজুড়ে ড্রাগন ফল এসেছে। আসাদ এখন সফলতা পেতে শুরু করেছেন। আসাদের ড্রাগন ফলের চাষে সহায়তা জন্য তাকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উপকরণ ও সহযোগীতা অব্যাহত রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ মকবুল হোসেন লাবলু বলেন, ড্রাগন ফল অত্যান্ত পুষ্টিকর একটি ফল। এ ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে প্রতিনিয়ত এটা খেলে শরীরের জন্য বেশ উপকার।

কুষ্টিয়া জেলা তাতী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন ও সাধারন সম্পাদক হারুন অর রশীদ জানান, ড্রাগন ফল বিদেশি ফল হলেও ড্রাগন ফলের সতেজ করা স্বাদ ও পুষ্টিগুণের জন্য বাংলাদেশেও এখন এই ফল চাষ হচ্ছে। তবে কুষ্টিয়ায় এর চাষ হচ্ছে জেনে আমরা বাগান থেকে সংগ্রহ করেছি। বেশ সুস্বাদু থাকায় খেয়েও অনেক মজা। অনলাইনে সিজিনাল ফল বিক্রি করেন কৃষকের বন্ধু এস এম জামাল। তিনি বলেন, আসাদ ভাইয়ের বাগান থেকে ড্রাগন নিয়ে জেলার শহর ছাড়াও ঢাকায় অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতাম। কিন্তু দেশের যে পরিস্থিতি সেজন্য এ ফল বিক্রি করতে এখন অনেকটা বেগ পেতে হচ্ছে। তবুও বর্তমানে ফোনে অর্ডার নিচ্ছি এরপর কুরিয়ারের মাধ্যমে ফল ডেলিভারি দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতি কেজি দরে ড্রাগন ফল ৩০০ টাকায় কিনে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।