স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে  কি মেহেরপুর ?

মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা গুলো স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারীরা, মাঝে মাঝে বহনকারীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও গডফাদাররা পর্দার আড়ালে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে চোরাকারবারী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলার কাজীপুর, তেতুলবাড়িয়া, বুড়িপোতা, আনন্দবাস সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণ চালান করে থাকে চোরাকারবারীরা। ইতিমধ্যে বিজিবি’র হাতে বেশ কয়েক দফা স্বর্ণের বার ধরা পড়লেও অধরা থেকে যায় মুল হোতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেতুলবাড়ীয়া গ্রামের একজন জানান, সীমান্ত থেকে প্রথমে তেতুলবাড়ীয়া সহ নিরাপদ কয়েকটি রুটে প্রথমে নেওয়া হয়। তারপর এ গুলো গাংনী হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাচারকরা হয়।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কলোনিপাড়ার আক্কেল আলীর ছেলে আবু তাহের স্বর্ণ পাচার করার সময় ঢাকার দারুস-সালাম পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সাথে থাকা একই গ্রামের তাহেরের মামা আব্দুর রউফ এর ছেলে আব্দুল আওয়াল নামের আরেক পাচারকারী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ঢাকার দারুস-সালাম থানায় তাহের ও আওয়াল এর নামে একটি স্বর্ণ পাচারকারী নামে মামলা দায়ের করা হয়, যার নাম্বার ১৬/ ২০১৯। বর্তমানে তাহের ঢাকার

অন্ধকার জেলে বন্দি থাকলেও পালিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়াল।
মেহেরপুরের গাংনী থানায় আওয়ালকে আটক করার জন্য চিঠি দিলেও অজ্ঞাত কারনে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি পুলিশ।

গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

ঢাকা দারুস-সালাম থানার ওসি আসলাম বলেন, আমার স্বর্ণ পাচার করার সময় মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের আবু তাহের নামের একজনকে আটক করি। এসময় আওয়াল নামের আরও একজন আসামী পালিয়ে যায়।

আওয়ালকে আটক করার জন্য গাংনী থানায় চিঠি পাঠানো হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে গাংনী থানা ব্যবস্থা না গ্রহন করে আমরা আমাদের মত করে আসামী ধরে আনার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের কলনিপাড়ার আবু তাহেরের পিতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছেলে মাঠে কাজ করে খাই সে স্বর্ণ চালানের বিষয়ে কিছুই জানেনা। মাঝে মাঝে তার মামা আওয়াল তাকে কিছু টাকা দেবে বলে ঢাকায় নিয়ে যেতো।

তিনি আরও বলেন, আওয়াল ও তাহের এরা শুধু মাত্র টাকার বিনিময়ে বহন করে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেয়।
এছাড়াও তিনি বলেন, এই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে কেই ক্ষমতাবান নেতা বা টাকাওয়ালা ব্যবসায়ী।

আওয়ালের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাংবাদিকের সাথে দেখা করবে না বলে জানায় তার স্ত্রী। আওয়ালের ফোন নাম্বার চাওয়া হলে তার স্ত্রী একটি ভুল নাম্বার দেন।

পরবর্তিতে আওয়ালের চাচাতো ভাই সহিবুল ইসলাম এর মাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করা হয়। তাতে কাজ না হলে আওয়ালের ভগ্নিপতি মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আব্দুল মালেক নিউজ না করার জন্য সাংবাদিকদের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

টাকার প্রস্তাবে রাজি না হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদের পরিচয়ে শ্যামপুর গ্রামের সাইদুর রহমান পেশায় হোমিও চিকিৎসক মেহেরপুর জেলা পরিষদের সামনে সাংবাদিকদের ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করে এবং সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য চাপ দেয়।

এছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হয়। সেই সাথে বলা হয়, এসব নিউজ করে লাভ নেই, এখানে বড় বড় রাঘববোয়ালরা জড়িত। টাকা পয়সা দিয়ে সব ম্যানেজ করা হয়ে যাবে।

গোপন সুত্র থেকে জানা যায়, প্রতি চালানে ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হয় বহনকারীদের। এর ভিতর থেকে কেউ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে পরবর্তিতে অন্য কাউকে দিয়ে বহন করা হয়। এভাবেই চলতে থাকে স্বর্ণ চোরা চালান।

টাকার লোভে অনেকেই এই চোরাকারবারীর সঙ্গে জড়িয়ে পুলিশের হাতে ধরা পরে একুল ওকুল দুই কুলই হারাচ্ছে। কিন্তু মুল হোতারা প্রভাবশালি হওয়ায় ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে।

এ বিষয়ে মেহেরপুর জেলা পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান কোন রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি। এ ধরনের কোন ঘটনা যদি মেহেরপুরে হয়ে থাকে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আওয়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। যদি ঘটনার সত্যতা থাকে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আল আমিন- মর্তুজা ফারুক রুপক