স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাপতি এমএএস ইমন , সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদ

স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার কার্যনির্বাহী পরিষদের ২০২২-২০২৪ নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে প্রত্যেক পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। কমিটিতে এমএএস ইমন সভাপতি এবং মো: সাব্বির আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, আবু নাছের ইকবাল চৌধুরী, সুমি আলম, যুগ্ম সম্পাদক জামাল উদ্দিন খান টিপু, কোষাধাক্ষ শহীদুল ইসলাম, কার্যকরী সদস্য পর্শিয়া সুলতানা, হাফেজ মাওলানাসাগর আহমেদ শাহীন, মোহাম্মদ হানিফ, লিটু মুন্সি, মোহাম্মদ সোহেল আলী, নুরুন নবী, আব্দুল হাকিম নির্বাচিত হয়েছেন। সভাপতি এমএএস ইমন আনিশা গ্রুপের চেয়ারম্যান, রাজধানী টিভির চেয়ারম্যান ও মেহেরপুর প্রতিদিনের প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৩ অক্টোবর সোমবার চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ১৪ পদের বিপরীতে কোনো প্রার্থী না থাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী বজলুর রশীদ ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আশরাফ আলী শেখ প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
এর আগে চলতি বছরের ৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করেন। আগামী ১০ই অক্টোবর ২০২২ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন ধার্য ছিলো।
উচ্চ আদালতের রিট পিটিশনং ১৯৪০/২০১৩, আপিল বিভাগের সিপি ১৩৩/২০১৭, সিআরপি ৩২/২০১৯ এর আদেশ মোতাবেক এতিমখানার প্রশাসক ও সমাজসেবা অধিদফতর এর পরিচালক উপসচিব মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী নির্বাচন অনুষ্ঠানে এতিমখানার গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য গত ২০০৪ সনে সলিমুল্লাহ এতিমখানার ২ বিঘা জমি তৎকালীন কমিটি এতিমদের স্বার্থ খর্ব করে ডেভলপার কোম্পানিকে প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এতিমখানার চারজন ছাত্র বাদী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে উচ্চ আদালত ১৮ তলা ভবনসহ জমি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে অতিদ্রুত এতিমখানার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

এর আগে গত ৯ জুন ২০২২ রাজধানীর আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের তৈরি ১৮ তলা বিল্ডিং এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্তের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ কনকর্ডের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন।
আদালতে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
এতিমখানার আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামান এবং ব্যারিস্টার আকতার ইমাম। কনকর্ডের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ।
পরে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, রিভিউ খারিজের ফলে আগের রায় বহাল রয়েছে। ১৯০৯ সালে ঢাকার নবাব ‘সলিমুল্লাহ এতিমখানা’ স্থাপন করে এবং পরবর্তী সরকারের নিকট হতে আজিমপুর সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন সময় জমি লিজ নিয়ে পরিচালনা করে আসছে। গত ২০০৩ সালের ২২ জুলাই এতিমখানার সভাপতি শামসুন্নাহার ও সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জি এ খান আহসান উল্লাহ এতিমখানার ২ বিঘা জমি ডেভলাপার কোম্পানি কনকর্ডের কাছে হস্তান্তর করেন।
এতিমখানার সম্পত্তি অবৈধ হস্তান্তর সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পায়। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর তা সংযুক্ত করে চারজন ছাত্রের পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করেন মনজিল মোরসেদ। পরবর্তীতে ওই রিট পিটিশনে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) পক্ষভুক্ত হয়।
রিট আবেদনে বলা হয়, এতিমখানার সম্পত্তি সরকারে নিকট থেকে লিজ নেওয়া এবং লিজ চুক্তিতে এতিম খানার সম্প্রসারণের জন্য বিনামূল্যে দেয়া হয় এবং শর্ত ছিল প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোনো কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। তা স্বত্বেও এতিমখানার সভাপতি ও সেক্রেটারি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হয়ে এতিমখানার সম্পত্তি কনকর্ড গ্রুপের নিকট হস্তান্তর করেছিল।
২০১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এক রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজিমপুরে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার জায়গায় আবাসন প্রতিষ্ঠান কনকর্ডের তৈরি ১৮ তলা বিল্ডিং এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্ত করে চার দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেন।

আদালত এতিমখানা রক্ষায় চার দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলো হলো- ক. আজিমপুর এতিমখানার সম্পত্তি সংরক্ষণ করতে হবে, খ. এতিমখানার সম্পত্তি হস্তান্তর সম্পর্কে ২০১৩ সালের ২২ জুলাইয়ের দলিল এবং ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিলের আমমোক্তার নামা দলিল বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সেগুলো শুরু থেকেই বাতিল। গ. এতিমখানার জায়গায় কনকর্ডের তৈরি ১৮ তলা বিল্ডিং এতিমখানার পক্ষে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এবং ঘ. কনকর্ডকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে স্থাপনা ও সম্পত্তি এতিমখানাকে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ব্যর্থতায় সরকারকে সম্পত্তি বুঝিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এতিমখানার প্রয়োজনে ডেভেলপ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই রায়ের পর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করে কনকর্ড। যেটি ২০১৮ সালের ১২ মার্চ খারিজ হয়ে যায়। পরে তারা রিভিউ করেন। সেই রিভিউও খারিজ হয়ে যায়।

৩১ আগস্ট ২০২২ তারিখে ঢাকা জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে ১৮ তলা বিল্ডিংটি এতিমখানার কাছে হস্তান্তর করা হয়।