আলমগীর খান ছাতু

“হটাও ওয়ার্কার্স, বাঁচাও বিএনপি”- আলমগীর খান ছাতু

বিএনপি গত কিছুদিন ধরে সারাদেশে সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে সমাবেশ, মিছিল বা বিক্ষোভের মত কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে। সরকারি বিরোধী এই কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে সম্প্রতি দেশের অন্তত বিশটি জেলায় বিএনপির নেতা-কর্মিদের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়াামী লীগ বা পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা দেশের সব সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।

পনেরো বছর ধরে বিএনপি যে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে, এটি বিএনপির জন্য তৈরী হয়েছে বড় সঙ্কট। এই সংকটের কথা দলের তৃণমুলের কর্মী সমর্থক থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন। তবে তৃণমুলের নেতা কর্মীদের এখন একটাই বার্তা, কেন্দ্রীয়ভাবে যে কর্মসূচি দিচ্ছে, সেগুলোতে আমাদের সংঘবদ্ধভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠের অবস্থান শক্ত করা” অথচ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির এখন বিভক্তির রাজনীতি নিয়ে নেতাদের মধ্যে কাঁদা ছুঁড়োছুড়ি লক্ষ করা যাচ্ছে।

মেহেরপুর প্রতিদিন পত্রিকার স্পেশাল আয়োজন জনগুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেও সাক্ষাৎকার। “মেহেরপুর জেলা বিএনপির বিভক্তির রাজনীতি ও নেতাদের ভাবনা” আজকের বিশেষ আয়োজনে বিশেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সহ সভাপতি বর্ষিয়ান নেতা আলমগীর খান ছাতু। স্বাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মেহেরপুর প্রতিদিনের বার্তা সম্পাদক জুলফিকার আলী কানন

মেহেরপুর প্রতিদিন : কেমন আছেন ?
আলমগীর খান ছাতু : আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি

মেহেরপুর প্রতিদিন : রাজনীতিতে কবে এসেছেন ?
আলমগীর খান ছাতু : আমি ১৯৯৬ সালে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হই। মুলত, আমি ৮০ দশক থেকে রাজনীতিতে আসি। প্রথমে জাতীয় পার্টির মেহেরপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে আমি সক্রিয়ভাবে জড়িত হয়ে পড়ি। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়েই বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলাম।

মেহেরপুর প্রতিদিন : মেহেরপুরের বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস সমন্ধে কিছু বলেন :
আলমগীর খান ছাতু : মেহেরপুরে বিএনপির রাজনীতির একটি সোনালী অতীত রয়েছে। জেলায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ আলী দলটিকে একটি উচ্চ মাত্রায় নিয়ে গেছেন। এই জেলা বিএনপির একটি শক্তিশালী ঘাটি রয়েছে। জেলার মানুষ শহীদ জিয়া এবং তার সৃষ্ঠ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপিকে মনে প্রাণে ভাল বাসেন। তাই সব সময় বিএনপিকে নিরুঙ্কুশভাবে বিজয়ী করে আসছেন। এখনো অবাধ নিরপেক্ষ ভোট হলে জেলাবাসি বিএনপির প্রার্থীকে বিপুল ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে।

মেহেরপুর প্রতিদিন : ক্ষমতার বাইরে থেকেও আপনারা বিভক্তির রাজনীতি করছেন, এটা দলের মধ্যে ইফেক্ট পড়ছে কিনা ?
আলমগীর খান ছাতু : মুলত, ওয়ার্কার্স পার্টির দলে নেতৃত্বের প্রাধান্যের কারনে মেহেরপুর জেলা বিএনপিতে বিভক্তি শুরু হয়েছে। বিএনপির মুল ধারার নেতা কর্মীদের বাদ দিয়ে ওয়ার্কার্স থেকে আসা নেতা কর্মীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রথম থেকেই মুল ধারার বিএনপি কর্মীদের মধ্যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। “হটাও ওয়ার্কাসর্, বাঁচাও বিএনপি” শ্লোগান দিয়ে তখন বিএনপির অভ্যন্তরে আন্দোলন শুরু হয়। ওয়ান ইলেভেনের সময় জেলা বিএনপির তৎকালিন নেতৃত্ব দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার কারণেও মুল ধারার বিএনপি নেতা কর্মী ও ওয়ার্কার্স থেকে আসা নেতা কর্মীদের মধ্যে বিভক্ত তৈরী হয়েছে। এখন পর্যন্ত সেই বিভক্তি প্রকট আকারই রয়ে গেছে। দলের মুল নেতৃত্ব আলাদা অফিস নিয়ে এখনো রাজনীতির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, মেহেরপুর জেলা, উপজেলাগুলো, পৌর এবং ইউনিয়ন কমিটি গুলো দীর্ঘদিন যাবৎ পুর্নগঠণ না হওয়ায় মুল ধারার বিএনপি’র অনেক নেতা কর্মীই এখন নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন।
এছাড়া জেলা বিএনপির যে কমিটি হয়েছে সেটা এখন পর্যন্ত পরিচিতি মিটিং পর্যন্ত করতে পারেনি। এমনকি নির্বাহী কমিটির কোনো মিটিং এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। যেটা কেন্দ্রীয় কমিটি অবগত আছেন।

মেহেরপুর প্রতিদিন : আন্দোলন সগ্রামে দলের মধ্যে আপনার ভূমিকা কতটুকু আছে ?
আলমগীর খান ছাতু : ওয়ান ইলেভেনের পর দলের নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে বিএনপির নেতা কর্মীদের সুসংগঠিত করে অদ্যবধি মাঠের রাজনীতি করছি। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকা সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখে চলছি।

মেহেরপুর প্রতিদিন : মেহেরপুরে ঘরোয়া মিটিং ও বৈঠক ছাড়া রাজপথের কোনো আন্দোলন সংগ্রামে আপনাদের দেখা যায়না কেনো ?
আলমগীর খান ছাতু : প্রশাসন প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়ানোর কারণেই বিএনপির সকল আন্দোলন সংগ্রাম ঘরে করতে বাধ্য হয়েছে। এছাড়া দলের একটা গোষ্ঠী আওয়ামীলীগের সাথে ব্যালেন্স রাজনীতি করার কারণেও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রাম এই জেলাতে গড়ে তোলা সম্বভ হয়নি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু কর্মসূচী বাইরে করা হয়েছে। আগামীতে দলীয় সকল কর্মসূচী রাজপথেই করা হবে।

মেহেরপুর প্রতিদিন : আগামি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি ?
আলমগীর খান ছাতু : নির্বাচন আমাদের মুল লক্ষ না। এখন দলের মুল লক্ষ সরকার পরিবর্তন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকারের দাবী পুরুণ। তত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া।

মেহেরপুর প্রতিদিন : দল আপনাকে মনোনয়ন দিলে বিভক্তি কাটিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে পারবেন বলে মনে হয়?
আলমগীর খান ছাতু : দল যাবে ধানের শীষ দেবে তৃণমুল থেকে জেলা পর্যায়ের সব নেতা কর্মীই তার সাথে কাজ করবে। দলের সব নেতা কর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করার পরিস্থিতি আমার আছে। নিরদলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি সব নেতা কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে নিতে পারবো।

মেহেরপুর প্রতিদিন : রাজনৈতিক ইস্যুতে আপনার নামে মামলা হয়েছে কতটি ?
আলমগীর খান ছাতু : কোনো মামলা হয়নি।

মেহেরপুর প্রতিদিন : বিএনপির নেতৃত্বে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন আপনার ভাবনা কি ?
আলমগীর খান ছাতু : কেন্দ্রীয় কর্মসূচি যেটাই দেবে সেটাই স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মী সফল ভাবে পালন করবে। আমি কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর সাথে একমত।

মেহেরপুর প্রতিদিন : রাজনীতিতে জেলা পর্যায়ের কোন কোন নেতা আপনার সাথে আছে-
আলমগীর খান ছাতু : বিএনপির মুল ধারার রাজনৈতিক সকল নেতা কর্মীই আমার সাথে রাজনীতি করছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় যেসব নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে হটাতে চেয়েছিলেন। তাদেরকে মুল ধারার রাজনীতিকরা মনে প্রাণে অপছন্দ করেন। তারাই আবার কিছু নেংটা ছেলেদের নিয়ে মাঠে ময়দানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের মানুষ ভাল চোখে দেখেনা।

মেহেরপুর প্রতিদিন : জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন কিনা ?
আলমগীর খান ছাতু : আমি ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছিলাম। দলের কাছে মেহেরপুর-১ আসনের দলীয় টিকিট দাবী করি। পরে ২০১৮ সালে বিএনপি মেহেরপুর-১ আসনে দুজনের নাম ঘোষণা করে। সেখানে আমি দলীয় প্রার্থীর তালিকাতে ছিলাম।

মেহেরপুর প্রতিদিনি : আপনাকে ধন্যবাদ
আলমগীর খান ছাতু : আপনাকেও ধন্যবাদ।