৪ লাখ মানুষের জন্য ৪ জন ডাক্তার!

আকতারুজ্জামান গাংনী:
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও চিকিৎসক না থাকায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না গাংনী উপজেলাবাসি। বারবার চিকিৎসক চেয়ে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে চিঠি পাঠানো হলেও সে দাবী অপূর্ন থেকে গেছে। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানা গেছে, কমপ্লেক্সটি ২০০৮ সালে ৩১ শষ্যা থেকে ৫০ শষ্যায় উন্নিত করা হয়।

২০১৮ সালে শুধু মাত্র রোগীদের খাবার সুবিধা ছাড়া আর কোন সুবিধা মেলেনি ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। ৩০ জন মেডিকেল অফিসারের বিপরীতে রয়েছে ৬ জন। এদের মধ্যে একজন মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে রয়েছেন ডেপুটিশনে । আর একজন মেডিকেল অফিসার মাতৃত্বকালীন ছুটিতে।

এ উপজেলার প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের মাত্র ৪ জন ডাক্তার চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই। প্রতিদিনই এ হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসা নেন- ২৫০ থেকে ৩০০শ জন নতুন, এছাড়াও ৫০ থেকে ৭০ জন পুরাতন রোগী চিকিৎসাধীন আছে। এর বেশির ভাগই নারী ও শিশু । উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবাটি কোন মতে (৪/৫ জন স্যাকমো দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

গাংনী উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিকে ও উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ২ টি পদে স্যাকমোদের নিয়োগ দেয়া আছে। এর মধ্যে গাংনীতে কর্মরত স্যাকমো তানভির ও বিলকিচ আরা। পরে মটমুড়া ইউনিয়নের মহম্মদপুর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে স্যাকমো কামনরুন্নাহার,কাথুলী ইউনিয়ন থেকে শামীমা নাসরিন, এবং সাহারবাটি থেকে ওয়াহিদুজ্জামানকে। ফলে সাবসেন্টার গুলো চিকিৎসক শুন্য হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা পাচ্ছেনা ইউনিয়নের সাবসেন্টারের আশপাশের সেবা প্রত্যাশীরা। বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসতে হচ্ছে গাংনী স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে।

গাংনী উপজেলায় সাব সেন্টার রয়েছে ৩ টি। সেখানে একটি করে এমবিবিএস চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও তা নেই। দির্ঘদিন থেকেই সাব সেন্টারগুলোতে মেডিকেল অফিসার পদ শুন্য। এছাড়াও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ১০ টি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ শুন্য রয়েছে বছরের পর বছর। জানাগেছে, গাইনী,এনেস্থেসিয়া, সার্জারী(অর্থ), মেডিসিন, শিশু, চক্ষু, অর্থপেডিক্স, কার্ডিওগ্রাফি, নাক কান গলা(ইএনটি), চর্মও যৌন। এসকল ১০ টি পদের একটিতেও নেই চিকিৎসক।

ফলে এ উপজেলার জনসাধারন মানুষ পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। অপারেশন থিয়েটারসহ সিজারের সকল ব্যাবস্থা থাকলেও গর্ভবতী মায়েদের ডেলিভারী সিজার করা হয় না। ফলে ডেলিভারী সিজার করতে হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে। একটি গর্ভবতী মা’কে সিজার করতে হলে গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

শিশুদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে স্যাকমো দিয়ে। ফলে অনেক শিশুই ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। স্যাকমো দিয়ে শিশুদের চিকিৎসা করাতে হলেও অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত কয়েকশো রোগী দেখেন একজন স্যাকমো। সেখানেও নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের।

কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান,জরুরী বিভাবে জরুরী রোগীদের সেবা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয় ফলে অত্যান্ত জরুরী রোগীরা সেবা পায়না । ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্নক জখম হয়ে জরুরী বিভাগে অপেক্ষামান স্কুল ছাত্র ফয়সাল জানায়, আধাঘন্টা ধরে জরুরী বিভাগে বসে আছি।

হাত-পা কেটে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে তবুও চিকিৎসা পাইনি। অবশেষে ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। জরুরী বিভাবে কর্মরত স্যাকমো সর্দি-কাশির চিকিৎসা নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন। আমাদের দিকে তাকিয়েও দেখেননি। আউট ডোরে একজন করে মেডিকেল অফিসার ডিউটিতে থাকার কথা থাকলেও তিনি থাকেন ২য় তলায়।

ডাক্তার ডেকে আনতে হয় মোবাইল করে। খাতা কলমে মেডিকেল অফিসার আউটডোরে ডিউটিতে থাকলেও ডাক্তার খুজে পাইনা রোগীরা। অনেক রোগীকে নিরাশ হয়ে চলে যেতে হয় প্রাইভেট ডাক্তারের কাছে। এব্যাপারে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্মা ডাঃ মাহাবুবুর রহমান জানান, এখানে চিকিৎসক সংকট দির্ঘদিনের।

দু’একজন ডাক্তার এখানে আসলেও মেহেরপুরসহ বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে চলে যান ডেপুটিশনে। বার বার আমি ডাক্তার চেয়েছি কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছিনা। তবে চলতি বছরে কয়েকজন ডাক্তার পাবো বলে আশায় বুক বেধে আছি।