অচিরেই নিয়োগ হতে পারে ইবি ট্রেজারার

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ট্রেজারার অচিরেই নিয়োগ হতে পারে। প্রায় তিন মাস ধরে পদটি শুন্য আছে। এ পদটি পেতে দৌড়ঝাপসহ জোর তদবির শুরু করেছেন ইবির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে ইবির জ্যেষ্ঠ তিন শিক্ষক প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়া, প্রফেসর আব্দুল মুঈদ এবং প্রফেসর ড. কাজী আক্তার হোসেনের নাম প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আর এ কারণে তিন শিক্ষককে নিয়ে ক্যাম্পাসে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। চলছে বিভিন্ন সমীকরণ, কে হতে পারেন ইবির নতুন ট্রেজারার। তবে সমীকরণ যাই হোক না কেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করেন দুর্নীতিমুক্ত, সৎ ও ক্লিন ইমেজের কোন শিক্ষককে পাবেন তারা ট্রেজারার হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ আগস্ট ভিসির এবং ২২ আগস্ট ট্রেজারারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত ৩০ অক্টোবর ১৩তম ভিসি হিসেবে প্রফেসর ড. শেখ আব্দুস সালাম যোগদান করলেও এখন পর্যন্ত ট্রেজারার পদটি শুন্য রয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এ কারণে অতিদ্রুত ট্রেজারার নিয়োগ প্রয়োজন।

এদিকে বর্তমানে আলোচনায় থাকা তিন শিক্ষক সম্পর্কে খোঁজ নিতে বেরিয়ে আসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের প্রফেসর ড. কাজী আক্তার হোসেন সম্পর্কে জানা যায়, তিনি বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি তবে চলতি বছরের ১৫ ডিসেম্বর তার মেয়াদ শেষ হবে। এছাড়া তিনি প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম এবং বিতর্কিত ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সদস্য। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সরকার কর্তৃক ২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বেসিক ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হয়। সেই পর্ষদে বেসরকারি খাত থেকে পরিচালক হন প্রফেসর ড. কাজী আক্তার হোসেন।

বেসিক ব্যাংকের আর্থিক কেলেঙ্কারি অর্থাৎ ব্যাংকটি পতনের জন্য যে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়ী তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন প্রফেসর ড. কাজী আক্তার হেসেন। এ ব্যাংকের আর্থিক দুর্নীতি করে তিনি কুষ্টিয়া শহরের ফটিক টাওয়ারে দুইটি ফ্লাট ক্রয়, কুষ্টিয়া শহরের পিয়ারাতলা ও কুমারগাড়ায় জমির প্লট ক্রয়, ঢাকা ধানমন্ডিতে ১টি ফ্লাট, ঢাকা মিরপুরে ৬ তলা বাড়ি নিজের ব্যবহারের জন্য একটি বিলাসবহুল গাড়ীসহ নিজ এলাকা রাজশাহী জেলার, বাগমারা উপজেলার, ১১ নং জুগিপাড়া ইউনিয়নের বিলকুৎসা গ্রামে মাছের খামারসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি ইবিতে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট (এইচ আর এম) বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনকালে ২০১৮ সালে তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী এবং সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবর রহমানের যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে দুর্বল ও বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের নিয়োগ দেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা গ্রহনের পর তিনি ২০০৯ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী রাজনীতিতে যুক্ত হন।

২০২০ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে ড. কাজী আক্তার হোসেন সভাপতি এবং জামায়াত-বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাধারণ সম্পাদক পদে জয়লাভ করায় তিনি সকলের সন্দেহের চোখে পরেন এবং তার প্রতি আস্তা-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন প্রগতিশীল শিক্ষকরা। তার জয়ের বিষয়ে অনেকেই মনে করেন তার সাথে জামায়াত-বিএনপির সক্ষতা রয়েছে।

অপর আলোচিত শিক্ষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া সম্পর্কে জানা যায়, তিনি আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে ২০১৯ সালে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের নির্বাচনে ২০১৮ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং বর্তমানে নির্বাচিত কার্যনির্বাহী সদস্য। কেন্দ্রীয় ঘোষিত ইবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের নির্বাহী সদস্য।

চাকুরী জীবনে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট এবং অর্থনীতি বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব সততার সাথে পালন করেন এবং বিশ্ব ব‍্যাংকের হেকেব প্রজেক্ট সফলতার সাথে শেষ করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সিলেবাস প্রণয়ণ কমিটির অন‍্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে এবং শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ফ্যাকাল্টি ফাষ্ট হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণ পদক লাভ করেন । তিনি ক্যাম্পসে অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের একজন শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

আরেক আলোচিত শিক্ষক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মোঃ আব্দুল মুঈদ সম্পর্কে জানা যায়, তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাপলা ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

ছাত্র জীবনে তিনি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। পারিবারিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন কলম সৈনিক। বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত তার লেখা কলাম প্রকাশিত হয়। তিনি ক্যাম্পাসে দুর্নীতিমুক্ত মানুষ হিসেবে পরিচিতি।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকরা মনে করেন একজন সৎ, যোগ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষ ট্রেজারার হিসেবে নিয়োগ দেবে সরকার। তবে কোন দুর্নীতিবাজ নিয়োগ পেলে তাকে মেনে নেয়া হবেনা বলেও জানিয়ে দেন তারা।