অনলাইনে বাড়ছে কেনাকাটা: বাড়ছে কর্মসংস্থান

অদ্রি আহমেদ। কুষ্টিয়া শহরের বাসিন্দা। পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করতেন। করোনাকালীন চাকরিটা চলে যায়। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। মা মেয়ের নিয়ে তার সংসার। তখন সে কিভাবে সংসার চালাবে ভেবে না পেয়ে একজনের পরামর্শেই অনলাইন বিজনেস শুরু করেন। বিভিন্ন গেজেট সামগ্রী দিয়ে তার শুরু। যুক্ত হন কুষ্টিয়া অনলাইন পরিবার (কুউপ)। এখন তিনি ঘরে বসেই তিনি মোবাইল ফোনসহ গেজেটের সকল কিছু পৌঁছে দিচ্ছেন।

তার মতো আরেক তরুণী পারভীন। সে ভেড়ামারা এলাকায় তার বসবাস। নানান ধরনের খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে তিনি অভ্যস্থ। তাই এই খাদ্যসামগ্রী দিয়েই তিনি হোম মেড খাবার অর্ডার নিয়ে শুরু করেছেন হোম ডেলিভারি। এভাবেই তিনি এখন কুউপের সফল একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবেই তিনি হোম মেড খাবার তৈরি করে হোম ডেলিভারি দিয়ে প্রতি মাসে তার ১৫থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করছে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে অনেকে অনলাইনে বাজার করার দিকে ঝুঁকছেন। কারণ অনলাইনে কেনাকাটায় ঘরের বাইরে বেরনোর প্রয়োজন নেই, অপরিচিত মানুষের সাথে মেলামেশা বা ছোঁয়াছুঁয়ির আশঙ্কাও এড়ানো যায়। যার ফলে ঘরে বসেই পছন্দের প্রয়োজনীয় জিনিসটি পেতে পারে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে অনলাইন বেচাকেনা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অর্ডার করা পণ্য ডেলিভারি পেয়ে ক্রেতারাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনলাইন কেনাকাটায়।

কুমারখালি কলেজের প্রভাষক হিরা খান। তিনিও এখন নারী উদ্যোক্তা। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তৈরি গামছা লুঙ্গি আর বিছানার চাদরের কদর দেশজুড়ে। অনলাইনের মাধ্যমে সে ঘরে বসেই সরবরাহ করছে এসব। এতে করে বাড়তি আয় হওয়ায় আরও স্বচ্ছলতা তার সংসারে।

নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে হিরা খান বলেন, ‘আমি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হবো। নিজেকে রোল মডেল হিসেবে তৈরির করবো। যাতে আমাকে দেখে আরও নারীরা নিজেদের উদ্যোগকে সকলের সামনে উপস্থাপন করার সাহস পায়। কুউপের মাধ্যমে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই।

কুষ্টিয়া অনলাইন পরিবার (কুউপ) এডিমিন- নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, বর্তমান অনলাইনে নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। নারীরা আর ঘরে বসে নেই। মোবাইলে অর্ডার নিয়ে সেটা হোম ডেলিভারি করে খুব সহজেই অনলাইন ব্যবসা করা সম্ভব। ঘর সামলিয়েও অনলাইন বিজনেস করে মাসে একটি নারী নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা চাই আমাদের গ্রুপের মাধ্যমে প্রিয় জেলার নারী পুরুষ নিজ প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাক।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ব্যাপার যে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা কার্যক্রমে নারী পুরুষ এগিয়ে আসছেন। এর ফলে আমাদের অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং শিক্ষিত নারী পুরুষের একটা বড় অংশের কর্মসংস্থান হবে। অনলাইন ভিত্তিক এই আধুনিক ব্যবসা অনেকটাই নারী বান্ধব। এ জন্য নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র/কুটির শিল্পের বাজার ও বিস্তৃত হচ্ছে। আর এটা ডিজিটাল বাংলাদেশের বড় একটা ইতিবাচক অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।

গ্রুপ ক্রিয়েটর জীবন রহমান মহন বলেন, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের যে দিকটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হল অনলাইন শপিং। কেনাকাটা করতে এখন আর যানজট ঠেলে দোকানে গিয়ে সময় অপচয় করতে হচ্ছে না। চাইলে যে কোনো পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে হাতে হাতে। তিনি বলেন, নিজের জেলা কুষ্টিয়াকে দেশের কাছে রিপ্রেজেনটেটিভ করার জন্য আমার এই উদ্যোগ।

ইতোমধ্যে অনেক নারীপুরুষ গ্রুপে সময় দিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে এটা একটি জেলার জন্য, দেশের জন্য ইতিবাচক। অনেক বেকার নারী পুরুষ এখন সফল উদ্যোক্তা।