অনলাইন জুয়ার সাম্রাজ্যের আরেক হোতা মুজিবনগরের যতারপুর গ্রামের মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে কটাকে তলব করেছে ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) । গত ৩ জুলাই রবিবার সিআইডির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হাজির করার জন্য পুলিশকে চিঠি দেয় সিআইডি। কিন্তু তাকে হাজির করা হয়েছিলো কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। সেটা জানার চেষ্টা চলছে।
কটার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত করছে সিআইডি। সেই মামলার তদন্তের জন্য তাকে হাজির করাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, এক সময় কটার পরিবার ছিল বেশ স্বচ্ছল। কৃষি ও বসতভিটার জায়গাসহ নানা সম্পদ ছিল তাদের দখলে। কিন্তু কটার ছোটবেলার বন্ধুদের ভাষ্যে, কৈশোরেই সে তাস, লুডু ও ক্রিকেট জুয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। এই আসক্তি ক্রমেই তাকে নিমজ্জিত করে। সম্পত্তি বিক্রি করে, বন্ধক রেখে কিংবা হারিয়ে দিয়ে একপর্যায়ে সে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এরপর আত্মগোপনে যায়।
ফিরে আসে অনলাইন ‘দুনিয়ার’ নতুন চেহারা নিয়ে—1xBet এবং টেলিগ্রাম চ্যানেলনির্ভর জুয়া ব্যবসায়ী হিসেবে।
‘কটা’ টেলিগ্রামে 1xBet ভিত্তিক অনলাইন জুয়ার চ্যানেল চালু করে বিভিন্ন ইউনিয়নে তৈরি করে এজেন্ট ও রিচার্জ অপারেটর নেটওয়ার্ক মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) এর মাধ্যমে দিনে লাখ লাখ টাকার লেনদেন। টাকা পাঠালে চ্যানেল পাবেন—এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে শতাধিক মানুষকে প্রতারিত করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। অনেকে জমি বিক্রি, স্বর্ণ বিক্রি করে বা ঋণ নিয়ে টাকা দিলেও কোনো সেবা পাননি
সবজি বিক্রেতা রফিক, কটার অনলাইন জুয়া চ্যানেল পাওয়ার আশায় ঘর ও জমি বন্ধক দিয়ে ১২ লাখ টাকা দেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর কটা উল্টো তৎকালীন ডিবি কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে রফিককেই অনলাইন জুয়ার মামলায় আসামি করে জেলে পাঠান। আজ রফিক নিঃস্ব হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন।
অনুসন্ধানে উঠে আসা সম্পদের হিসাব সূত্রে পাওয়া তথ্যে কটা ওরফে বিল্লাল হোসেন বর্তমানে যা যা অর্জন করেছেন তার মধ্যে রয়েছে মেহেরপুর শহরে প্রায় ৪ কোটি টাকার জমি, যতারপুর, শিবপুর ও আশপাশে ৫০ বিঘার বেশি জমি (২০২২–২০২৫ সালের মধ্যে ক্রয়), ৭০ লাখ টাকার করোলা ক্রস গাড়ি (নগদে কেনা), ঢাকার বসুন্ধরাসহ অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট। ব্যাংকে টাকা না রেখে কোটি টাকার সমপরিমাণ সোনা মজুদ। প্রতিদিন মোবাইল লেনদেনে লাখ লাখ টাকা ঘোরে আয়কর দাখিল নেই, কোনো বৈধ ব্যবসার অস্তিত্ব নেই, তদন্ত হচ্ছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ২৫(১) ধারা অনুযায়ী।
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, তার জমি, ফ্ল্যাট, মোবাইল লেনদেন, সোনা মজুদের উৎস যাচাই করা হচ্ছে শিগগিরই তার সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে কর ফাঁকি, প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বহু ধারায় মামলা হতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, এক সময় কটারপরিবার ছিল ধনীর তালিকায়। কিন্তু কটার জুয়ার নেশায় সব শেষ হয়ে যায়। এখন আবার সেই জুয়া দিয়েই কোটি টাকার মালিক হয়েছে সে।
তবে সে কোটিপতি হলে গ্রামের অনেক তরুন আজ পথে বসেছে। সে শুধু নিজে কোটিপতি হয়ে আর শত শত পরিবারকে ধ্বংস করে পথে বসিয়েছে। তার জুয়ার চ্যানেল চালাতে গিয়ে মেহেরপুর শহরের একটি কফি হাউজ থেকে অনলাইন জুয়ার আর চার এজেন্টকে চ্যানেল বিক্রয় করার সময় সময় হাতে নাতে আটক করেছে তৎকালীন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
আটক অনলাইন জুয়ার এজেন্টরা হলেন- মুজিবনগর উপজেলার যতারপুর গ্রামের সাইদুর ইসলাম (২২), জাহাঙ্গীর আলম (২৫),রফিকুল ইসলাম (৪১) এবং সদও উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের সুমন খন্দকার (৩৬)। আটকরা যতারপুর গ্রামের কটা বিশ্বাসের চ্যানেল পরিচালনা করতেন বলে মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছিলো।
শনিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে শহরের কাথুলী সড়কের এবি ক্যাফে রেস্টুরেন্ট অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এসময় তাদেও কাছে থেকে ৫টি মোবাইল ফোন, অনলাইন জুয়ার সাইট পরিচালিত ২টি নগদ ও বিকাশের এজেন্ট সিম, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং ১০টি সিম উদ্ধার করেছে পুলিশ।