অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিতের দাবি জনসাধারণের

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’। ২০০২ সাল থেকে ‘আন্তর্জাতিক জানা অধিকার দিবস’ পালন করা হলেও মূলত ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কো এ দিবসের স্বীকৃতি দেয়। ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস’ পালন হয়ে আসছে।

তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে দেশে ‘তথ্য অধিকার আইন -২০০৯’ নামে একটি আইন পাশ করা হয়। আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার থাকিবে এবং কোন নাগরিকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তাহাকে তথ্য সরবরাহ করিতে বাধ্য থাকিবে।

একই আইনের ৬ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ উহার সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকাণ্ডের সকল তথ্য নাগরিকগণের নিকট সহজলভ্য হয়, এইরুপে সূচিবদ্ধ করিয়া প্রকাশ ও প্রচার করিবে।

কিন্তু আইন পাশ হওয়া ১১ বছর পার হলেও এখনো পর্যন্ত সাধারণ নাগরিকরা এই আইনের বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। বরং তথ্য জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কিংবা কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে বঞ্চনার শিকার হতেও হয়। এমনিট জানিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এমনকি গণমাধ্যমের কর্মীরাও বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য পেতে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।

তথ্য অধিকার আইনে নতুন করে গনমাধ্যম কর্মীদের জন্য খড়গ হস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশ। আদেশে বলা হয়েছে, বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া কোন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কোন গণমাধ্যমে কথা বলতে পারবেন না কিংবা কোন নিবন্ধ প্রকাশ করতে পারবেন না বলে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ১৮ আগস্ট “সরকারি কর্মচারি(আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯” এর এমন নিয়ম মনে করিয়ে দিয়ে তা মানার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সব মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিবদের চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ আদেশের পর থেকে তথ্য অধিকার আইন নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়।

ব্যবসায়ী শাহরিয়ার লিওন, শিক্ষক হুমায়ুন কবির, গাড়ি চালক মিলনসহ তৃনমূলের বেশ কিছু সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য অধিকার সর্ম্পকে জানতে চাইলে তারা বলেন, এই আইন সম্পর্কে আমরা তেমন অবগত নয়। প্রয়োজনে যদি কোন সরকারি দপ্তরে যাই তাহলে আমাদের তথ্য নিতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়।

মেহেরপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, তথ্য জানার অধিকার সকলেরই আছে। দুর্নীতিসহ অনিয়ম রুখতে তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। তথ্য অধিকার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের কাছে আরো বেশি প্রচার প্রচারণা চালানোর দাবিও করেন তিনি।

বাসস এর মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি দিলরুবা বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ হলে, তথ্যের অবাধ মালিকানাও তাহলে জনগণের। তথ্য যাবে কৃষক শ্রমীক জনতার হাতে, তবেই রাষ্ট্রের মালিক যে জনগণ সত্যিকার অর্থে সমাজে তখন এ বোধ তৈরি হবে। সুশাসনের জন এ এক অপরিহার্য শর্ত। কৃষকের উন্নত বীজ বা সারের তথ্য জানা অধিকার আছে, গ্রেপ্তার করতে হলে আসামির গ্রেপ্তারের কারণ জানার অধিকার, একই ভাবে নির্যাতিত নারীর আইনি সহায়তা পাওয়ার তথ্য, সবাই কিন্তু তথ্য অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা গেলে অসম ও অমানবিক ক্ষমতা বিন্যাসকেও অনেকখানি বদলে ফেলা সম্ভব। একজন সংবাদ কর্মীর তথ্য পেতে বিলম্ব হলে তথ্য সরবরাহে সংশ্লিষ্ট দফতরের বিলম্বিত কারনে খবরের গুরুত্ব কমে যায়। প্রতিটি অফিস আদালতসহ সকল দফতরের তথ্য আপডেট থাকা উচিত।

প্রথম আলো’র মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি আবু সাঈদ বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা অনেক সময় কোন তথ্য চাইতে গেলে নানা রকম সমস্যায় পড়ি। আবেদন করে তথ্য নিতে গেলে সময়মত পাইনা। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবসে সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা থাকবে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা।

গাংনী প্রেস কøাবের সাধারণ সম্পাদক ও মাই টিভির জেলা প্রতিনিধি মাহাবুব আলম বলেন, বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর যথাযথ বাস্তবায়ন হয়নি। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের কর্মিরা তথ্য নিতে গিয়ে অনেক হয়রানির স্বিকার হয়। এক সময় তথ্য অধিকার আইন নিয়ে সরকারি ভাবে ক্যাম্পেইন করা হতো। কিন্তু এখন আর এ বিষয়ে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায় না। সরকারি ভাবে তৃনমূল পর্যায়ে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতা কার্যক্রম করতে হবে। সেই সাথে সাংবাদিকদের অবাদ তথ্য প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে দেশের অনিয়ম দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি তোজাম্মেল আযম বলেন, তথ্য অধিকারের কথা বলা হলেও সেটা এখনো বস্তবায়ন হয়নি। “তথ্য অধিকার আইন ২০০৯” কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ আছে।

মেহেরপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা আব্দুল আল মামুন বলেন, আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে জুম কনফারেন্সর আয়োজন করা হয়েছে। সেই সাথে সারাদিন ত্যথ অফিসের গাড়িকে সুসজ্জিত করে জনসচেতনতা মূলক প্রচার করা হবে।