মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার মহাজনপুর ইউনিয়নের বাবুপুরে অবৈধভাবে ভৈরব নদের খননকৃত মাটি বিক্রির ধুম পড়েছে। রাতের আধারে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে ওই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে এলাকার ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
তবে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে মাটি বিক্রির কোন নিলাম হয়নি। যারা মাটি কাটছেন তারা অবৈধভাবে এ মাটি বিক্রি করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মাটি বিক্রির কিছু ভিডিও ও ছবি শেয়ার করা হলে বিষয়টি নতুন ভাবে আলোচনায় আসে। তারা জেলা প্রশাসন ও উপজেলার প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগও তোলেন।
গত শনিবার সকালে সরেজমিনে মহাজনপুর ইউনিয়নের বাবুপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় বছর খানেক ধরে ভৈরব খননের এ মাটি বিক্রি করছে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যবসায়ী। আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলুর লোকজন এ মাটি বিক্রি করতেন। ৫ আগষ্টের পর বিএনপির কিছু প্রভাবশালী এ মাটি বিক্রি করছেন বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করছেন। ক্ষমতার পালাবদল হয়ে মাটি বিক্রির লোকজনও পালাবদল হয়েছে, তবে মাটি বিক্রি থামেনি। তবে দিনের বেলায় তাদের দেখা মেলেনি, তাদের সাথে যোগাযোগ করাও যায়নি। স্থানীয়দের চোখে মুখে ক্ষোভ ও অসন্তোষ থাকলেও তারা ভয়ে কথা বলতে চাননা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, লাল্টু, গবাসহ বেশ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী ক্ষমতার দাপটে রাতের আধাঁরে মাটি কেটে ইটভাটাসহ এবং বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। ভৈরব নদের মহাজনপুর তীরে মাটির স্তুপ দিয়ে পাড় তৈরি হলেও অপরদিকে বাবুপুরে প্রায় এক কিলোমিটার জমির মাটি কেটে নিয়ে ভৈরব নদের পাশে ওয়াক ওয়ে পর্যন্ত সমতল করা হয়েছে। ফলে বর্ষাকালে ওই এলাকা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
মশিউর রহমানের মালিকনাধীন এসএমবি ইটভাটায় দেখা যায়, যে পরিমান মাটির স্তুপ করা হয়েছে, সে মাটি কয়েকবছর ইট প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
এ ব্যাপারে মুজিবনগর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি, বিএনপি নেতা ও এসএমবি ইটাভাটার মালিক মশিউর রহমান বলেন, ‘এলাকার লাল্টু ও গবা নামের কয়েকজন দালাল মাটি কেটে বিক্রি করছেন। আমাদের ইউনিয়নে ৬টি ইটভাটা। কিন্তু মাটিগুলো বাইরে চলে গেলে আমাদের ইটভাটা চালানো কঠিন হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতার সময় সাবেক চেয়ারম্যান আমাম হোসেন মিলু টেণ্ডার করে মাটি বিক্রির ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই সময় আমরা মাটি কিনে রেখেছি। নতুন করে কোন টেণ্ডার না হওয়ায় ওই মাটি আমরা কিনতে পারছি না। কিন্তু মাটি ঠিকই ওই দালালরা কেটে বাইরে বিক্রি করছে। এ বিষয়ে ইউএনও সাহেবকে বলেছি মাটি টেণ্ডারের ব্যবস্থা করতে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন এবং গত শুক্রবারে তিনি ওই এলাকা পরিদর্শনও করেছেন’।
মেহেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হান্নান প্রধান বলেন, মহাজনপুর এলাকায় ভৈরব নদ খননের ফলে নদের মাটি ভৈরবের পাশে রাখা হয়েছে। সে মাটি স্থানীয় কৃষকদের জমিতেও রাখা হয়েছে। তবে ওই এলাকায় কোন কৃষক কিংবা কেউই মাটি ক্রয়ের জন্য বা সরিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করেননি। এমনকি এখনো পর্যন্ত মাটি বিক্রির কোন নিলাম হয়নি।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ মণ্ডল বলেন, ‘অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার আমি টিম নিয়ে ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি। মাটি বিক্রির চিত্র দেখতে পাই। ওখানে গিয়ে জানতে পারি কিছু অসাধু লোক রাতে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেখানে ইনফর্মার লাগিয়ে রেখেছি। রাতে হলেও আমরা তাৎক্ষনিক অভিযান চালিয়ে ওই সকল মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’।