গাংনীতে তহ বাজারে খাজনা আদায়ের নামে নৈরাজ্যের অভিযোগ

গাংনী তহ বাজারে খাজনার নামে চলছে চাঁদাবাজির নৈরাজ্য। এতে ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। তাছাড়াও খাজনার রশীদও তাদের দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন খাজনার রশীদ চাইতে গেলে ইজারাদারদের হুমকিধামকি শুনতে হয়।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, খাজনার রশীদতো দেবেই না আবার রশীদের জন্য কথা বললেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপরও ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই খাজনা দিয়ে আসছে। এদিকে খাজনার মাত্রাও অতিরিক্ত বলে তারা অভিযোগ করেন। ব্যবসায়ীরা জানান, এখানেপাকা দোকান ঘর রয়েছে ১৩টি আগে একই জায়গার উপর দোকান ঘর ছিল ১০টি। বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম ১০টি ঘরের জায়গায় ১৩টি ঘর নির্মান করেছেন আগের দোকান ঘর ছিল ১০/১২ ফুট এখন তা ছোট করে করা হয়েছে ৮/১২ ফুট। ঘরগুলিও আগের চেয়ে ছোট হয়েছে এবং এই ছোট ঘরে সকল ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে প্রতি ঘর বাবদ ১লক্ষ টাকা সিকিউরিটি নিয়েছে মাসিক ২শ’ টাকা করে ভাড়া। এতেও ব্যবসায়ীদের তেমন কোন আপত্তিনা থাকলেও মেয়র আশরাফুল ইসলামের নির্দেশে ভাড়া বাদেও প্রতিদিন দোকান ঘরপ্রতি ৩০ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। ফলে মাসে খাজনা সহ ভাড়া পড়ছে ১১শ’ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেন এখানে ব্যবসায়ীদের কাছে খাজনার নামে রিতিমত চাঁদাবাজির নৈরাজ্য চলছে।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগকরেন পাকা দোকান এর আগেও আমরা চুক্তিপত্র’র মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছিলাম তখন থেকে বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম আসার আগ পর্যন্ত কোন দিন মাসিক ভাড়া ছাড়া খাজনার নামে অতিরিক্ত টাকা তারা দাবি করেনি। অথচ এখন সিকিউরিটিও বেশি আবার দোকান ঘর ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত খাজনাও তারা জোর করে আদায় করছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন এটা রিতিমত খাজনার নামে চাঁদাবাজির নৈরাজ্য চলছে । দোকান ঘরের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৮৪ সালে গাংনী উপজেলা পরিষদ থেকে গাংনী তহ বাজারে ১০টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। তৎকালিন সময় ১২ হাজার টাকা এককালিন ও মাসিক ২শ’ টাকা হারে পাকা দোকান ঘরে ব্যবসা করে আসছে ব্যবসায়ীরা। সে সময় পর থেকে গাংনী পৌরসভার অন্তুর্ভুক্ত হলে প্রথমের মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব পান প্রয়াত আমিরুল ইসলাম পরে সাবেক মেয়র আহম্মেদ আলি। তারা কোন দিন নতুন করে ভাড়া বাড়ায়নি এমনকি ভাড়া ছাড়া অতিরিক্ত খাজনাও গ্রহন করেননি। অথচ বর্তমান মেয়র আশরাফুল ইসলাম আসার পর থেকে গাংনী তহ বাজারে ব্যবসায়ীরা খাজানার নামে চাঁদা আদায়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা যদি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে যাই তাহলে তারা আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ম গুলি কে করেছে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন মেয়র করেছে তাই মানতে হবে।
ব্যবসায়ীরা জানান, লক্ষ টাকা খাজনা দিয়ে দোকান ঘর নিয়েছি মাসিক ভাড়াও দেয়া হয় তারপরও কেন আমাদের দোকান ঘর থেকে খাজনা দিতে হবে? এমন ভাবেই তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

কার কথাতে ইজারাদাররা চুক্তি ভিত্তিক দোকানের খাজনা আদায় করে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন মেয়র আশরাফুল ইসলামের কথাতে তারা আমাদের কাছে খাজনা দাবি করে তাও আবার বিনা রশীদে।

ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু আমাদের সাথেই অতিরিক্ত চাঁদা আদায় করেনা ইজারাদারদের লোকজন মেয়র আশরাফুল ইসলামের কথা মতো বিনা রশীদে মাছ ব্যবয়ায়ীদের একটি কড়াই প্রতি ৬০ টাকা করে আদায় করে। একটি কড়াইতে যদি ২ কেজি মাছও থাকে তারপরও তাকে ৬০ টাকা খাজনা দেওয়া লাগে। যদি ২টি মাছের তাওয়া থাকে তাহলে ৬০ টাকা হিসেবে ১শ’২০ টাকা দিতে হয়। এতে মাছ ব্যবসায়ীরা এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিনা রশীদে খাজনা দিয়ে থাকেন। অথচ এর আগে একজন ব্যবসায়ী প্রতি ৪০ টাকা করে দিত এক্ষেত্রে একাধিক তাওয়া থাকলেও অতিরিক্ত খাজনা দেওয়া লাগেনি। এখন না দিলে সেখানে ব্যবসা করা যাবে না।

মুরগি ব্যবসায়ীরাও বর্তমান ইজারাদারদের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এখানে মুরগীর ব্যবসার জন্য আলাদা জায়গা করে দিয়েছে অথচা সেখানে না গিয়েও ঐ স্থানের বাইরে নিজেস্ব সাইকেলে একটি খাচি নিয়ে ব্যবসা করলে ওসাইকেল প্রতি ৪০ টাকা করে খাজনা দিতে হয়। এদিকে যারা মুরগির ঘরে ব্যবসা করেন তাদের খাজনা ধার্য করা হয়েছে ৮০ টাকা। খাজনার বাইরেও তাদের পানি ও ঝাড়– দেওয়া বাবদ ২০ টাকা করে দিতে হয়। একজন মুরগী ব্যবসায়ীর নিকট থেকে সব মিলিয়ে ১শ’ টাকা করে খাজনা আদায় করেন ইজারাদারের লোকজন। ব্যবসায়ীরা জানান, ইজারাদাররা যেহেত ুব্যবসায়ীদের নিকট থেকে টাকা নেন হাট পরিচ্ছন্ন রাখার দ্বায়িত্বও তাদের ঐ টাকার ভিতর থেকেই করতে হবে। এখানেও তারা জোর করে টাকা আদায় করে নেয়।

নির্ধারিত ৮০ টাকার বাইরে অতিরিক্ত টাকা তাদের না দিলেতারা তো এখানে কাজ করবে না তাহলে তাদের টাকা কেন দেন। এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীরা বলেন এটা মেয়রের নির্দেশ। আমাদের সাথে টাকা নিয়ে পানি ও ঝাড়–রদ্বায়িত্বে যারা রয়েছে তাদেরকে মেয়র আশরাফুল ইসলাম বেতন দেন। এরপরও হাটের দিন অতিরিক্ত কয়েকজন পানি দেওয়া বাবদ টাকা নিয়ে যায়।

মাংসের বাজারের ব্যবসায়ীদেরও একই অভিযোগ। তারাজানান, প্রতিটি গরুতে পৌরট্যাক্স দেওয়ালাগে ৫০ টাকা করে খাজনা দেওয়া লাগে ৫০ টাকা পানি বাবদ ও সুইপার বাবদ দেওয়া লাগে ৪০ টাকা করে। ফলে প্রতিটি গরুতে ১শ’৪০ টাকা করে দিতে বাধ্য করা হয়।
গাংনীর তরকারি বাজারে খাজনার নামেই জারা দার সাহাজুল ইসলাম মেয়র আশরাফুলই সলামের নির্দেশে ইজারার নামে বিনা রশীদে চাঁদাবাজির নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি মাহাবুবুর রহমান স্বপন সাংবাদিকদের বলেন, পাকা দোকানে যারা চুক্তি করে ব্যবসা করছেন তাদের অতিরিক্ত খাজনা দিতে নিষেধ করা হয়েছে তারপরও তারা খাজনা দেয় দোকান বন্ধ করে দেবে এই ভয়ে। এবিষয়ে তাদের বাজার কমিটির পক্ষ থেকে অভয় দেওয়া হয়েছে তারপরও তারা ভয় পেলে আমাদের কিছ ুকরার থাকে না।

জানতে চাওয়া হলে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গাংনী বাজারে ১লক্ষ টাকাতে মাসিক ২শ’ টাকা দিয়ে কোন জায়গায় পাকা দোকান ঘর পাওয়া যাবে না। নাম মাত্র ভাড়া দিয়ে খাজনা দেবেনা কেন। হাটের ভিতর ব্যবসা করতে হলে সকলকেই খাজনা দিতে হবে। এতে যদি তাদের পড়তা না হয় তাহলে ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে যাক।

খাজনার রশীদ প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন সবজি হাটে একজন ব্যবসায়ী নানান রকম সবজি নিয়ে বসে তাদের সবজির প্রকারভেদে আলাদা খাজনা করতে হবে তার জন্য আলাদা আলাদা রশীদ করতে হবে এটা কোন জায়গায় কার হয় না তাছাড়া কোন হাটেই রশীদ দিয়ে খাজনা আদায় করা হয় না।
এক প্রশ্নের জবাবে পৌর মেয়র আশরাফুল ইসলাম বলেন, খাজনার আদায়ের কারণে পণ্যের দাম অতিরিক্ত হয় না ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে।
তিনি বলেন,খাজনা নেওয়া হবে না ব্যবসায়ীরা যদি প্রতিটি পণ্যে ২ থেকে ৫ টাকা কেজি প্রতি লাভ রেখে ব্যবসা করে। তহ বাজারে ব্যবসায়ীরা একেক টি পণ্য দ্বিগুণ মুনাফায় বিক্রি করে যে কারণে পণ্যের দাম অতিরিক্ত হয়ে যায়।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান বলেন, হাট বাজারের খাজনা রশীদের মাধ্যমেই তুলতে হয়। রশীদ ছাড়া খাজনা তোলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে এ ব্যপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সিদ্দিকী শাহীন,গাংনী