অর্থের বিনিময়ে তথ্য পাচার করতেন মার্কিন সিনেটর মেনেনডেজ

চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। এই প্রবাদ বাক্যটা আমরা সবাই মুখে মুখে শুনেছি। সেই প্রবাদের প্রতিফলন দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজের ক্ষেত্রে। যিনি আবারও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পেছনেও কলকাঠি নেড়েছেন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগ আসায় তার পদত্যাগ দাবি করেছেন রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট পার্টির সদস্যরা।

২০২১ সালের ১০ই ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল অফিস বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তাদের ভাষায় এই প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ছিল র্যাব।

সেই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব করেছিলেন মার্কিন সিনেটর বব মেনেনডেজ। বিষয়টি নিয়ে তখনই বেশ আলোচনা শুরু হয়েছিল। মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের পর দেশের বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে সবাই নতুন করে ভাবতে শুরু করে।

২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো বব মেনেনডেজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসে। সেইবার খালাস পেলেও পরেরবার আর রক্ষা হয়নি। ২০২২ সালে ফেডারেল এজেন্টদের তল্লাশির সময় মেনেনডেজের কাছে একটি জ্যাকেট এবং নগদ অর্থ পায়। সেই অর্থের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। তার সেই দুর্নীতির ৩৯ পাতার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেনেনডেজের রাজনৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতা তাকে এই ধরনের দুর্নীতিতে জড়াতে উৎসাহিত করেছে। যদিও মেনেনডেজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এসব অভিযোগের পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

অভিযোগে আরও বলা হয়, মেনেনডেজ শুধু অর্থের বিনিময় স্বার্থ উদ্ধার করেননি, মার্কিন সিনেটর হয়ে দেশের বিরুদ্ধে গোপন তথ্য পাচারের মিশনে নেমেছিলেন ।

ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মেনেনডেজের সাথে আলাপ শুরু করার অল্প সময়ের মধ্যেই, তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজ মিশরীয় গোয়েন্দা এবং সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের জন্যে ব্যবসায়ী হানার সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই মেনেনডেজ মিশরীয় কর্মকর্তাদের কাছে মার্কিন সরকারের সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ করে। পাশাপাশি গোপনে মিশর সরকারকে সহায়তা করার পদক্ষেপ নেয়। বিনিময়ে হানা, দাইবেস এবং ইউরিবের মাধ্যমে পকেটস্থ করে কোটি কোটি টাকা।

জাস্টিজ ডিপার্টমেন্টের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মিশর সরকারকে সামরিক সহায়তা দিতে সিনেটর অনেক অর্থ ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। মিশর এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা প্রাপ্ত অন্যতম একটি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২২ সাল পর্যন্ত বছরে ১ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা মিশরকে দিতো।

এদিকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মেনেনডেজের পদত্যাগ দাবি করেছে রিপাবলিকান এবং ডেমোক্রেট পার্টির সদস্যরা। তবে মেনেনডেজ পাল্টা জানিয়েছে, ‘আমি কোথাও যাচ্ছি না’।

দুর্নীতির অভিযোগ আসার পর তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, ‘আমি সিনেটে থাকছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা শুধু অভিযোগ। আমি স্বীকার করি যে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় লড়াই হবে আমার জন্য’।

এদিকে মিশরে সামরিক সহায়তা বন্ধে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নিউ ইয়র্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা আদালতে বিস্ফোরক অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পর শুক্রবার সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির প্রধানের পদ থেকে সাময়িকভাবে পদত্যাগ করেন মেনেনডেজ।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সংগঠন ফ্রিডম ইনিশিয়েটিভ বলেছে, নিজেকে বিত্তবান করার জন্য মেনেনডেজ মিশরের দুর্নীতিগ্রস্ত , নৃশংস সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিতে তার অবস্থান ব্যবহার করেছেন।