আওয়ামী লীগ নয়, উঠে এসেছেন বিএনপি পরিবার থেকে

নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয় দেওয়া এবং সরকারের ওপর মহলের নেতাদের সাথে গভীর সখ্য রয়েছে এমন প্রচারনা চালিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সবার কাছে চরম স্বেচ্ছাচারি হয়ে ওঠা আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের পারিবারিক ইতিহাস জানা গেছে। তিনি আসলে আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে নয়, বরং জন্মগতভাবে বিএনপি পরিবার থেকে উঠে এসেছেন বলে মেহেরপুর প্রতিদিনের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মামুন বাবরের পিতা বাবর আলী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার একটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মামুন বাবর মিরোজের বড় ভাই হুমায়ুন বাবর ফিরোজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির তৎকালীন এমপি শৈলকূপার আব্দুল ওহাবের সাথে পারিবারিক গভীর সম্পর্ক ছিল মামুন বাবর মিরোজের পিতা বাবর আলীর। তাদের গ্রামের বাড়ি শৈলকূপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারের পাশের ক্রিপালপুর গ্রামে। এই গ্রামটি আবাইপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত। বিএনপির এমপি আব্দুল ওহাবের হাত ধরে মামুন বাবরের পিতা বাবর আলী আবাইপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

বিএনপির নেতা বাবর আলীর দুই ছেলে। বড় ছেলের নাম হুমায়ুন বাবর ফিরোজ আর ছোট ছেলে মামুন বাবর মিরোজ। বড় ছেলে হুমায়ুন বাবর ফিরোজ ৯৪ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। এর কিছুদিন আগে বাবর আলী ক্রিপালপুর গ্রাম ছেড়ে শৈলকূপা পৌর শহরের কবিরপুরে বাড়ি ভাড়া নেন। এই কবিরপুরেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে ‘এমপি মার্কেট’ নামের একটি মার্কেট। মার্কেটটি বিএনপির এমপি আব্দুল ওহাবের মালিকানাধীন। এই মাকের্টের পাড়াতেই বাবর আলী বাড়ি ভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন।

বাবর আলীর বড় ছেলে হুমায়ুন বাবর ফিরোজ এই বাড়ি থেকেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতেন। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে ওতোপ্রতো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। পারিবারিক রাজনৈতিক সাপোর্ট এবং শৈলকূপা উপজেলা বিএনপির দলীয় সাপোর্ট পেয়ে ফিরোজ কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতিতে নিজের অবস্থান শক্তপোক্ত করে তোলেন। এরপর ৯৬ সালে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্ত শিবিরের বিরুদ্ধে ছাত্রদলের অবস্থান পাকাপোক্ত করে তুলতে হুমায়ুন বাবর ফিরোজের অবদান স্বীকার করে অনেকে।

এরপর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের সরকার। বিএনপি পরিবার থেকে উঠে আসলেও ভোল পাল্টে ফেলেন মামুন বাবর মিরোজ। তিনি রীতিমত ভোল পাল্টে হয়ে যান বড় ছাত্রলীগার। পরে চাকুরীজীবনে হয়ে ওঠেন বড় আওয়াীলীগার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা মামুন বাবর মিরোজ চাকুরী পেয়ে যোগ দেন কুষ্টিয়ার মিরপুর সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে। আলমডাঙ্গার মত চরম হুমকি-ধামকি দিয়ে মিরপুরের মানুষজনকেও প্রথমে বশে আনতে চেষ্টা করেন মামুন বাবর।

সকালের অফিস বিকেলে যাওয়া শুরু করেন। তার এই অন্যায় রেওয়াজে প্রথম বাঁধ সাধেন মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা কামারুল আরেফীন। তিনি সরকারি নিয়মে অফিসে আসার বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরকে চরমপত্র দেন। কড়া হুশিয়ারিও দেন তিনি। এতেও কাজ না হলে তিনি সব সময়ের স্বেচ্ছাচারী মামুন বাবরকে জরুরী বদলী করার ব্যবস্থা করেন। মামুন বাবর এরপর যোগ দেন আলমডাঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে।

আলমডাঙ্গায় যোগ দিয়ে তার স্বেচ্ছাচার শতগুনে বাড়িয়ে দেন। প্রধমে বয়োজোষ্ঠ্য দলিল লেখকদের ওপর চালাতে থাকেন নিপীড়ন। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন তাদেরকে। আলমডাঙ্গায় যোগ দিয়ে কয়েক মাসের মধ্যেই দলিল লেখকদের মাঝে তিনি হয়ে ওঠেন একজন হিংস্র অফিসার হিসেবে। এভাবে চলতে থাকায় দলিল লেখকরা সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। গড়ে তোলেন আন্দোলন। কিছুদিনের জন্য জমি কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ পড়ে বিপাকে। এরপর এক রাজনৈতিক মধ্যস্থতায় এর সমাধান হয়।

সূত্র জানায়, আবারও পার পেয়ে যান মামুন বাবর। তিনি এবার তার স্বেচ্ছাচারিতা আরও কয়েকগুন বাড়িয়ে দেন। সকালের অফিস বিকেলে আসতে শুরু করেন। গ্রাম থেকে আসা শত শত নারী-পুরুষ দিনভর খেয়ে না খেয়ে মামুন বাবরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এই ভয়াবহ অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তিনি আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতাদের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে প্রচার করতে থাকেন। তিনি জন্মগতভাবে আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান বলেও সবাইকে হুশিয়ারি করতে থাকেন। তিনি এমনও বলতে থাকেন,তাকে কোন ক্ষমতাই আলমডাঙ্গা থেকে বদলী করাতে পারবে না।

বছরের পর বছর এভাবে স্বেচ্ছাচারিতার মোড়কে নিজেকে ঢেকে চলতে থাকলে নজর পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব আলীর। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলীকে সাথে নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের স্বেচ্ছাচারিতাকে রুখে দিতে সচেষ্ট হন। সরকারি নিয়মে অফিসে আসতে তাকে তাগিদ দেওয়া হয়। দেওয়া হয় আল্টিমেটাম। কিন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আল্টিমেটাম কোন কাজে আসেনি। বরং উপজেলার সর্বোচ্চ এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিশোদগার করতে থাকেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী জানান, সাব-রেজিস্ট্রার মামুন বাবরের অনিয়মিত অফিস করা ও তার সরকারি চাকুরী বিধি লংঘন করার বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করতে উপর মহলে জানানো হবে।