আগে ছিলাম দারিদ্র্য সীমার নিচে এখন চরিত্র সীমার নিচে – এম.এ.এস ইমন

দেশে রেপ, যৌন নিপীড়ন,ধর্ষণ আশঙ্কাজনক বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে মানুষের নৈতিকতা অবক্ষয়ও বেড়ে চলছে। মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুত্ব দিকে ধাবিত হচ্ছি। বলতে শোনা যাচ্ছে, আগে ছিলাম দারিদ্র্য সীমার নিচে এখন চরিত্র সীমার নিচে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবনার পাশাপাশি নৈতিকতার অবক্ষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। কিভাবে এই রেপ,ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন দূর করা যায়। সুশিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও আইনগতভাবে কঠোর শাস্তিই হতে পারে পরিত্রাণের উপায়। কঠোর শাস্তি বলতে বুঝাচ্ছি ক্যাপিটাল পানিশম্যেন্ট বা মৃত্যুদন্ড। এইক্ষেত্রে অপরাধীদের প্রতি মানবিকতা বা শৈথিল্যতা সুযোগ নেই। অনেকের মতে মৃত্যুদন্ড হচ্ছে বর্বর আইন। কিন্তু তাদের প্রিয়জন যদি রেপড হয় তারাও কিন্তু মৃত্যুদন্ড দাবি করে।অন্যের ক্ষেত্রে তারা এটাকে বর্বর হিসাবে গণ্য করে।

খেয়াল করে দেখবেন, যে দেশে ধর্ষণ আইনে মৃত্যুদন্ড বহাল আছে সেই দেশে ধর্ষণের ঘটনা কম। যারা মৃত্যুদন্ডকে বর্বর বা অমানবিক গণ্য করে তাদের দেশে ধর্ষণের হার বেশী। আমেরিকাতে প্রতিবছর প্রায় ৩ লক্ষ ২১ হাজার মহিলা রেপের শিকার হয় । প্রতি ৯৮ সেকেন্ডে একজন আমেরিকান মহিলা রেইপ অথবা সেক্সুয়াল হ্যারাসের মুখে পড়ে । অবস্থা এতোই সংকটজনক যে সেখানে ৬৫+ বছরের বৃদ্ধারাও নির্যাতনের শিকার এবং এই হার শতকরা ৩ ভাগ । আর সব থেকে বেশি রেপের শিকার হয় ১৮ থেকে ৩৪ বছরের নারীরা ( ৫৪ ভাগ ) । বিশ্বের ১০ টা ধর্ষণ প্রধান দেশের মধ্যে আমেরিকার নাম সবার উপরে ।

ভারতে প্রতি ২২ মিনিটে একটা করে রেইপ হয় । সেখানে ২৪ হাজার ৪৭০ টি কেস শনাক্ত করা হয়েছে যেখানে ভিক্টিম তার পরিবারের সদস্য যেমন পিতা ,ভাই , কাজিন , দাদা , অথবা পরিচিত কারো দ্বারা নির্যাতনের শিকার 

ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে সুইডেনে রেইপের হার সব থেকে বেশি । সুইডেনে বিগত ১০ বছরে রেপের ঘটনা বেড়েছে ৫৮ ভাগের মতো । এই লিস্টে ইংল্যান্ডের অবস্থান ৫ নম্বরে । শুধু ইংল্যান্ডেই প্রতি বছর রেইপ হয় ৮৫ হাজারের মতো । পুরো ইউনাইটেড কিংডমে এই সংখ্যা ৪ লাখেরও বেশি।

কানাডাতে মাত্র ৬ ভাগ রেইপ কেস পুলিশের খাতায় আসে । বাকিগুলো আসে না । ভিক্টিমদের অবস্থা এতোই করুন যে তাঁদের বেশিরভাগই ফিজিক্যালি অক্ষম হয়ে যায় ।

জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে শ্রীলঙ্কাতে গ্যাং রেইপ বেশি হয় । ৬৪ ভাগ রেপিস্ট জীবনে একাধিকবার রেইপ করে থাকে । ফ্রান্স এবং জার্মানী প্রযুক্তির দিক দিয়ে এগিয়ে গেলেও রেইপের ক্ষেত্রে আরো বেশি এগিয়েছে । ফ্রান্সে প্রতিবছর ৭৫ হাজার রেইপ হয় । কেস ফাইল হয় মাত্র ১০ ভাগ ক্ষেত্রে । জার্মানিতে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ মহিলা রেইপের কারনে মারা গেছে । ইথিওপিয়ার মতো দেশে ৬০ ভাগ মহিলা রেইপের শিকার !

অনেকে মনে করে পতিতাবৃত্তি বৈধ করলে ধর্ষণ কমে যবে।

জার্মানিতে প্রতি ১০ হাজার মেয়ের মধ্যে ৪৯ জন সেক্স ওয়ার্কার হিসাবে কাজ করে। আমেরিকাতে শুধু বেশ কয়েকটা প্রদেশেই আছে যেখানে প্রস্টিটিউট বিজনেস বৈধ । উদাহরন নেভাদা । ভারতে পতিতাবৃত্তি কাগজে কলমে অবৈধ। অথচ এটার ব্যাপ্তি পুরো ভারত জুড়েই । শুধু মুম্বাই শহরেই প্রায় ১ লাখের উপর সেক্স ওয়ার্কার আছে । মুম্বাই হচ্ছে এশিয়ার সব থেকে বড় সেক্স বাজার । কলকাতা শহরে ১১ টি রেড লাইট স্পট আছে । পুরো শহরে কাজ করে ২০ হাজার সেক্স ওয়ার্কার ।

বাংলাদেশে ফিরে আসুন । ঢাকা শহরের ফার্মগেট ,সংসদ ভবন এলাকা , কাকরাইল সহ বিভিন্ন জায়গাগুলো মিডল ক্লাস লেভেলের পতিতাদের জন্য প্রসিদ্ধ । এতো উপকরন থাকার পরেও বাংলাদেশে রেইপ হয়। নৈতিকতা স্খলনের জন্য আমরা যদি প্রচুর প্রমান ব্রোথেলও করে দিই এরপরেও কিন্তু রেইপ কমবে না । নীল ছবির বিজনেস সব থেকে বেশি হয় আমেরিকা , চীন এবং ফিলিপাইনে । থাইল্যান্ডের রাস্তায় রাস্তায় এইসবের জন্য বিজ্ঞাপন দেখা যায় ।

এতো কিছুর পরেও সেই দেশগুলোতে কিন্তু ধর্ষণের হার অনেক বেশী। অর্থাৎ পাবলিক টয়লেটের মতো পাবলিক ব্রোথেল বা পতিতালয় করে দিলে লোকে সেখানে গিয়ে প্রয়োজন মিটিয়ে এসে আবার রেইপ করবে না ,এই কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না ।

অর্থাৎ ব্রোথেল থাকলে রেইপ কমে — এই ধারনাটাই ভুল। আমি যখন লজিকগুলা নিয়ে কাজ করতে শুরু করলাম তখন সামগ্রিক বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিলাম ,রেইপ আচমকা উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন বিপর্যয় নয়। ধীরে ধীরে বিস্তারশীল কুশিক্ষা, সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার, নীতি-নৈতিকতা অবক্ষয়, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি উদাসীনতা, আইনের দূর্বলতার কারনে সামাজিক অবস্থা করুন পরিণতির দিকে ধবিত হচ্ছে। উপায় হচ্ছে, সুশিক্ষা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা ও আইনগতভাবে কঠোর শাস্তিই হতে পারে পরিত্রাণের উপায়। কঠোর শাস্তি বলতে বুঝাচ্ছি ক্যাপিটাল পানিশম্যেন্ট বা মৃত্যুদন্ড। এইক্ষেত্রে অপরাধীদের প্রতি মানবিকতা বা শৈথিল্যতা কোন সুযোগ নেই।

   এম.এ.এস. ইমন ,                                                                                                                                                                                                                                                                               সমাজকর্মী।