আতুড়ঘরেও চড়া সবজির দাম!

সারাদেশে সবজির চাহিদা যোগান দেওয়ার অন্যতম উৎস স্থল মেহেরপুর। মেহেরপুরের চাহিদা মেটানোর পর প্রতিদিনই প্রায় ২০ থেকে ২৫ ট্রাক সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। অথচ সেই মেহেরপুরেও সবজির দাম অসহনীয় ভাবে বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দামও। বাড়ছে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের।
রবিবার মেহেরপুর শহরের বড় বাজার ও হোটেল বাজার সবজি মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রচুর সবজির আমদানি রয়েছে। নিয়মিত আসতে শুরু করেছে আগাম লাগানো শীতকালীন শাকসবজি। তবুও সকল প্রকার সবজির দাম চড়া। তবে শীতের শাকসবজি ওঠার পরপরই শাক সবজির দাম নিম্নমুখী হবে জানান অনেকেই বাজারে কেবল আলু, পেঁপে এবং কচুর দাম আগের মতোই রয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচ ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহ কাঁচামরিচের বাজার ছিল ১শ টাকার নিচে। এদিকে বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ কে অনুসরণ করে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য বছরে বর্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাঁচামরিচের বাজার ওঠা নামা করলেও, বর্তমানে কাঁচামরিচের দাম উঠা নামার কোন সম্পর্কই নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লালশাক, পুইশাক, সবুজ ডাটাশাক পাইকারী বিক্রি ১০-১৫ টাকা, খুচরা ২০-২৫ টাকা। করোলা পাইকারী ১৮-২০ টাকা, খুচরা ২৫-৩০ টাকা। বাধাকপি পাইকারী ৩৪-৩৫ টাকা, খচরা ৪৫-৫০ টাকা। বেগুন পাইকারী ৩৪-৩৫ টাকা, খুচরা ৪০-৪৫ টাকা। শিম পাইকারী ৬৭ টাকা, খুচরা ৮০-৮৫ টাকা। ফুলকপি পাইকারী ৫৫-৬০ টাকা, খুচরা ৭০-৭৫ টাকা। রসুন পাইকারী ২৮-৩০ টাকা, খুচরা ৪০-৪৫ টাকা। পালংশাক পাইকারী ৪২-৪৪, খুচরা ৫৫-৬০ টাকা। রসুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, আলু ১৬ টাকা, বেগুন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কচু ১৫ টাকা, বাজারে আসা নতুন বাঁধাকপি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ফুলকপি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, কলা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, পটল ৩৫-৪০ টাকা, ওল ৩৫ টাকা ,ঢেঁড়স ৩৫ টাকা, শিম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, লালশাক ২৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, লাউ ৩০ টাকা পিচ, কুমড়া ৩০ টাকা পিচ, পেঁপে ১৫-২০ টাকা কেজি, করোল্লা ৪০ টাকা ,আদা ১০০ টাকা ,খিরা ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। আগাম লাগানো শীতকালীন শাকসবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও অধিকাংশ সবজির দাম চড়া। প্রতি সপ্তাহে দামের ঊর্ধ্বগতিতে বেশ হতাশা প্রকাশ করেছে ক্রেতারা। তবে শীতের শাকসবজি ওঠার পরপরই শাক সবজির দাম নিম্নমুখী হবে।
শহরের মল্লিকপাড়া থেকে আসা ক্রেতা জামান হোসেন জানান, মুরগিসহ সবকিছুর দাম বেশি। এতদাম দিয়ে কীভাবে বাজার করবো। মাসের বাজার করতে আসি এখানে। এখন সপ্তাহের বাজার করারও টাকা থাকে না।
কাউসার হোসেন নামের মাঝবয়সী এক ক্রেতা বলেন, প্রত্যেকটি সবজির দামই বেড়েছে। আগে ১শ থেকে ২শ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারলেও এখন আর এই টাকায় ব্যাগ ভর্তি হয়না কেনা যায় না। আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে।
মেহেরপুর বড় বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রাশেদ আহমেদ বলেন, মেহেরপুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবজি উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু ১০০ভাগের মধ্যে ৮০ ভাগই মেহেরপুরের বাইরে চলে যাচ্ছে সেই জন্য বর্তমানে সবজির দাম একটু বেশি। নতুন জাতের কিছু সবজি বাজারে ওঠায় এসকল সবজির দাম একটু বেশি। এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে সব সবজি বাজারে আসছে না। সেই কারণে আড়তদারের কাছ থেকে আমাদেরকে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তবে এই ঝামেলাটা বেশিদিন থাকবে না ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সবজির দাম আবার কমে যাবে
হোটেল বাজারের বাজারের খুচরা বিক্রেতা মনিরুর ইসলাম বলেন, যেকোনো সবজি বাজারে নতুন নামলে দাম কিছুটা বেশি থাকে। এ ছাড়া এসব সবজি সংগ্রহ করতেও ব্যাপারীদের খরচ বেশি হয়। তাই দাম কিছুটা চড়া।
মেহেরপুর তহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোঃ আবু হানিফ বলেন, বর্ষার কারণে এবার অনেক ফসল নামলা (পরে) হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে বাইরের চাপ মেহেরপুরের থেকে অনেক বেশি। বর্তমানে বাজারে বাইরের ক্রেতাদের সংখ্যাও অনেক বেশি। বর্তমানে ক্রেতারা সরাসরি মাঠ থেকেও মাল কিনে ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, কৃষি বিভাগের কাজ হচ্ছে কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। উৎপাদনে আমরা সফল হয়েছি। আমার চাষি তার উৎপাদিত ফসলের মূল্য পাচ্ছে। সবজির যে উচ্চমূল্য তা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। সে কারণে আমাদের এলাকার সবজির টান পড়েছে। বর্তমানে আমাদের এখানে বাইরের ক্রেতাদের আগমন অনেক বেশি। তারা এখানকার বাজার থেকে আবার সরাসরি মাঠ থেকে সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, এবছর সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে এবং ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তবে বাজার ব্যবস্থাপনার সুষ্ট বন্টন করতে পারলে সবজিসহ সকল পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।