আবেগঘন বিদায় বেলায় অশ্রুসিক্ত ভেড়ামারার ইউএনও

চোখে ছিলো পানি, তবুও স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে সহকর্মি ও উপজেলার সকলের কাছ থেকে বিদায় নিলেন ইউএনও সোহেল মারুফ।

মঙ্গলবার দুপুরে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র বাসভবন থেকে বিদায়বেলায় দেখা গেলো এমন হৃদয় বিদারক চিত্র।

বিদায়কালে ইউএনও সোহেল মারুফ বলেন, ভালো থাকুক,ভেড়ামারা উপজেলার প্রতিটি মানুষ। আমার কর্মজীবনে সেরা সঞ্চয় পেয়েছি আপনাদের ভালোবাসা। সরকারি চাকুরিজীবী হিসেবে বদলিজনিত কারণে কোনো জেলায় বা উপজেলায় স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। উপজেলায় কর্মরত অবস্থায় সহকর্মী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অনেক রকমের সহয়তা আমি পেয়েছি। কাজ আদায় করার জন্য হয়তো কারো বিরাগভাজন হয়েছি। অনেক সময় ইতিবাচক আবার কখনো নেতিবাচকভাবে মানুষকে উপস্থাপন করা হয়। খোলা চোখ দিয়ে সবকিছু দেখা যায় না। চোখের আড়ালেও অনেক কিছু থাকে। তবে নিজের অজান্তেও যদি কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, কারো প্রতি অন্যায় করে থাকি তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

বিদায়বেলায় উপস্থিত বেশির ভাগের চোখেই ছিলো জল। আবেগ থামাতে না পেরে কেঁদে ফেলেন অনেকেই। তৈরি হয় এক আবেগঘন পরিবেশ।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভেড়ামারার ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন সোহেল মারুফ। এর আগেও তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৩০ তম বিসিএস ক্যাডারের এ করিৎকর্মা কর্মকর্তা কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে মাঠপ্রশাসনে যোগদান করেন। পদোন্নতী পেয়ে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পরবর্তী কর্মস্থলে যোগদান করবেন তিনি।

বলা যায় কিন্তু, তিনি কখনো সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেননি। তিনি সকলকে নিজের আপন মানুষ ভেবে কাজ করেছেনে এবং সেটা সবার চোখেও পড়েছে। দীর্ঘ এই সময়ে কেবল প্রশংসিত হয়েছেন তা নয়, কখনও সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। তবুও মানবতার ক্ষেত্রে চুল পরিমান ঘাটতি রাখেননি মমতাময়ি এই ইউএনও। এরআগে উপজেলার সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা ফুল ও ক্রেষ্ট দিয়ে বিদায় সংবর্ধনা জানান সোহেল মারুফকে।

তামিম নামের এক উদীয়মান তরুণ ইউএনওর বিদায় উপলক্ষে ফেসবুকে লেখেন, সরকারি রুটিন ওয়ার্কে থেকেও সাধারণের মন জয় করা একজন মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হচ্ছেন ভেড়ামারার বিদায়ী ইউএনও জনাব মোঃ সোহেল মারুফ। যোগদান করার পর থেকেই সরকারি সেবা সর্বসাধারণের দুয়ারে পৌছিয়ে দিতে নিজেকে নিবেদন করেছেন। গত সাড়ে তিন বছরে তিনি তার কর্মের দ্বারা ভেড়ামারার সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছেন। বিশেষ করে করোনা মহামারির ভীতিকর পরিস্তিতিতেও তিনি উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত ছুটে গেছেন সরকারি সাহায্য নিয়ে। বাড়িয়ে দিয়েছেন মানুষের প্রতি মানবিকতার হাত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দরজা সত্যিকার অর্থেই উন্মুক্ত ছিলো সকলের জন্য। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি একজন সজ্জন, পরোপকারি ব্যক্তি হিসেবে অল্প সময়ে পেয়েছেন পরিচিতি। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়িসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করেছেন। ঘুর্ণিঝড়, বন্যা সহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন।
অনাবিল, সুখ-শান্তিতে সমৃদ্ধ হোক আপনার পারিবারিক জীবন, আপনি দীর্ঘজীবী হোন, সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধিতে পৌঁছে যান কাঙ্খিত গন্তব্যে, এই আমার আন্তরিক চাওয়া।
ভালো থাকবেন ভালোবাসার প্রিয় স্যার,,,,, কখনো আপনার ভালোবাসা, স্নেহ ভুলবোনা।