শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি জাতির মেরুদণ্ড, আর সেখানে যদি দুর্নীতির বিষবাষ্প ছড়ায়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
সম্প্রতি মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিনয় কুমার চাকী, স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফা শান্তি ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান আখিতারা খাতুনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে-যা দেশের শিক্ষা খাতের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার ওপর এক গুরুতর আঘাত।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আখিতারা খাতুন একটি ভুয়া ডিপ্লোমা সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন এবং দীর্ঘ চার বছর যাবৎ সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় ৮.৮২ লাখ টাকা বেতন নেন। শুধু তাই নয়, এই জালিয়াতিকে বাস্তবায়নে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা এবং স্কুল কমিটির সভাপতি সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেন। এমন কর্মকাণ্ড কেবল আইনের লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের মাঝে অনৈতিকতা, মিথ্যাচার ও প্রতারণার এক ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, কিছু ব্যক্তি তাদের অবস্থান ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুরো একটি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস করেছে। যেখানে শিক্ষকরা আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতীক, সেখানে এমন লজ্জাজনক ঘটনা শিক্ষক নামধারী ব্যক্তিদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে দেয়। আরও দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন বা শিক্ষা দপ্তর এতদিন এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো নজরদারি করতে পারেনি, যার ফলে একটি জাল সনদধারী ব্যক্তি বছরের পর বছর বেতন তুলেছেন।
আমরা ধন্যবাদ জানাই দুর্নীতি দমন কমিশনকে, যারা তদন্ত করে যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতে মামলাটি দায়ের করেছে এবং সত্য উদঘাটনের পথে এগিয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন আইনানুগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, শিক্ষা খাতের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল যাচাই-বাছাই, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো জরুরি।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় সাধারণ জনগণ, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদেরও সচেতন হওয়া উচিত। দুর্নীতি বা অনিয়মের খবর জানলে নির্ভয়ে অভিযোগ জানানো এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করা সামাজিক দায়িত্ব।
শেষ কথা হলো, শিক্ষার মতো পবিত্র অঙ্গনে যারা দুর্নীতি ছড়ায়, তাদের কোনো রকম সহানুভূতির সুযোগ নেই। একজন ভুয়া ডিগ্রিধারী শিক্ষক যেমন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে পারে, তেমনি তাকে সহযোগিতা করা ব্যক্তিরাও সেই অপরাধে সমান অংশীদার। এই ধরনের অনৈতিকতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিই হোক আমাদের অঙ্গীকার।