চেতনার ফেরিওয়ালা

সংসার চালাতে নয়,স্বাধীন দেশের স্বাধীন পতাকা বিক্রি করি দেশকে ভালবেসে। পতাকাকে ভাল বেসে। পতাকার বহর ঘাঁড়ে থাকে তাই সকলেই ডাকে এই পতাকাওয়ালা। তখন গর্ব হয় আমি স্বাধীন দেশের সন্তান তাই আমি এক পতাকাওয়ালা।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে পারিনি ঠিকই মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। জীবনের বিনিময়ে যারা এ দেশটাকে স্বাধীন করেছে,যাদের লাল রক্তে বাংলার জমিন লালে লাল হয়েছে, তাদের সম্মানেই পিঠে করে বয়ে বেড়াই লাল সুবুজের পতাকা। ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা বিক্রি করতে আসা তিন পতাকা বিক্রেতার মধ্যেকার পতাকা বিক্রেতা মাদারি পুরের লাবলু মিয়ার সাথে আলাপ কালে কথাগুলো বলেন।

জানাযায়, লাবলু মিয়া (৪৫) মাদারিপুর জেলার শিবচর উপজেলার নিলুখি ইউনিয়নের চর কামার কান্দি গ্রামের তারা মিয়া মাতব্বরের ছেলে। তার এক ছেলে, দুই মেয়ে । বড় মেয়ে ঢাকা বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী। মেহেরপুর জেলায় গাংনী বাজারে পতাকা বিক্রি করতে আসা লাবলু মিয়ার সাথে কথা হয় প্রতিবেদক অকতারুজ্জামানের ।

তিনি জানান, বছরে তিন টি বিশেষ দিনে পতাকা বিক্রি করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস , ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ তিন দিন স্বাধীন বাঙ্গালীর কাছে বেড়ে যায় লাল সবুজের পতাকার কদর। দেশের মাদারিপুর জেলায় পতাকা তৈরী করেন কারিগররা।

সেখান থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ পতাকা বিক্রির জন্য পতাকা কাঁধে নিয়ে ছুটে চলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রায় পাঁচ রকম সাইজের পতাকা বেচা কেনা হয়। তার মধ্যে ৫ ফুট সাইজের পতাকার সম্মানী (মুল্য) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। সাড়ে ৩ ফুট সাইজের পতাকা ৮০ থেকে ৯০ টাকা,আড়াই ফুট সাইজের পতাকা ৪০ থেকে ৫০ টাকা,দেড় ফুট সাইজের ২০ থেকে ২৫ টাকা ও ১ ফুট সাইজের পতাকা বিক্রি হয় ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এছাড়াও শিশু কিশোরদের হাত পতাকা ১০ টাকায় বিক্রি করে থাকেন। পতাকার বহর কাঁধে দেখা মেলে আর এক পতাকা বিক্রেতার সাথে।

তার বাড়িও মাদারিপুর জেলায়। তিনি ১৬ বছর পতাকা বিক্রিতে নিয়োজিত। গত ৮ ডিসেম্বর পতাকা নিয়ে বের হয়েছেন বাড়ি থেকে। শহর থেকে গ্রামেও বিক্রি করছেন পতাকা। শিশু কিশোরদের হাতে পতাকা তুলে দিয়ে জানানো হচ্ছে স্বাধীনতার গৌরবউজ্জল ইতিহাস। তাদের কে প্রশ্ন করেন অনেক কিশোর ।

পতাকার রং ও নির্মাণ কৌশল নিয়েও প্রশ্ন করা হলে নতুন প্রজন্মকে জানায় পতাকার মাহত্ব্য। বছরে তিনবার পতাকা বিক্রি করে লাভ হয় প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একেকজন পতাকা বিক্রেতার পতাকা বিক্রি ছাড়াও আরো পেশা আছে। তবে সময় হলেই বেরিয়ে পড়েন পতাকা বিক্রির কাজে। বিক্রেতা সুমন জানায়, আমাদের অন্য পেশা থাকলেও পতাকার টানে ছুটে চলা গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। পয়সা রোজগার নয়, পতাকার বহর কাঁধে নেবার মজাটায় আলাদা। পতাকা বিক্রি করি বলে সকলে ডাকে এই পতাকা ওয়ালা।

তখন অনেক গর্ব হয় আমি এক পতাকাওয়ালা। গাংনী বাজারের পতাকা ক্রয় করতে আসা সেন্টু জানায়, দামটা মুখ্য নয়,হাতের নাগালে পতাকা পাওয়াটাই খুব ভাল লাগছে। ১৬ ডিসেম্বর বাচ্চাদের হাতে পতাকা তুলে দেব বলেই পতাকা সংগ্রহ করে রাখলাম। পতাকা হাতে নিয়ে আমার ছেলে যাবে বিজয় দিবসের বিজয় র‌্যালীতৈ।

-আকতারুজ্জামান. গাংনী