আরেক মুনিয়া কি শৈলকুপার রমা রানী বিশ্বাস ?

শৈলকুপায় আরেক মুনিয়ায় করুন পরিণতি ঘটেছে। প্রেমিকের কাছ থেকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও অবৈধ সম্পর্ক ফাঁস হওয়ায় আত্মহত্যা করেন ১৭ বছরের কিশোরী রমা রানী। লম্পট প্রেমিকের বিচারের দাবীতে গ্রামজুড়ে ক্ষোভে ফুসছে মানুষ।

ঘটনাটি ঘটেছে জেলার শৈলকুপা উপজেলার ত্রীবেনি গ্রামে। এদিকে আদালতের নির্দেশে রমা রানীর আত্মহত্যার বিষয়টি তদন্ত করতে শৈলকুপা থানা পুলিশ মাঠে নেমেছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ত্রীবেনী গ্রামের রমেন বিশ্বাসের মেয়ে রমা রানী শেখপাড়া বাজারে কম্পিউটার শিখতে যেতো নরেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে জিৎ বিশ্বাসের কাছে। তাদের দুইজনের বাড়ি একই গ্রামে। স্কুল জীবন থেকেই তাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক। এক সময় গভীর সম্পর্ক তৈরী হয় জিৎ ও রমার মধ্যে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দিয়ে রমার সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলে লম্পট জিৎ।

ত্রীবেনী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর সাহেব আলীর ভাষ্যমতে অবৈধ মেলামেশায় সম্ভবত গর্ভবতী হয়ে পড়ে রমা। জিৎকে বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিলে সে অস্বীকার করে। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে গেলে উল্টো জিৎ বিশ্বাসের বড় ভাই বিপুল বিশ্বাস রমার পারিবারকে গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে গর্ভে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যাৎ, পারিবারিক ও সামাজিক চাপে বিষন্ন হয়ে পড়ে কিশোরী রমা রানী।

গত ৯ মার্চ রমা রানী বিষপানে আত্মহত্যা করে। রমার আত্মহত্যা ও আদালতে মামলা দায়েরের পর বিষয়টি নিয়ে গ্রামে শোরগোল শুরু হয়। ফাঁস হয়ে পড়ে দুই জনের গভীর প্রেমের সম্পর্ক। জিৎ ও রমার পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ। প্রভাব আর প্রতিপত্তিকে কাজে লাগিয়ে লম্পট জিৎ পার পেয়ে যেতে থাকে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ত্রীবেনি গ্রামের কতিপয় মাতুব্বররা। কারণ রমা রানীর পিতা একেবারেই হতদরিদ্র। তাদের থাকার মতো ঘরও নেই। এদিকে বিচারের আশ্বাসে দিনক্ষন গুনতে থাকেন রমার পিতা রমেন বিশ্বাস। নিরুপায় হয়ে আদালতের শ্মরনাপন্ন হন রমেন।

গত ১৫ মে ঝিনাইদহের একটি আদালতে মামলা করেন তিনি। মামলা করার পরই রমা গর্ভবতী হয়ে পড়ার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ে। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনাটি। মামলার পর মিডিয়া কর্মীদের নজরে আসে বিষয়টি।

রমা রানীর মা শোভা রানী জানান, কিশোরী রমা রাণী আমার ছেলের মতো ছিল। সংসারের সব কাজ এমনকি সে মাঠের কাজ পর্যন্ত সে করতো। তিনি অভিযোগ করেন, জিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে তার মেয়ের শত শত এসএমএস মোবাইলে রয়েছে। সেগুলো যচাই বাছাই করলেই সব ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবে। তার মেয়ে অবৈধ মেলামেশায় গর্ভবতী হয়ে পড়েছিলেন এমন কথা তিনি স্বীকার করে শোভা রানী বলেন, সমাজে যা রটে, তা কিছু না কিছ বটে। জিৎ বিশ্বাসের বিয়ের আশ্বাসে তার মেয়ে এমন ভুল পথে পা বাড়িয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি তার মেয়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে জিৎ বিশ্বাসের বিচার দাবী করেন।

মেয়ের পিতা রমেন বিশ্বাস অভিযোগ করেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর পর পোষ্টমর্টেম করেছে জিৎ এর বড় ভাই বিপুল বিশ্বাস। পুলিশকে ম্যানেজ করে আমাদের লাশের কাছেই যেতে দেয়নি। এমনকি আড়াই মাসে যতবার পুলিশ গ্রামে এসেছে আমাদের বাড়িতে আসেনি, গেছে আসামীদের বাড়িতে। আমাদের কোন বক্তব্য নেয়নি। তিনি বলেন আসামীর ভাগ্নে রিপন আমাদের ভারতে চলে যাওয়ার হুমকী দিচ্ছেন। তিনি আসামী জিৎ ও তার ভাই বিপুলের গ্রেফতার দাবী করেছেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাহেব আলী অভিযোগ করেন কম্পিউটার প্রশিক্ষনের আড়ালে জিৎ বিশ্বাস অশ্লিল কর্মকান্ড চালায়। বহু মেয়ে তার নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই পরিবারের অপকর্মের জন্য এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে শৈলকূপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার বিকালে জানান, বৃহস্পতিবার কিশোরী রমার পিতার দায়ের করা মামলার আদেশ থানায় এসেছে। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। তিনি বলেন শৈলকুপা থানার সেকেন্ড অফিসার মামলাটি তদন্ত করে যথা সময়ে আদালতে প্রতিবেদন দিবেন।