আর্জেন্টিনার অপেক্ষার শেষ নাকি ফ্রান্সের ইতিহাস?

৩৬ বছরের অপেক্ষা আরাধ্য এক শিরোপার জন্য। অবশেষে কি ফুরোতে চলেছে সেই অপেক্ষা? আট বছর আগে খুব কাছে গিয়েও ফিরতে হয়েছে আক্ষেপ সঙ্গী করেই, আজ আবারও বিশ্বকাপের শিরোপা লড়াইয়ে আরেকটি ফাইনালে মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের মাটিতে স্বপ্নভঙ্গের বেদনার কারণ ছিলো জার্মানি, আজ প্রতিপক্ষ আরও এক ইউরোপীয়ান দেশ ফ্রান্স।

ফ্রান্সের সামনেও টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের হাতছানি, রাশিয়ার পর কাতারের মাটিতে এসেও বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেছে লেস ব্লুজরা। টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পথে ফ্রান্সের বাধা এখন শুধু আর্জেন্টিনা। তবে ৩৬ বছরের শিরোপার আক্ষেপ ঘোচাতে ফাইনালের মঞ্চে ফরাসিদেরও ছেড়ে কথা বলবে না লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে আজ রাতে বিশ্ব শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আর দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের পর এক আসর বাদে আলবিসেলেস্তারা আবারও উঠেছে বিশ্বকাপের শিরোপা লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় মঞ্চে। আট বছরে আগের আক্ষেপ মেটাতে এবার প্রাণপণ চেষ্টা চালাবে মেসি বাহিনীও।

৩৬ বছরের আক্ষেপ মিটিয়ে বিশ্বকাপ জেতার অন্যতম দাবিদার হয়েই কাতারের মাটিতে পা রেখেছিলো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তবে প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারে শিরোপা স্বপ্নে বড় এক ধাক্কা খায় আলবিসেলেস্তারা। সেই এক ধাক্কাতেই যেন ভোজবাজির মতো পাল্টে গেলো আর্জেন্টিনা। ওই এক হারের পরই বাকী সবগুলো ম্যাচে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালেও উঠে গেছে আর্জেন্টাইনরা। গ্রুপ পর্বের পরের দুই ম্যাচ থেকে নক-আউট হয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল বা সেমিফাইনাল, আর্জেন্টিনা ছিলো অপ্রতিরোধ্য।

ঠিক যেন স্বপ্নের মতো এক বিশ্বকাপ পার করেই ফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা, আর তার মূল কারিগর অধিনায়ক লিওনেল মেসি। প্রতিটি ম্যাচে মেসির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই যেন গড়ে দিচ্ছে ম্যাচের ফল। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ, মেসি খেলছেনও যেন জানপ্রাণ দিয়েই। ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসেও যেন সেই চিরতরুণ মেসিকেই মনে করিয়ে দিচ্ছে আর্জেন্টাইন মহাতারকার মাঠের পারফরম্যান্স।

এদিকে, বিশ্বকাপের আগ থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের জন্য অন্যতম ফেভারিট ধরা হচ্ছিলো ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। গ্রুপ পর্বে টানা দুই ম্যাচ জিতে নক-আউট নিশ্চিতও করে ফেভারিটের মতোই। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে দলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে গিয়ে তিউনিসিয়ার কাছে হেরে বসে দিদিয়ের দ্যেশমের শিষ্যরা।

গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হারলেও নক-আউট থেকে সেমিফাইনালে আবারও দেখা পাওয়া যায় অপ্রতিরোধ্য ফ্রান্সের। নিজেদের কাছে বিশ্বকাপের শিরোপা ধরে রাখতে প্রতি ম্যাচেই গতিময় আর দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দিয়ে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে এসেছে ফ্রান্স।

ফরাসিদের সামনে এখন ইতিহাসের হাতছানি। ইতালি আর ব্রাজিলের পর তৃতীয় দল হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার সামনে দাঁড়িয়ে ফরাসিরা। ১৯৩৪ আর ১৯৩৮ সালে টানা দুই বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিলো ইতালি। এরপর ১৯৫৮ আর ১৯৬২ সালে সেই কৃতিত্বের পুনারবৃত্তি ঘটায় পেলের ব্রাজিল। আবার ফ্রান্সের সামনে সুযোগ টানা দুই বিশ্বকাপ জয়ের সেই কৃতিত্বে নিজেদের নাম লেখানো।

আর্জেন্টাইনরা কি পারবে ৩৬ বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি টানতে নাকি টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জিতে ইতালি আর ব্রাজিলের পাশে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবে ফ্রান্স? এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আজ লুসাইলের ঐতিহাসিক ফাইনালে।