আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অংশিদার হতে চায় গাংনীর সন্ধানী সংস্থা

বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষ পূর্তিতে গাংনীর সন্ধানী সংস্থা এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নকে আরও বেগবান করে এলাকার জনগোষ্ঠির ইতিবাচক পরিবর্তন ও উন্নত জীবন যাপনে সহায়তা করবে।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় সংস্থাটির খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠন সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজে একটি “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার” স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে লেখা ও মুক্তিযুদ্ধ’র ইতিহাস নিয়ে অনেক বই। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে মনে করেন সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: হাবিবুর রহমান।

তিনি বলেন, এ বছর থেকেই শুরু হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শত বার্ষিকী পালনের ক্ষণ গণনা এবং জন্মশতবার্ষিকীতে বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন এক লক্ষ্যে পৌছবে। তেমনই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শুধু নয় সন্ধানী সংস্থার প্রতিটি শাখায় এ এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও বড় ধরণের ভুমিকা পালন করে আসছে এমনটিই মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো: হাবিবুর রহমান।

এই এলাকার পিছিয়ে পড় জনগোষ্ঠির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থ-সামাজিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভুমিকা রেখে চলেছে সন্ধানী সংস্থা। সন্ধানী সংস্থা জাপানি সাহায্য পুষ্ট একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নিভিৃত পল্লী করমদি পূর্ব পাড়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রকল্প শুরু করে ১৯৮৮ সালে। এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিদ্যালয়ে একটি দোতালা ভবন নির্মান করা হয়।

সন্ধানী সংস্থার মাধ্যমে এলাকায় সার্বিক উন্নয়নে যিনি নিঃশ্বার্থভাবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি করমদি গ্রামেরই কৃতি সন্তান মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জাপান প্রবাসি ড. মো: মখলেছুর রহমান।
তিনি জাপান ইউনিভার্সিটি অব ইকোনোমিক্স জাপান এ প্রফেসর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। মুলত এই কৃতি সন্তানের কারণে বর্তমানে এ এলাকায় সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিবছরই যে কোন পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে জেলার সেরা ফলাফল বয়ে আনতে স্বক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

সন্ধানী সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের দু’বছর পর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান শুরু করে। যাতে করে পিছিয়ে পড়া গ্রামটি শিক্ষায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আগ্রহী হয়ে সমাজে আলো ছড়াতে পারে। সংস্থাটি শিক্ষার পাশাপাশি নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে ১৯৯২ সালে সেলাই প্রশিক্ষণ শুরু করে। প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী আজ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

সন্ধানী সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মো: মখলেছুর রহমান জাপানে কর্ম ব্যাস্ত জীবন অতিবাহিত করলেও তাঁর মন পড়ে থাকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ভাবনায়। তিনি শিক্ষার পাশা পাশি এলাকার মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিতে এ উপজেলার করমদি গ্রামে এস এস (সন্ধানী সংস্থা) হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নিভৃত পল্লীর মানুষকে সাধারণ চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হতো স্থানীয় হাতুড়ি চিকিৎসকদের কাছে। তারা ব্যার্থ হলে আসতে হতো রোগীদের ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ১৯৯৪ সালে ঐ গ্রামে সন্ধানী সংস্থার এস এস হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে ঐ এলাকার মানুষকে আর গাংনীতে আসতে হয়না আবার হাতুড়ি চিকিৎসকের হাত থেকেও রেহায় পেয়েছেন এলাকার মানুষ।

গাংনী উপজেলার নিভৃত পল্লীতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারী উন্নয়ন কর্মসুচি চালু করে গ্রামে সাধারণ মানুষকে আলোর পথ দেখিয়ে নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে ভুমিকা রাখার পর সন্ধানী সংস্থা তার পরিসর বড় করে শহর এলাকায় যাতে গোটা উপজেলার মানুষ উপকৃত হতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৯ সালে সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ চালু করে গাংনী মহিলা কলেজ রোডে যা বর্তমানে পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের অন্তভূক্ত। সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ চালু হওয়ার পর থেকে উপজেলায় শিক্ষায় এক নতুন দিগন্ত শুরু হয়। সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি থেকে শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে তারা লেখ পড়া শেষ করে বর্তমানে অনেকে নিজ নিজ পেশায় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে অনেকে দেশ বিদেশে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ম্যজিষ্ট্রেট কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছাড়াও সফলতার সাথে অনেক পেশায় নিয়োজিত আছেন।

সন্ধানী সংস্থা মুলোত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’র উন্নয়নকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কারণ শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদন্ড তেমন সুস্বাস্থ্য ছাড়া একটি শিক্ষিত কর্মক্ষম জাতি আশা করা সম্ভব নয়। তাই এ সংস্থাটি ২০০২ সালে পুষ্টি ও পূনর্বাসন প্রকল্প চালু করে। এই প্রকল্পের আওতায় বিনামুল্যে হত দরিদ্রদের মাঝে গাভি গরু দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য গাভি গরুর বাছুর হওয়ার পর থেকে যে দুধ পাওয়া যাবে সেখান থেকে পুষ্টি পাবে হতদরিদ্র মানুষ জন ও গাভী থেকে যে বাছুর হবে প্রথম বাছুরটি বাদে পরবর্তিতে ঐ গাভি থেকে যা আসবে সবই ঐ হতদরিদ্র পরিবারটি ভোগ করবে। এভাবেই সন্ধানী সংস্থা এলাকার হত দরিদ্র মানুষের পুষ্টি ও পুনর্বাসনের কাজ করে আসছে। প্রায় ২’শ ৫৯টি পরিবারের মাঝে গাভি গরু প্রদান করেছে সন্ধানী সংস্থা।
এছাড়াও সন্ধানী সংস্থা পোভার্টি এলিভেশন, সন্ধানী ইনফরমেশন সেন্টার চালু করেছে অনেক আগেই।

এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে যোগ হয়েছে নার্সিং ইনস্টিটিউট। সন্ধানী নার্সিং ইনস্টিটিউট ২০১৬ সাল থেকে বেশ সফলতার সাথে কার্যক্রম চলছে। নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই সফলতার মুখ দেখছে। নার্সিং ইনস্টিটিউট খুব অল্প সময়ে যাত্র শুরু করলেও এখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে তারা কর্মসংস্থানে যোগ দিতে পারবে।

সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও উপজেলা দূর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মহাঃ আবু জাফর মনে করেন সমাজের সকল শ্রেণী পেশার জন সাধারণের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও আর্থ সামাজিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করবে। তিনি বলেন আমাদের সমাজের মানুষকে সচেতন করে উন্নত জীবন যাপন যাতে করতে পারে এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো: হাবিবুর রহমান বলেন, সন্ধানী সংস্থা আসলে সমাজে আলো ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ সন্ধানী স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিবছরই শিক্ষা ও সাংস্কৃতিতে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে আসছে। তিনি মনে করেন সন্ধানী সংস্থা এলাকার সকল শ্রেণী পেশার জনসাধারনের উন্নত জীবন যাপনে সহায়তা করবে।

অধ্যক্ষ মো: হাবিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সরকার যেমন কাজ করে যাচ্ছে তেমন আমরাও দেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে এ এলাকার আর্থ সামাজিক জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করে দেশের উন্নয়নে অংশিদার হতে চাই।