আলমডাঙ্গা উপজেলায় নকল সার ও কীটনাশকে বাজার ছেয়ে গেছে। কৃষকরা পড়েছে বিপাকে। আলমডাঙ্গা পৌরসভার অভ্যন্তরে প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে উঠেছে নকল সার ও কীটনাশক তৈরির কারখানা। বছরের পর বছর ধরে কৃষকদের প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
সরকারের কোন অনুমোদন ছাড়াই গোপনে নকল সার, কীটনাশক ও হরমোন তৈরি করে চলেছে পিসিআই এগ্রো নামে অনেক বেনামি কোম্পানি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মত দেশে এমন নকল কৃষিপণ্য বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষক। ফসলের মান ও ফলন কমে গেছে। গত সোমবার আলমডাঙ্গা পৌরসভার মাদ্রাসা পাড়ার নিমাই চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে অজয় কুমার বিশ্বাস নওদাবন্ডবিল গ্রামে এলাকায় একাধিক গোডাউনে অভিযান চালিয়ে নকল সার ও কীটনাশক এবং বিভিন্ন অনুমোদনবিহীন কৃষিপণ্য, রুটপ্লাস ৩ হাজার কেজি, পিসি আই এর চমক ১২ লিটারের ১২৫ কার্টুন, পিসি আই রুট ৬৮৪০ কেজি, জিংক ১৬৪০ কেজি, ছিলেটেড জিংক ৬৬ কেজি, ছলুবোর ১৭১ কেজি ও ৩০০ কেজি সহ আরও অনেক দ্রব্য উদ্ধার করে।
গতকাল বুধবার আলমডাঙ্গা আনন্দধাম এলাকার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে দুটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান কে মোট ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। গতকাল সকাল ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে মুদি দোকান, জ্বালানী গ্যাস ও সার-বীজ দোকান প্রভৃতি তদারকি করা হয়। এ সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ ম্যাগনেসিয়াম সার বিক্রয়ের জন্য বিসিআইসি সার ডিলার মো: আব্দুল বারীর প্রতিষ্ঠান মেসার্স সিরাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক সিরাজুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ, মানহীন ও নিন্মমানের শিশু খাদ্য বিক্রয়ের অপরাধে এই জরিমানা করা হয়। এছাড়াও মো: আব্দুর রহমানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফাতেমা স্টোরকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়।
কৃষি উৎপাদন ও কৃষিপণ্যের গুনগত মান বজায় না থাকলে কৃষকরা বড় ঝুঁকিতে পড়বে। দেশে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে। কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।কৃষকদের সাথে এই ভয়ানক প্রতারণায় তাদের শ্রম, সময়, অর্থ নষ্ট হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা পারভিন বলেন, কৃষি অফিসের অনুমোদন ছাড়াই এখানে সার ও কীটনাশক তৈরি, বাজারজাতকরণ এবং খোলা মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে। ইহা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। নকল সার ও কীটনাশক আমরা দ্রুত কৃষকদের হাতে পড়তে দেব না। অভি্যান পরিচালনা করে দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে কৃষকরা এই সব নকল সার প্রয়োগ করে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে। অনেক কৃষক চোখের জলে, আর্তনাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বেলগাছির কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এইসব নকল সার প্রয়োগ করে আমি ক্ষতিগ্রস্ত। এদের আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করে শাস্তির দাবি করছি।
কৃষকরা এই সব প্রতারণায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে, চাষ-আবাদে নিরুৎসাহিত হবে। দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে বলে সচেতন মহল থেকে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।