
আলমডাঙ্গায় মাদকের ছোবলে আক্রান্ত যুব সমাজ। প্রশাসনিক গাফিলতি, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় বিস্তার ঘটছে মরণ এই নেশার।
অপার সম্ভাবনাময় আলমডাঙ্গার যুব সমাজ আজ যেন নীরবে মুর্তিতে পরিণত হচ্ছে মাদকের এক ভয়ংকর অভয়ারণ্যে। মরণনেশার ছোবলে প্রতিদিনই দিকভ্রান্ত হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। স্কুল–কলেজপড়ুয়া থেকে শুরু করে কর্মক্ষম যুবক—কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই সর্বনাশা আসক্তি থেকে। পরিবার ভাঙছে, ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে, অথচ দেখার যেন কেউ নেই।
মাকড়সার জালের মতো সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চোখে পড়লেও তা অনেকটা দেখানো কার্যক্রমেই সীমাবদ্ধ—এমনটাই অভিযোগ সচেতন নাগরিকদের। পাশাপাশি মাদকাসক্ত ব্যক্তি আটক হলেও বড় বড় মাদক ব্যবসায়িরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।
এছাড়াও অধিকাংশ মাদক মামলাই শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে সাক্ষীর অভাবে। আবার যেসব ঘটনায় সাক্ষী পাওয়া যায়, তারা নিরাপত্তাহীনতা, হুমকি ও প্রভাবশালী মহলের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। ফলে গ্রেপ্তার হলেও অল্প সময়ের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে আসে মাদক কারবারিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রহস্যজনক নীরবতা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় অনীহা। এসব কারণে বারবার অভিযোগ উঠলেও কার্যকর ও টেকসই কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কিছু কিছু জায়গায় প্রকাশ্যে বিক্রি, প্রকাশ্যেই সেবন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গার স্টেশন মোড় ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বর্তমানে মাদক বিক্রির অন্যতম প্রধান হটস্পট হিসেবে পরিচিত। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে মরণনেশা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে।
এছাড়া প্রতিদিন নিয়মিত মাদক কেনাবেচা ও সেবনের অভিযোগ রয়েছে—উপজেলা নতুন ভবন এলাকা, পৌরসভার সামনে স্টেডিয়ামের ওপর, থানাপাড়া পুকুরপাড়, রেলস্টেশনের ওপর ও ঢালে, লালব্রিজ সংলগ্ন কালভার্টের ওপর এবং ফকট এলাকায়। দিনের আলো কিংবা গভীর রাত—সময় যেন কোনো বাধা নয় মাদক কারবারিদের জন্য।
মাদকের বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের উদ্বেগ জানিয়ে আলমডাঙ্গা শাখার মাদক ও নিরাময় বিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন— “মাদক আজ আলমডাঙ্গার জন্য শুধু আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নয়, এটি একটি মানবিক ও সামাজিক বিপর্যয়। তরুণ সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। আমরা যদি এখনই শক্ত হাতে প্রতিরোধ গড়ে না তুলি এবং মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করি, তাহলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ পরিণতি আমাদের সবাইকে ভোগ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, সাক্ষী সুরক্ষা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত অভিযান, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম ছাড়া মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে আলমডাঙ্গার তরুণ সমাজ শুধু মাদকাসক্তই নয়—একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্মে পরিণত হবে। সময় এসেছে দায় এড়ানোর নয়, সময় এসেছে দায়িত্ব নেওয়ার। সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার।