
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ৪১তম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে মুফতি আমির হামজার আপত্তিকর বক্তব্যে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক (মিডিয়া) নিষিদ্ধের ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে স্থানীয়ভাবে।
গত সোমবার রাতে মাহফিলের শেষ দিন মঞ্চে প্রধান তাফসিরকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী মুফতি আমীর হামজা। তাঁর তাফসিরের বিষয় ছিল সূরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াত।
তবে ওইদিন রাত ৯টার দিকে মাহফিলস্থলে সাংবাদিক ও স্থানীয় মিডিয়া প্রতিনিধিরা উপস্থিত হলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে জানানো হয়, কেউ মোবাইল বা ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ বা লাইভ সম্প্রচার করতে পারবেন না। ফলে উপস্থিত মিডিয়া কর্মীরা বাধ্য হয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে তথ্য সুত্রে জানা গেছে,তাফসিরকার জামায়াতের নেতা আমির হামজা বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন কোন কোন দল মনোনয়ন বিক্রি করছে। এসময় স্থানীয় বিএনপি'র নেতৃবৃন্দ তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান।
এসময় জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের নেতা আমির হামজা কোনো দলের নাম নিয়ে কিছু বলেন নি, তাহলে আপনাদের গায়ে বাধছে কেন। এসময় জামায়াতের নেতাকর্মীদের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাদের দলের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এবিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মুফতি আমির হামজার বক্তব্য স্যোসাল মিডিয়ায় দেবার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে সতর্ক করেছে। কিন্তু সাংবাদিক (মিডিয়া) কর্মীদের ভিডিও নেবার নিষেধাজ্ঞা করাটা উপস্থাপক তিনি মনগড়া ভাবে বলেছেন। এবিষয়ে অবশ্যই নিন্দনীয়। তিনি ঘটনায় দুঃখ ও নিন্দা জানান। তবে মুফতি আমির হামজার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাংবাদিক মহল ও সামাজিক পরিমণ্ডলে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, একটি ধর্মীয় মাহফিলে সাংবাদিক নিষিদ্ধ করার অর্থ কী? সেখানে এমন কী বলা হচ্ছিল যা জনসমক্ষে আনা যাবে না? আয়োজকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক বক্তব্য বা নির্বাচনী ইঙ্গিত এড়াতেই হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, মুফতি আমীর হামজা গত মে মাসে কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের এক সভায় কুষ্টিয়া-৩ আসনে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। যদিও তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কোনো পদে নেই, তবে দলের ওলামা শাখায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত বলে জানা গেছে।
ধর্মীয় বক্তা হিসেবে মুফতি আমীর হামজা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত। তার তাফসিরে ইসলামি মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সামাজিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা থাকলেও— সাম্প্রতিক সময়ে তার বক্তব্যে রাজনৈতিক ইঙ্গিত রয়েছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।