আলমডাঙ্গার চাঞ্চল্যকর রোড ডাকাতি মামলার রহস্য উন্মোচিত

আলমডাঙ্গার যে অতি চাঞ্চল্যকর রোড ডাকাতির ঘটনায় থানার সৎ ওসি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া আশিকুর রহমান প্রত্যাহার হন, সেই ডাকাতির রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। দূর্বোধ্য এই রহস্যের জাল ভেদ করেন থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান। মামলার দূর্ধষ দুই ডাকাতকে জেলহাজতেও পাঠানো হয়েছে। গতকাল আসামি রতন ডাকাতির চাঞ্চল্যকর বর্ননা দিয়ে আাদলতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গত ৩ মার্চ রাত ৯টার দিকে আলমডাঙ্গার কৃষ্ণপুর থেকে গোয়ালবাড়ি যাবার পথের মাঝামাঝি জায়গায় ডাকাতরা গরু ব্যবসায়ীদের ওপর চড়াও হয়। ডাকাতরা ব্যবসায়ীদের মারধর করে ২ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা সেদিন চুয়াডাঙ্গার ডুগডুগি বাজার থেকে গরু কেনাবেচা করে নতিডাঙ্গায় বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর এক সপ্তাহ পার হলেও ডাকাতির ঘটনায় কোন আসামি আটক না হওয়ায় এলাকার গরু ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এর পরপরই অত্যন্ত সৎ ওসি হিসেবে আলমডাঙ্গায় সর্বমহলে পরিচিতি পাওয়া আশিকুর রহমানকে তিন মাসের মাথায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এরপর চাঞ্চল্যকর এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান থানায় যোগ দিয়েই ডাকাতির ঘটনার জট খুলতে মাঠে নামেন। তিনি মাঠে নেমে হন্যে হয়ে ডাকাতির ক্লু খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, অন্য একটি মামলায় হাজতে থাকা মুন্সীগঞ্জের রতনের হাত রয়েছে ওই ডাকাতির ঘটনায়। এরপরই তিনি আদালতে রোড ডাকাতির মামলায় রতনকে শৌন এরেস্ট দেখানোর আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুরও করেন।
রতনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। আর এতেই আলমডাঙ্গা অঞ্চলে ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর রোড ডাকাতির রহস্য উন্মোচিত হয়। রতন পুলিশের সামনে এনে দেয় রোড ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড মুন্সীগঞ্জের যদুকে। সামনে আনে মানুষের জন্য অত্যন্ত হিংস্র ও নির্মম স্বভাবের মুন্সীগঞ্জের আরেক ডাকাত রুহুলের নাম। পুলিশ মাস্টারমাইন্ড যদুকে আটক করতে না পারলেও হিংস্র রুহুলকে আটক করেন। তাকেও নেওয়া হয় রিমান্ডে।
জানা গেছে, রোড ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড যদু এলাকার বেকার যুবকদের টার্গেট করে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করতো। সে একটি ভয়ংকর দলও খাড়া করে তোলে। কয়েকটি ঘটনায় তার নামে মামলা হলে সে আড়ালে থেকে কাজ করতে থাকে।
কয়েকজনের ডাকাত দলের ডাকাতি কাজ সহজ করে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে থাকে রুহুল। বিশাল দেহের অধিকারি রুহুল অতিমাত্রায় হিংস্র স্বভাবের। সে প্রথমে রামদা দিয়ে রোডের শিকারীদের ওপর পাগলের মত কুপিয়ে আতংক ধরিয়ে দিত। এরপর তার সাথের অন্যান্য ডাকাতরা সহজেই রক্তাক্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা লুট করে নিত।
রোড ডাকাতির মাস্টারমাইন্ড যদু বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় রুহুলের সাহস দেখে পুরুস্কার হিসেবে তাকে তার সহকারি করে নেয়। এরপর আরো হিংস্র হয়ে ওঠে ২৩ বছরের রুহুল। এরপরই কৃষ্ণপুর-গোয়ালবাড়ি সড়কে গরু ব্যবসায়ীদের রক্তাক্ত জখম করে দুই লক্ষাধিক টাকা লুট করে নেয়।
থানার ওসি (তদন্ত) মাসুদুর রহমান মেহেরপুর প্রতিদিনকে জানানÑ “চাঞ্চল্যকর রোড ডাকাতির রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এই মামলায় রুহুল ও রতন নামের দুই ডাকাতকে আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয়েছে।”