
শতবর্ষী বৃদ্ধা ওছিলা খাতুন (৯৯)। বয়সের ভারে নিজে হাঁটতে পারেন না। বার্ধক্যজনিতসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভ্যানে চেপে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন ছেলে ও পুত্রবধুর সাথে। তাদের কোলে চড়ে ভোট দিয়ে আস্তে আস্তে বললেন, ‘আল্লাগ আর কত দিন বাঁচায় জানি না, মনে হয় জীবনের শেষ ভোট দিয়ে গেলাম।’ বৃদ্ধা আহত ওছিলা খাতুন আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ফরিদপুর গ্রামের কারিগরপাড়ার মৃত মানিক মিয়ার স্ত্রী।সরজমিনে দেখা যায়, গতকাল রোববার (২৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে বেলগাছি ইউনিয়নের ফরিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভিতরে একটি ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানের উপরে কম্বল গায়ে সুয়ে আছেন বৃদ্ধা ওছিলা খাতুন।
সামনে এগুতেই পুত্রবধু আকলিমা খাতুন ও ছেলে শহিদুল ইসলাম এগিয়ে তাদের দাবি, ওছিলা খাতুনের বয়স একশো ছুইছুই। শতবর্ষী এই বৃদ্ধা চোখে দেখেন না, খুব একটা কথা বলতে পারেন না, তেমন শোনেন না কানেও। তবে এতো বাধাও আটকে রাখতে পারেনি ওই বৃদ্ধাকে। সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাদের বললে আমরা সাথে করে নিয়ে এসেছি ভোট কেন্দ্রে।
এদিকে কেন্দ্রের মধ্যে বৃদ্ধা ওছিলা খাতুন ভ্যানে করে ভোট দিতে আসায় তাকে ঘিরে উচ্ছ্বাস দেখা যায় ভোটারদের মধ্যে। সবাই তার কাছে আসেন। তার বিষয়ে খোজ খবর জানার চেষ্টা করেন। এতে ভোট কেন্দ্রে তাঁর পাশে ভিড় জমে যায়।
ছেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার মা দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। বয়সের ভাবে হাটতেও পারেন না। বলতে গেলে বিছানাগত। ভোটের আগে চারিদিকে মাইকে প্রচার-প্রচারণা শুনতে পেয়ে ভোট দেবার ইচ্ছা পোষন করে আমাদেরকে জানায়। আমরাও মায়ের কথায় সম্মতি জানিয়ে ভোট দিতে নিয়ে এসেছি। ভোট দিয়ে আমার মা খুব খুশি হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। আমরাও ভোট প্রদান করেছি।
পুত্রবধু আকলিমা খাতুন বলেন, আমার শাশুড়ির বয়স প্রায় ১০০ ছুইছুই। হাঁটা-চলা করতে অন্যের সহযোগিতা নিতে হয়। ভোট দেয়ার কথা আমাদের জানালে আমরা না করতে পারিনি। এই বৃদ্ধা বয়সে তার ইচ্ছা পূরণ করতেই ভোট কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি ভ্যানযোগে। পরে কোলে করে বুথে নেয়া হয়। এরপর দায়ীত্বরতদের সহযোগীতায় পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার শ্বশুর মারা যাওয়ার পর থেকে আমরাই শাশুড়ি মা’কে দেখাশোনা করি। ভোট দেওয়ার বেশ আগ্রহ ছিল তার। তাই সবাই মিলে কেন্দ্রে নিয়ে এসেছি। ভোট দিতে পেরে তিনি বেশ খুশি।’
আলমডাঙ্গা সরকারী কলেজের প্রভাষক ও ফরিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, ওছিলা খাতুন বয়স্ক ও অসুস্থ হওয়ায় তাকে আগে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই কেন্দ্রে কোন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি।


