আলমডাঙ্গায় কৃষিতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা, মরছে চাষের মাছ

আলমডাঙ্গায় কৃষিতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা, মরছে চাষের মাছ

আলমডাঙ্গার রায়সা গ্রামের আমজেদ আলীর পাঁচটি পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে দুটি তীব্র গরম আর অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে গেছে। তিনটির পানি শুকিয়ে নেমেছে তলানিতে। গরমে মাছ রক্ষায় বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে পানি দিচ্ছেন। কিছু মাছ বিক্রিও করেছেন। আইলহাঁস গ্রামের তুষার আলী সাড়ে চার বিঘা জমির ঘেরে মাছ ছেড়েছেন। তবে গরমে পানিতে অক্সিজেন কমে পাওয়ায় মাছ মরে ভেবে উঠছে। এতে তাঁর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।

কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপদাহ। প্রতিদিনই তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রির ঘর অতিক্রম করছে। এ অবস্থায় পুকুরের মাছ ও মাঠের ফসল নিয়ে বিপদে রয়েছেন কৃষক। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ আর অনাবৃষ্টিতে ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কা বাড়ছে। খালবিল শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নামছে। এতে ক্ষেতে পানিশূন্যতা দেখা দিয়েছে।

তালতলা এলাকার কৃষক ছায়েম মিয়া বলছিলেন, তাঁর পানের বরজে পাতা পুড়ে যাচ্ছে। যে পরিমাণ তাপ, তাতে ফসলের মাঠে কাজ করাও দুষ্কর হয়ে গেছে। ধানে প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে। তেল ও সারের যে দাম, বৃষ্টি না হওয়ায় খুব বিপদে আছেন। কৃষকরা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক মোটরে প্রয়োজনীয় পানি উঠছে না। এ অবস্থায় পুকুরে পানির তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছেন মাছচাষিরাও। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আঁখির ভাষ্য, উত্তাপ থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরে চুন মিশিয়ে দেওয়া ও সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। মৎস্য বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ৩ হাজার ৪৬৭টি পুকুর রয়েছে। এ অঞ্চলে মাছের চাহিদা ৭ হাজার ৫৬০ টন। তবে প্রতিবছর ৭ হাজার ৯৭২ টন গলদা, বাগদা ও কার্পজাতীয় মাছ উৎপাদন হচ্ছে। চাহিদার চেয়ে এলাকায় বেশি উৎপাদন হওয়া মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছ চাষের জন্য ২৫ থেকে ৩২ ডিগ্রি আদর্শ তাপমাত্রা। পুকুরের পানির স্তর পাঁচ ফটের ওপরে থাকলে মাছের ক্ষতির শঙ্কা কম। বৃষ্টি না হওয়ায় পানির স্তর নামছে। এতে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের সংকট। ফলে হাঁসফাঁস করছে মাছ।

এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র গরমে প্রায় সব ধরনের ফসলে একই ধরনের অবস্থা। কলাগাছ মরে যাচ্ছে। কলার ছড়ি পড়ে যাচ্ছে। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। ফলে আম, লিচু ও কলার কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন নিয়েও কৃষক দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন সাড়ে তিন বিঘা জমিতে দেশি জাতের কচুর আবাদ করেছেন। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ায় কচুর পাতা কুঁকড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৩৪ শতাংশ। আর বেলা ৩টায় ছিল ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৮ শতাংশ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহে কিছু কিছু ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতি কাটাতে কৃষকদের বলা হচ্ছে, ফসলে বেশি পানি দিতে।