আলমডাঙ্গায় জমি লিখে নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা

আলমডাঙ্গার ঘোষবিলার ছেলে মালদ্বীপ প্রবাসী মিজানুর রহমানকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে বাড়ির জমি লিখে নেওয়ার পরও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিয়ে আসছেন ঘোষবিলা গ্রামের মৃত বাদল উদ্দিনের ছেলে মাহিন উদ্দিন।

মিজানুরের মা কেঁদে কেঁদে জানান, মাহিন আমার বাড়ি এসে ভিডিও কলে দেখায় বিদেশে আমার ছেলেকে বেশ কয়েকজন গলায় ছুরি ধরে রেখেছে। এই দেখে কোন মায়ের মাথা ঠিক থাকতে পারে না। আমার ছেলেকে বাঁচাতে চাইলে জমি লিখে দিতে হবে। ছেলেকে বাঁচাতে মিজানুরের নামে সাড়ে ৫ শতক জমি আমাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প করে নেয়। এবং আমাদের হুমকি দিয়ে যায় এই কথা যদি কাউকে বলে তাহলে মালদ্বীপে আমার ছেলেকে বস্তায় পুরের নদীর পানীতে ভাসিয়ে দিবে।

বিদেশ বিভুই মালদ্বীপে কিডন্যাপের নাটক সাজিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে গ্রামের ছেলের কাছ থেকে বাড়ির জমি লিখে নেওয়ার ঘটনায় ওই গ্রামটিতে তোলপাড় চলছে। একটু পুরানো হলেও ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ালে নতুন করে তা আলোচনায় আসে। আলমডাঙ্গার জামজামীর ঘোষবিলা গ্রামের মানুষের মুখে মুখে এখন মালদ্বীপের সেই বিশ্বাস ঘাতকতার গল্প।

জানা গেছে, ২০১৩ সাথে ঘোষবিলা গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে ছোট্ট দেশ মালদ্বীপে পাড়ি জমান। তাকে নিয়ে যায় একই গ্রামের সোহেল নামের একটি ছেলে। এরপর ঘোষবিলা গ্রামেরই মাহিন উদ্দিনের ছেলে শিলনও ২০১৬ সালে মালদ্বীপে যায়। একই গ্রামে বাড়ি হওয়ায় তারা মালদ্বীপে মিলেমিশেই থাকছিল। কিন্তু এরই মধ্যে মালদ্বীপ পবাসী ঘোষবিলা গ্রামের ছেলেদের মেলামেশায় ছন্দপতন ঘটে। টাকার লেনদেনে জড়িয়ে পড়ে মিজানুর ও শিলন নামের দুজন। শিলন দাবি করতে থাকে সে মিজানুরের কাছে টাকা পাবে।

সূত্র মতে, পাওনা সেই টাকা নিতে শিলন এক অভিনব পন্থা অবলম্বন করে। সে তার আরো ৭/৮ জন সঙ্গিকে নিয়ে মালদ্বীপের মাটিতেই মিজানুরকে অপহরণ করে। তারা এক পরিত্যাক্ত বাড়িতে মিজানুরকে নিয়ে গিয়ে গলায় চাকু ধরে ঘোষবিলায় তার পিতার কাছে ফোন করায়। ফোনে বলতে বাধ্য করায় যে কোন মূল্যে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা শিলনের পিতাকে দিয়ে দিতে। এর জন্য ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এদিকে, ২৪ ঘন্টায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা সংগ্রহ করা একেবারে অসম্ভব হয়ে দেখা দেয় মিজানুরের পিতার কাছে। তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন। তবে মিজানুরের পিতার মহাবিপদে পাশে এসে দাড়ায় শিলনের পিতা নিজে। তিনি সমাধানের পথ বাতলে দেন। তিনি মিজানুরের পিতাকে বলেন, বাড়ির জমি বিক্রি করে দেওয়ার জন্য। শুধু তাই নয়, বাড়ির জমি কারা কারা কিনবে এবং দাম কত দিতে হবে সেটাও শিলনের পিতা নির্ধারণ করে দেয়।

ওই রাতেই শিলনের পিতা মাহিন উদ্দিন ঘোষবিলা গ্রামে এরশাদ, মহিবুল ও বাঙ্গালের স্ত্রীকে জমির ক্রেতা হিসেবে সনাক্ত করে। এই তিনজনই মালদ্বীপে অপহৃত মিজানুরের পিতার কাছ থেকে মুক্তিপণ হিসেবে বাড়ির জমি স্ট্যাম্প করে নেয়। কিন্তু এতেও সাড়ে তিন লক্ষ টাকার দাবি মেটেনি। কারন জমির ক্রেতা ওই তিনজন দুই লক্ষ একত্রিশ হাজার টাকার বেশী দিতে রাজি হননি। বাকি এক লক্ষ ঊনিশ হাজার টাকা মিজানুর মালদ্বীপে এরওর কাছ থেকে ধারদেনা করে পরিশোধ করেই তারপর মুক্তি পায়।

মিজানুরের পিতা আনিছুর রহমান জানান, শিলনের পিতা মাহিন উদ্দিন তার বাড়িতে এসে মোবাইলের ভিডিও কলে দেখান মিজানুরের অপহরণের দৃশ্য। তার ছেলের গলায় চাকু ধরে রাখা হয়েছে। টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে বাড়ির জমি বিক্রি করে টাকা দেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সুব্রত জানান, মুক্তিপণ হিবেসে জমি লিখে নেওয়ার একটি অভিযোগপত্র আমার কাছে আছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।