চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে একটি মালিকানাধীন বিল (জলাশয়) নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ২১ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে দফায় দফায় সংঘটিত এই রক্তাক্ত সংঘর্ষে নারীসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন গুরুতর আহত হন।
আহতদের মধ্যে মজিবুল ও কোরবান নামে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কেশবপুর গ্রামের বর্তমান মেম্বার ও হারদী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলী চেংগিস প্রায় তিন বছর আগে প্রায় ৭০ জন স্থানীয়ের কাছ থেকে ১০ বছরের চুক্তিতে একটি পরিত্যক্ত বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন এবং প্রতি বছর নিয়মিত লিজের টাকা পরিশোধ করতেন।
তবে স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তনের পর বিএনপি-সমর্থিত একটি গ্রুপ বিলটির মালিকানা দাবি করে। তারা মনসুর আলী চেংগিস মেম্বারের লিজ চুক্তি অস্বীকার করলে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে সালিশ-বৈঠক হলেও কোনো সমাধান আসেনি।
মঙ্গলবার রাতে মনসুর আলী চেংগিস মেম্বারের অনুসারীরা বিএনপি-সমর্থিতদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীদের দাবি, হামলাকারীরা রামদা, ফালা, ছুরি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কুপিয়ে অন্তত ১০ জনকে রক্তাক্ত জখম করে।
আহতদের পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ অনুযায়ী, হামলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন হারদী ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জিল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ও মেম্বার মনসুর আলী চেংগিস, ডালিম, কুদ্দুস জোয়ার্দার, সামসুল, আয়ুব, এলাকায় চিহ্নিত মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী ইমাদুল, বিস্কিট, চেংগিস মেম্বারের ছেলে ছানিম ও তানিম।
এই রক্তাক্ত হামলার পর পুরো কেশবপুর গ্রামে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, “বিলের মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। পূর্বে কখনো মাছে বিষ প্রয়োগ, কখনো পাটের জাগ দিয়ে বিল নষ্ট করার মতো ঘটনা ঘটলেও এবার তা সরাসরি রক্তাক্ত সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে।”
আহতদের মধ্যে মজিবুল ও কোরবানকে গুরুতর জখম অবস্থায় দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শারমিন আক্তার জানান, “আজ দুপুরে নারীসহ মোট আটজন ব্যক্তি গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ছয়জন বর্তমানে আলমডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।”
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাসুদুর রহমান, পিপিএম জানান, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্তের কাজ চলছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”