
গোয়ালন্দে নূরাল পাগলের লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেওয়ায় আলমডাঙ্গায় মাজার নিয়ে শঙ্কিত বাউল সম্প্রদায়। বাউল শিল্পীদের জীবিকায় ভাটা পড়েছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা শতাধিক মাজার রয়েছে। মাজার নিয়ে বাউল সাধকদের যে আবেগ, মনের বিশ্বাস লালন করে, তাদের সেই ভাবাবেগের উপর বার বার নেমে এসেছে খড়গাঘাত। আঘাতে আঘাতে আহুত হৃদয় নিয়ে কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি। বছরের একটি মাত্র গুরুপ্রাপ্ত দিন স্বরণ করে আসছে সাদামাটা ভাবে। বিগত দিনে দেখা গেছে, প্রতিটি আখড়া বা মাজারে বাৎসরিক অনুষ্ঠান কত সুন্দর জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে সাধুদের আগমন দেখে এলাকার মানুষ চমকে যেত। নামী-দামী শিল্পদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। পালা গান বা ভাব গানে সারা রাত জেগে মানুষ উপভোগ করেছে।
সারা বছর এলাকাবাসী চেয়ে থাকে ঐ একটি দিনের অপেক্ষায়। পায়ে হেঁটে দূর দূরান্তে মানুষ ছুটে যেত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য সংগীত ভাব গানে আসরে। ইহাতে শিল্পীদের মধ্যে একটা সংগীত চর্চার একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হত,পাশাপাশি শিল্পী ও বাদ্যযন্ত্র বাদকদের একটা রুজিরোজগারের সংস্থান হত। সাঊন্ড,লাইট ডেকোরেশন ব্যাবসায়ীদের ব্যাবসা দিদারসে রমরমিয়ে চলত।আজ তাদের রুজির ভাণ্ডারে টান পড়েছে।তারা আজ সংগীত চর্চা ছেড়ে বেকার হয়ে কেউ কেউ রিকসা চালায়ে,মাছ ধরে,মাঠে জন খেটে জীবিকা নির্বাহ করছে।
একুশে পদক প্রাপ্ত খোদাবক্স শাহের পুত্র বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফ শাহ বলেন সংগীতানুষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শিল্পীরা সব ঘরে বসে আছে। তারা না পারে মাঠে কৃষি কাজ করতে, না পারে রিক্সা চালাতে। সংগীত পরিমন্ডল উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশের স্বনামধন্য বংশীবাদক মনোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আমরা সারা দেশে প্রোগ্রাম করে থাকি। বর্তমানে কোন কাজ পাচ্ছি না। একপ্রকার ঘরে বসে আছি। আলমডাঙ্গার নামকরা হারমনিয়াম বাদক আশরাফুল আলম মন্টু বলেন, বাউল সাধক সম্প্রদায় খুব সঙ্কটে আছে। মন খুলে অনুষ্ঠান করতে পারছে না। আমরা অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছি। আলমডাঙ্গার স্বনামধন্য বাউল সাধক শিল্পী রইচ উদ্দিন শাহ বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলায় শতাধিক মাজার বা আখড়া আছে। সমস্ত জায়গায় সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান বন্ধ হতে চলেছে। কোনো কোনো স্থানে হলেও ছোট আকারে দিন রক্ষা করে চলেছে।
সাংস্কৃতিক কর্মী ও সাংবাদিক হামিদুল আজম বলেন, বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় ঘরে ঘরে বাউল সম্প্রদায়ের আদর্শে দীক্ষিত মানুষ বসবাস করে। আলমডাঙ্গার ফরিদপুর গ্রাম কে বলা হয় সাতশ ফকিরের বসবাস। এখানে বাউল শিল্পী বাদ্যকার অনেক মানুষ আছে যাদের সংগীতই হল একমাত্র বাঁচার অবলম্বন বা জীবিকা। তাদের সেইর জীবকায় আঘাত পড়েছে। এদের মুক্তমনে তাদের আদর্শিক রীতিনীতি পালন করতে দেওয়া উচিত।