ইতিহাস গড়া টেস্ট জয়ের ৩ কারণ

বে ওভালের মাটিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বিশ্বের এক নম্বর দলকে মাটিতে নামিয়ে দিয়েছেন টাইগাররা। ইবাদত-মুমিনুল-লিটন-তাসকিনের নৈপুণ্যে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের ভূমিধস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

বিদেশের মাটিতে টেস্টে এত বড় জয় পাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বড় পাওয়া। তারুণ্যনির্ভর দলটি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের মাটি যে কীর্তি গড়ল, সেটি ক্রিকেটবিশ্ব বহুদিন মনে রাখবে। ক্রিকেট লিজেন্টরা রীতিমতো অবাক বনে গেছেন মুমিনুলদের পারফরম্যান্সে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন কিউই অধিনায়ক টম লাথাম।

ম্যাচশেষে তিনি বলেন, তিনটি দিকে আমরা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। সেগুলো হচ্ছে— মুমিনুলরা ভালো পার্টনারশিপ করতে সক্ষম হয়েছিল, আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছিল এবং দুর্ভাগ্য আমরা এ দুটোর কোনোটিই করতে পারিনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ অবশ্যই আমাদের দেখিয়েছে টেস্টে চেপে না ধরতে পারার দুর্বলতা কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।

এই জয়ে বাংলাদেশের কৃতিত্বকে বড় করেই দেখছেন লাথাম। আমরা যদি ৪৫০ রান করতে পারতাম, তবে গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। তবে আজকের ম্যাচে পুরো কৃতিত্ব বাংলাদেশের, এই ম্যাচে তারা ভালো খেলেই জয় পেয়েছে।
বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল জানিয়েছেন, এ জয়ের নেপথ্যে নিজেদের দৃঢ়তা ও মাথা ঠাণ্ডা করে খেলার বিষয়টি কাজ করেছে। ইবাদতের অসাধারণ স্পেলের পরও নিজেদের রোমাঞ্চ লাগামছাড়া হতে দেয়নি বাংলাদেশ দল।

মুমিনুলের ভাষায়, ‘কাল শেষ বেলায় ইবাদত যখন হঠাৎ করেই উইকেট নিল, তখন মনে হলো, এ টেস্ট জেতার জন্য যাচ্ছি। আজ অল-আউট হওয়ার পর নিশ্চিত হয়েছি। তবে বাড়তি উত্তেজনা কাজ করছিল না। টিভিতে দেখতে থাকলে দেখবেন, আমরা সবাই শান্ত থাকার চেষ্টা করেছি। বল ধরে ধরে খেলার চেষ্টা করেছি—ব্যাটিং, বোলিং। ব্যাটিংয়ে শুরুতে চাপে ছিলাম। মুশফিক ভাই ওই দুটা রান নেওয়ার পরই মনে হয়েছে জিতেছি।’

বোলারদের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে বড় করে দেখছেন মুমিনুল। ‘পরিকল্পনা ছিল, উইকেটের জন্য করতে গিয়ে যেন রান না দিই। শেষ চার দিন যে প্রক্রিয়া ছিল, সেটিই অনুসরণ করা, চাপ তৈরি করা। ফল আসলে আসবে, না এলে নেই।’
আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত চক্রে সাত ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ, অন্যটি ড্র হয়েছিল। শুরুটা পাকিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছে। অবশেষে বহুল প্রত্যাশিত জয় ধরা দিল।

আর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা ছিল আরও দীর্ঘদিনের। কিউইদের বিপক্ষে তাদের মাঠে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলে অবশেষে দেখা মিলল প্রথম জয়ের।

দেশের মাঠে নিউজিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামল এই হারে। সবশেষ তিন সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতকে। উপমহাদেশের কোনো দলের সবশেষ জয় ছিল ১১ বছর আগে, পাকিস্তানের। সেই দলকেই এবার বড় ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ।

৫ উইকেটে ১৪৭ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। বুধবার পঞ্চম ও শেষ দিনে সকালের সেশনে ১০.৪ ওভারের মধ্যে মাত্র ২২ রান তুলতেই বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে অলআউট হয় টম লাথামের দল। এতে জয়ের জন্য মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। যেটি হেসেখেলেই পার করে দেন ব্যাটাররা।