
বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি আজ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয় বরং জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বাণিজ্য, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রধান ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বায়নের এই যুগে ইংরেজি এমন এক সেতুবন্ধন, যার মাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি ও ভাষার মানুষ একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছে। শিক্ষা, গবেষণা, কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি হলো ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জন। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য ইংরেজি শেখা এখন সময়ের দাবি। ইংরেজিতে সফলতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো:—
১। শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী হওয়া-
ইংরেজিেত ভালো ফলাফল করতে হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হবে এবং শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত পাঠ মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। ক্লাসে সক্রিয় অংশগ্রহণ করলে পাঠ্যবিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা তৈরি হয় এবং ভুল ধারণা দূর হয়।
২। টেক্সট বুক ও রেফারেন্স বই পড়ার উপরে জোর দেওয়া-
অনেক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র গাইড বইয়ের উপর নির্ভর করে যা ভুল অভ্যাস। ইংরেজিতে দক্ষ হতে হলে পাঠ্যপুস্তককেই মূল ভিত্তি হিসেবে নিতে হবে। টেক্সট ও রেফারেন্স বই পড়লে ভাষার গঠন, শব্দভাণ্ডার ও বাক্যরীতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় এবং একজন শিক্ষার্থীকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করায়।
৩। বেইসিক গ্রামারে দখল নিয়ে আসা-
ইংরেজিতে কথা বলা, লেখা বা অনুবাদের জন্য ব্যাকরণ অপরিহার্য। Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Preposition ইত্যাদি বিষয়ে সুদৃঢ় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ভালো ব্যাকরণজ্ঞানই ভাষাকে শুদ্ধ ও সাবলীল করে তোলে।
৪। ইংরেজি শব্দের উপরে জোর প্রদান করা-
Vocabulary হলো ভাষার প্রাণ। প্রতিদিন নতুন শব্দ শিখে তার অর্থ, উচ্চারণ ও ব্যবহার অনুশীলন করতে হবে। শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হলে লেখা ও কথোপকথনে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়।
৫। অনুবাদে দখল নিয়ে আসা-
বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে । এটি ব্যাকরণ ও শব্দ ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ায় এবং সঠিকভাবে ভাব প্রকাশে সহায়তা করে।
৬। ইংরেজি বিষয়ের নয়- এমন শিক্ষকের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়া এড়িয়ে চলা-
ইংরেজি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। তাই ইংরেজি পড়তে হলে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকের কাছেই পড়া উচিত। অন্য বিষয়ের শিক্ষক তার স্বল্প ইংরেজীর জ্ঞানে ভুল ধারণা সৃষ্টি করতে পারেন যা ভবিষ্যতে একজন শিক্ষার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, অপ্রিয় হলেও সত্য কথা যে আজকাল দেখা যায় অনেকাংশে একজন শিক্ষকই একাধিক সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়ান। মনে রাখতে হবে A jack of all trades, master of none. (সব জান্তা কোনোটারই ওস্তাদ নয়।)
৭। মোবাইল ফোনে আসক্ত না হওয়া-
অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করে এবং পড়াশোনার আগ্রহ কমিয়ে দেয়। তাই সোশ্যাল মিডিয়া বা গেমসে সময় নষ্ট না করে শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
৮। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইংরেজি শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট না পড়া-
অনেক সময় শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের শিক্ষককেই প্রাইভেট টিউটর হিসেবে বেছে নেয়। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী ইন্টারনাল সব পরীক্ষায় পাস করে যায়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় ওই শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় ইংরেজিতে ফেল করেছে। অতএব প্রথম থেকেই নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট না পড়লে একজন শিক্ষার্থী সহজে বুঝতে পারবে ইন্টারনাল পরীক্ষায় ইংরেজিতে সে কত পাওয়ার যোগ্য। কারণ যখন একজন শিক্ষার্থী নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে না তখন শিক্ষক খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে মায়ার চোখে দেখেন না। ফলে একজন শিক্ষার্থী যথাযোগ্য নম্বর পায় এবং পরবর্তীতে ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে বোর্ডের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।
৯। সময় নষ্ট না করে নিয়মিত পড়তে বসা-
ইংরেজিতে সফলতা রাতারাতি আসে না; এটি ধৈর্য ও নিয়মিত অনুশীলনের ফল। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়াশোনা ও চর্চা করলে ইংরেজিতে সফলতা অর্জন সম্ভব।
১০। মানসম্মত থ্রি হ্যান্ড রাইটিং এর অভ্যাস করে তোলা-
দক্ষ ইংরেজি শিক্ষকের সহযোগিতায় ফ্রী হ্যান্ড রাইটিং লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কারণ সুন্দর ও স্পষ্ট হ্যান্ডরাইটিং শুধু পরীক্ষায় নয়, লেখার দক্ষতাও বৃদ্ধি করে। নিয়মিত ইংরেজি লিখনচর্চা করলে লেখার গতি ও সঠিকতা দুটোই উন্নত হয়।
পরিশেষে, ইংরেজি শেখা কেবল পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জনের জন্য অপরিহার্য। সঠিক দিকনির্দেশনা, নিয়মিত চর্চা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে প্রতিটি শিক্ষার্থী ইংরেজিতে সফলতা অর্জন করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে।