মেহেরপুরের গাংনীতে কৃষি বিভাগের নানা উদ্যোগে কৃষির সোনালি সম্ভাবনা ঘিরে বদলে যাচ্ছে চাষীদের জীবনমান। জেলার কোথাও ধানের সবুজ মাঠ, কোথাও শাকসবজি, কোথাও সরিষা বা গম-এ যেনো প্রাণ ফিরে পাওয়া এক মাটির গল্প। এই পরিবর্তনের পেছনে আছে কৃষি বিভাগের নিবিড় তদারকি আর সরকারি প্রণোদনার কার্যকর বাস্তবায়ন।
কৃষি সমৃদ্ধ জেলা মেহেরপুর। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৫৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর কৃষি জমিতে হয় ধান পাট, তুলাসহ নানা ধরণের শাক সবজী। আবাদী জমির মধ্যে শীতকালিন সবজি উৎপাদন হয় ৪৯০০ হেক্টর এবং গ্রীস্মকালিন সব্জী উৎপাদন হয় ৬২০০ হেক্টর জমিতে। জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর এছাড়া আউশ হয় ২২ হাজার হেক্টর ও আমন ধানের চাষ হয়ে থাকে ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে।
জেলার উৎপাদিত সবজি এবং ধানসহ অন্যান্য ফসল জেলার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। জেলার শতকরা ৯৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির সাথে জড়িত।
কৃষিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মানুষের অর্থনীতির ভীত। কিন্তু কৃষকরা আগে অপরিকপ্তি এবং সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করাই ফসলের যেমন "আগে ফলন কম হতো, উৎপাদন খরচও বেশি পড়ত। আবার তারা ফসল বাজারজাত করতে না পেরে ক্ষতির সম্মুখীন হতেন। কিন্তু বর্তমান সময় পাল্টানোর সাথে সাথে কৃষি ও কৃষকের ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়েছে।
কৃষি অফিসারদের সরাসরি মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের ভালবীজ সংগ্রহ, সহজ শর্তে সার, কীটনাশক, বিনামূল্যে কিংবা ভর্তুকিতে এসব প্রাপ্তি কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনেছে অনেকখানি। এতে ফসল ভালো হচ্ছে, লাভও বেশি হচ্ছে।" শুধু সহযোগিতাই নয়, কৃষকদের প্রযুক্তি সহায়তা। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ, হটলাইন ও মাঠপর্যায়ের কর্মী ও কৃষক মিলেই তৈরি করছেন কৃষিবান্ধব পরিবেশ। এছাড়া কৃষিপণ্যেও বাজার ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন কৃষিপণ্য বিক্রি করতেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। ফলে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন কৃষকেরা।
কৃষকরা জানান, সরকারি প্রণোদনার সঠিক বিতরণ, যান্ত্রিক প্রযুক্তি, কৃষি বিভাগের তদারকি ও পরামর্শে বর্তমান কৃষিতে খরচ কমেছে এবং উতপাদন বেড়েছে। সাহারবাটি বাটি গ্রামের কৃষক আইয়ু আলী বলেন,এক সময় আমাদেও জমিতে বছরে ধান আর পাটসহ মোট দুটি ফসল হতো। এখন কৃষি বিভাগের নতুন নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন হওয়ায় বিভিন্ন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। বেশিরভাগ জমিতে এখন বছওে তিন থেকে চার বার ফসল হচ্ছে।
কৃষক আবদুল আলিম বলেন, আগে আমরা শ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে অনেক বেশি টাকা খরচ হতো। এছাড়াও সময়মতো শ্রমিক না পাওয়ার কারনে ফসলের পরিচর্যা করা যেতনা। আবার সঠিক সময়ে ফসল ঘওে তুলতে পারতামনা। বর্তমানে সরকারি ভর্তুকিতে বিিিভন্ন যন্ত্রপাতি দেওয়ার কারনে আবাদে অনেক খরচ কমেছে,সেই সাথে সঠিক সময়ে ফসল ঘরে তোলা যায়।
কাথুলি গ্রামের কৃষক খজিমুদ্দিন ও সাহারবাটি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, আমি গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে
সার, বীজ বিনামুল্যে পেয়ে আমন ধানের আবাদ করেছি। কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন আমাদের গ্রামে এসে অনেক চাষিদেও ্কত্রিত করে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। সঠিক সময়ে সঠিক পরামর্শ পেয়ে আমরা উপকৃত হচ্ছি। প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের প্রণেঅদনা দেওয়ায এলাকায় আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তারা।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: ইমরান হোসেন বলেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপ, হটলাইন ও মাঠপর্যায়ের কর্মী ও কৃষক মিলেই তৈরি করছেন কৃষিবান্ধব পরিবেশ। এছাড়া কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় উন্নতি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এখন কৃষিপণ্য বিক্রি করতেও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। ফলে ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন কৃষকেরা। কৃষকদের নানামুখি ফসলের আবাদ করতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
ফসলে কীটনাশকের প্রয়োগ কমানোর জন্য এবং উন্নত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে বিভিন্ন মাঠে মাঠে মাঠ দিবস করে কৃষকদের হাতে কলমে শিক্ষাদান করা হচ্ছে। তবে বর্তমান কৃষিতে যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত সুবধা নিয়ে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।