এই ৬ সংগঠনের লক্ষ্য বাংলাদেশকে অসম্মান করা

এই ৬ সংগঠনের লক্ষ্য বাংলাদেশকে অসম্মান করা

এবারের নির্বাচন শেষ হওয়ার ঠিক একদিন পর, মার্কিন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক জিম বেটস একজন মন্ত্রীকে সতর্কতা দিয়েছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে শিগগির আন্তর্জাতিক প্রপাগান্ডা শুরু হবে এর জন্যে, ৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শিগগির তোমরা এর ফলাফল দেখতে পাবে’ এর মাত্র দুদিন পরেই মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় কাজ করে, এমন দাবি করা ৬টি সংগঠনের বিবৃতি আসলো। সেখানে তারা বলেছে ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাযথ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়নি। তাই নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে।

নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জন্যে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে যারা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই যার যার দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং করেছেন। তারা সেদিন বলেছিলেন, পৃথিবীর সব দেশে নির্বাচন যেমন হয় তেমন হয়েছে। নির্বাচনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় ছিলো। কাউকে ভোট দিতে অথবা না দিতে বাধ্য করা হয়নি। মাত্র ৮ ঘণ্টার নির্বাচনে এত ভোট পৃথিবীর অনেক দেশেই পড়ে না।

এই লেখার শুরুতে আমরা বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দু’দল বিদেশির মতামত দেখলাম। মার্কিন যে ৬ সংগঠন আবার নির্বাচন চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে তারা আমাদের দেশে মোটামুটি পরিচিত। মানবাধিকার দাবিতে রক্ষার দাবিতে কাজ করা সংগঠন অধিকারের আদিলুর সাহেব যখন জেলে গিয়েছিলেন তখন ঘুরে ফিরে এই সংগঠনগুলোই বার বার উদ্বেগ এবং মুক্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছিল।গত ডিসেম্বরেও তারা নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে একটা বিবৃতি দিয়েছিল।

যাই হোক, এই সংগঠনগুলো বার বার বিবৃতি দিয়ে, আইনের নানা মারপ্যাচ কষে আদিলুরকে মুক্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ই মে, শাপলা চত্বরে লাশের সংখ্যা নিয়ে আদিলুরের নামে মিথ্যাচারের অভিযোগ এসেছিল তা এখনও সত্য করতে পারেননি। এনিয়ে কোন প্রমাণও বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে পারেননি।বাংলাদেশের নিয়মিত গণমাধ্যমগুলো অবশ্য আদিলুরের মিথ্যাচার প্রমাণ করেছে। তার লাশের তালিকায় থাকা মানুষগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে অথবা স্কুলে ক্লাশ করছে এমন প্রতিবেদনও প্রচার হয়েছে।

যদিও আদিলুর আমার আজকের লেখার বিষয় নয়। আমার পাঠকদের আমি আসলে বলতে চাই, যে যারা আজ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিবৃতি দিলেন, তাদের বিবৃতিটিও প্রশ্নবিদ্ধ। কারণ দিনের পর দিন একজন মিথ্যাবাদির পক্ষে দাঁড়ানো বিবৃতিবাজরা এবারের নির্বাচন নিয়ে ঠিক পক্ষে দাঁড়াবেন না এটাই স্বাভাবিক।পাঠক আমি কিন্তু কোন মিথ্যাবাদিকে সত্যের পথে আনার মহৎ উদ্দেশ্যে লিখছি না। আমার দায় আপনাদের কাছে। তাই আমি যা যা প্রশ্ন তুলছি এর সবই আমার নিজের এবং আপনাদের বোঝার জন্যে।

প্রিয় পাঠক, শুধু এই লেখায় নয়, আমার যেকোন লেখায় আপনাদের যুক্ত করার আপনাদের কাছেই প্রশ্ন করি। এটা আমার কৌশল বলতে পারেন। তাই আপনারাই এখন ভাবুন, আজ যারা নির্বাচন বাতিলের্ কথা বলছেন তারা গত ২৮শে অক্টোবর কোথায় ছিলেন? যখন ২৮ জন সাংবাদিকের মাথায় বাড়ি দেয়া হয়েছিল সেদিন তারা কোথায় ছিলেন? রাস্তার মধ্যে প্রকাশ্য পিটিয়ে পুলিশ হত্যার কী ব্যাখ্যা আপানাদের কাছে? তখনতো তাদের কাউকে টু-শব্দ করতে শুনলাম না।

আপনারাও নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন, ২৮শে অক্টোবরকে আমাদের রাজনীতির ইতিহাসের আরেকটি মিথ্যাচাররের দিন হিসাবে সবচেয়ে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওই দিনের নানা ঘটনা ছাপিয়ে মিয়া আরেফিন এবং হাসান সারওয়ার্দীর যৌথ ষড়যন্ত্র ফাঁসের বিষয়টি ভোলারতো সুযোগ নেই। যে আরেফিনের সঙ্গে জীবনে কোন জো বাইডেনেরে সঙ্গে দেখাই হয়নি, তাকে ভাড়া করে আনেন ঘোর সরকার বিরোধী হাসান সারওয়ার্দী। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা দাবি করে আরেফিন সেদিন বলেছিলেন তাকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তিনি নিয়মিত বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানাচ্ছেন। খুব শিগগিরিই বাংলাদেশের বহু রাজনীতিক এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নামে নিষেধাজ্ঞা আসছে।

আমাদের এই বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলো কী ব্যাখ্যা দেবেন এই সব মিথ্যাচার নিয়ে যারা নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন বা ঠেকাতে চেয়েছিলেন তাদের কার্যক্রমের? না তারা বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন। অথচ বিবৃতিদাতা সংগঠনগুলোর ওয়েব পেজে দেখালাম প্রত্যেকের উদ্দেশ্য খুবই সৎ। কেউ গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করতে চান। কেউ মানবাধীকার রক্ষা করতে চান। কেউ সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চান। কেউ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করতে চান। মোদ্দা কথা সবাই মানুষের জন্যে কাজ করতে চান। কিন্তু বাংলাদেশে তাদের কাজের যে নমুনা দেখছি, তাতে তো কথা কাজে মিলছে না।

অথচ এরইমধ্যে দুএকজন বিএনপি নেতা ২৮শে অক্টোবরে মিয়া আরেফি সংবাদ সম্মেলনে যুক্ত থাকার জন্যে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। মিয়া আরেফিও স্বীকার করেছে তাকে কারা কীভাবে কেন এখানে এনেছে? তাকে কারা টাকা দিচ্ছে। এক পর্যায়ে তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি বিএনপির প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিষয়টি জানেন। তার পরেও আজকের বিবৃতিবাজরা ওই মিথ্যাচার নিয়ে কোন কথা বলেননি। বলতেই হচ্ছে তারা প্রমাণিত মিথ্যাবাদিদের পক্ষেই আছেন।

তারা যে পক্ষেই থাক থাকুক, আমার কিছু বলার নেই। আমার প্রশ্ন পাঠকের কাছে, যে দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সাধারণ মানুষের ভর না করে এত এত মিথ্যার ওপর ভর করতে হয় সেই দাবি কী নায্য? আমাদের বিবৃতিবাজ বন্ধুরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাননি। তারা বলেননি নির্বাচনের দিন কেন হরতাল ছিলো? তারা বলেননি নির্বাচনের একদিন আগে কেন ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করে ভোটারদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করা হলো? অথচ এসবের মধ্যেই নির্বাচন হয়েছে। প্রায় ৪২ভাগ মানুষ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে গণগন্ত্র রক্ষার নির্বাচনে ভোট দিতে এসেছেন। অথচ গণতন্ত্রের শিক্ষক দাবিদার মার্কিন মুলূকের সব শেষ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৪৫ ভাগ।

বিবৃতিবাজ বন্ধুরা ৪২ ভাগ সাহসী ভোটারের রায়ের প্রতি কোন সম্মান দেখানি।বলছেন নির্বাচন বাতিল করতে হবে!এই লেখাটি স্যোস্যাল মিডিয়ার স্টাটাসের জন্যে লিখলে বলতাম “মামুর বাড়ির আবদার” সঙ্গত কারণে সেটা বলতে পারছি না। আবার সাংবাদিকতার স্বার্থে জিম বেটস এর উদ্ধৃতি দিয়ে এও বলতে পারছি না যে, নির্বাচনী প্রপাগাণ্ডায় সদ্য বিনিয়োগ করা ৭ মিলিয়ন ডলারের সঙ্গে এই বিবৃতির যোগাযোগ আছে। আমাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদক বন্ধুরা নিশ্চয়ই বিষয়টির খবর রাখছেন।

শেষ করার আগে, পাঠকদের শুধু এটুকু বলি, আমাদের এবারের নির্বাচন যারা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, তারা গায়ের জোরে করছেন। এদের হাতে কোন তথ্য প্রমাণ নেই। তাদের কাজ মানুষের মনে বিষ ঢালা। দীর্ঘদিন ধরে তারা কাজটি করছে। বরাবরের মত তাদের এবারও লক্ষ্য, বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশকে অসম্মান করা।আপনারাই যদি তাদের প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোর জন্যে আপনাদের কোন কাজ আছে? পারবে কোন উত্তর দিতে? আসলে এদের শুধু “অধিকার” আছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালমন্দ নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার কখনো তৈরি হয়নি।

লেখক: গণমাধ্যম কর্মী