এবার বঙ্গবন্ধুর বুকে গুলিবর্ষণকারী খুনি মোসলেহ উদ্দিনও আটক?

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বুকে গুলিবর্ষণকারী পলাতক খুনি রিসালদার (অব.) মোসলেহ উদ্দিন খান ভারতে অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দাদের হাতে তথ্য এসেছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক বছর পর থেকে মোসলেম উদ্দিন ভারতে অবস্থান করছেন। এখান থেকেই তিনি কয়েকটি দেশেও যাতায়াত করতেন। এমনকি কয়েক বছর আগে তিনি বাংলাদেশেও এসেছিলেন।

সূত্র বলছে, পশ্চিমবঙ্গের গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকায় তার স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে তিনি আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসক হিসেবে ডাক্তার দত্ত নামেপরিচিত ছিলেন। কয়েকদিন আগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি আবদুল মাজেদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হতো বলেও জানা গেছে। খবর আনন্দবাজার।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে মোসলেহ উদ্দিন অন্যতম। গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজহাতে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহ উদ্দিন। ঠাণ্ডা মাথার এ খুনি জেলহত্যা মামলারও আসামি। এরপর অন্য খুনিদের সাথে তিনিও বঙ্গভবনে দায়িত্বপালন করেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তখন দেশে তিনি দুই-একবার আসেন বলেও জানা গেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনিদের সাথে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। কয়েক বছর পর যান ভারতে। সেখানে উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

সূত্রটি জানিয়েছে, সর্বশেষ ২০১৮ সালে সে বাংলাদেশে এসে পরিবারের সাথে কয়েকদিন ছিল।

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার পর গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহ উদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। এসময় গোয়েন্দারা মোসলেহ উদ্দিন স্ত্রী ও সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে মোসলেহ উদ্দিন জার্মানিতে থাকার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এরপর আবদুল মাজেদ এবং মোসলেহ উদ্দিনের ভারতে থাকার মোটামুটি নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়। তখন এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়।

রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান বর্তমানে নরসিংদীতে বসবাস করেন। তিনি বলেন, বহু বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে তার বাবার কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।

জানা যায়, মোসলেহ উদ্দিনের পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে সবকিছু ঠিক থাকলেও শুধু পিতার নাম বদল করা হয়েছে। মোসলেহ উদ্দিনের নামের জায়গায় লেখা হয়েছে রফিকুল ইসলাম খান।

মোসলেহ উদ্দিন ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর নরসিংদী জেলার শিবপুরের দত্তেরগাঁও এলাকায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। ’৯৬ সালের আগ পর্যন্ত কোনো সরকারই মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি বিএনপি সরকারের সময় তার বাড়িতে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা থাকতো। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হলে তার বাড়িসহ বেশকিছু সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। একপর্যায়ে খুনি রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন পালিয়ে যান। তার পরিবারের সদস্যরাও দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। অনেকেই নিরাপদ স্থানে গা ঢাকা দেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামিদের কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কয়েক বছর পর তাদের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে আসে। এ সুযোগে মোসলেহ উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা ফের নরসিংদী এলাকায় ফিরে আসেন। কিন্তু এবার মোসলেহ উদ্দিনের ৫ ছেলে ও এক মেয়ের সবাই কৌশলে পিতার নাম বদলে নিতে সক্ষম হন। জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে সরকারি সব ধরনের কাগজপত্রে তাদের পিতার নাম হয়ে যায় রফিকুল ইসলাম খান।

নতুন পরিচয়ে তারা সমাজের মূল ধারায় মিশে যান খুব সহজে। চাকরি ও ব্যবসা- বাণিজ্য শুরু করেন নতুন করে। মোসলেহ উদ্দিনের বড় ছেলে সাজিদুল ইসলাম খান নরসিংদী শহরের টাউন হল মোড়ে হোটেল ব্যবসা করছেন। দ্বিতীয় পুত্র শফিকুল ইসলাম খান চাকরি নেন জেনারেল ফার্সাসিটিক্যালস কোম্পানিতে।

তৃতীয় ছেলে মাহমুদুল ইসলাম খান সিনিয়র আরএসম পদে চাকরি পান অ্যালকো ফার্মাসিটিক্যালসে। চতুর্থ পুত্র মজিদুল ইসলাম খান পরিবারিক সম্পত্তি দেখাশোনা করেন এবং পঞ্চম পুত্র মহিদুল ইসলাম খান নদী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন উঁচু পদে। মোসলেম উদ্দিনের একমাত্র মেয়ে সানাজ খানের বিয়ে হয় নরসিংদীতেই। তার স্বামী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া এখন দক্ষিণ কারারচর মৌলভী তোফাজ্জল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

জাতির পিতার খুনিদের মধ্যে ছয়জন দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন খান। ২০০৯ সালে পলাতক এই ছয়জনের বিষয়ে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে।

সূত্র-পূর্বপশ্চিমবিডি