ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ (ভিডিও সহ)

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। নির্দিষ্ট সময় বেধে দিলেও সেদিকে কোন কান দেন না এই সব রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

হাসপাতালের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হলেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। বুধবার সকালে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক তাহাজ্জেল হোসেন নিজেই এক ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভকে ধরে পুলিশে দিলেও অজ্ঞাত কারনে তাকে ছেড়ে দিতে হয়।

সপ্তাহের দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার রিপ্রেজেন্টেটিভদের জন্য নির্ধারন থাকলেও প্রতিদিনিই তাদের আনাগোনা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে।

ডাক্তারদের বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন দিয়ে তাদের সাথে সু-সম্পর্ক তৈরি করে নিজ কোম্পানীর ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে নেওয়াই হচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য। ডাক্তার চেম্বার থেকে রোগী বের হওয়ার সাথে সাথে তাদের দৌড়ঝাপ শুরু হয়ে যায় প্রেসক্রিপশন দেখা নিয়ে। পকেট থেকে স্মার্ট ফোন বের ছবিও তুলে নেন প্রেসক্রিপ্সনের।

বুধবার দুপুরের আগে হাসপাতালে গিয়ে দেখা এই চিত্র। বেশ কয়েকজন ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা ডাক্তারের চেম্বারে কেউ কেউ প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা নিয়ে ব্যাস্ত আবার কয়েকজন বাইরে অপেক্ষ করছে।

৭০ বছরের বৃদ্ধ গনী মেম্বর, ডাক্তারের চেম্বার থেকেই বের হতেই ড্রাগ ইন্টারন্যাশনাল এর প্রতিনিধি মেহেদী হাসান তার হাতে থাকা প্রেসক্রিপশন টা নিয়ে ছবি তুলে নিলেন। জিজ্ঞেস করতেই বলে উঠলেন, কোম্পানীকে দেখাতে হয়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ আপনাদের জন্য নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে দিয়েছে আজ কেন। এমন প্রশ্নে মেহেদী হাসান জানান কোম্পানীকে দেখাতে আমরা কাজ করি কি না। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিনিই আসতে হয়।
ল্যাব এইড এর প্রতিনিধি আব্দুর রব বলেন, কোম্পানীকে প্রেসক্রিপ্সনের ছবি না দিলে চাকরী থাকবে না। তাই হাসপাতাল কতৃপক্ষ নিষেদ করলেও আসতে হয়।

ওষুধ লেখাতে ডাক্তারদের কোন উপঢৌকন দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে আব্দুর রব বলেন, এগুলো কোম্পানী ঠিক করে। আমাদের কাজ প্রতি মাসে যেভাবেই হোক ৭০-৮০ হাজার টাকার ওষুধ বিক্রি করতে হবে।

হেলথ কেয়ার কোম্পানীর প্রতিনিধি শরিফুল বলেন, আমাদের অফিসিয়ালভাবে প্রেসক্রিপশন সার্ভে দেওয়া লাগে। সেজন্য নিষেধ থাকা সর্তেও আসতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ডাক্তার জানান, রিপ্রেজেন্টিভরা তো গরিব মানুষ, এদের পিছনে লেগে লাভ কি। কোম্পানীর চাপে পড়ে এদের আসতে হয়। উপঢৌকনের বিনিময়ে ওষুধ প্রেসক্রাইভ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন ডাক্তাররা।

হাসপাতাল ক্যাম্প ইনচার্জ রাকিব জানান, বুধবার সকালের দিকে হাসপাতালের তত্বাবধায় তাহাজ্জেল হোসেন এক রিপ্রেজেন্টিভকে ধরে আমাদের কাছে দেয়। পরে মুচলেকা দিয়ে সে ছাড়া পাই। এসব কাজ তত্বাবধায়কের না আপনাদের জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদের। আমরা হাসপাতালের পরিবেশ স্বাভাবিক সুষ্ঠ রাখতে সব সময় সোচ্চার থাকি।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক তাহাজ্জেল হোসেন জানান, আমরা আমাদের মত চেষ্ট করি হাসপাতালের পরিবেশ ঠিক রাখতে। কিন্তু একা চেষ্ট করে লাভ কি, কেউ যদি সহযোগীতা না করে। আমি কিছু করতে গেলে আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।

মেপ্র/ইএম