করোনাভাইরাসের প্রভাবেই কি চাকরিতে ঝুঁকছেন তারকারা?

২০২০ সালের মার্চ মাসে প্রথম লকডাউন দেওয়া হয় বাংলাদেশে। সারা দেশেই জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়ে যায়। কর্মহীন হয়ে পড়েন চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও। দীর্ঘদিনের লকডাউনের কারণে অর্থনীতির ওপর ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যান্য সেক্টরের মতো বিনোদন অঙ্গনের তারকাশিল্পী থেকে শুরু করে নির্মাতা-নাট্যকাররাও কর্মহীন হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে শুটিংসংশ্লিষ্ট মানুষ বেকায়দায় পড়ে যান। এদের বিশাল একটি অংশ ঢাকা ছাড়েন। প্রথমবার লকডাউন শেষে কিছুদিন বিধিনিষেধ দিয়ে অফিস-আদালত-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললেও আবারও লকডাউনের খপ্পরে পড়ে দেশের বিনোদন জগৎও। এর কারণে পেশা পরিবর্তন কিংবা আপৎকালীন নতুন কাজে যোগ দিয়েছেন অনেকেই।

অভিনেতা আজিজুল হাকিম চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক হিসাবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি নিয়মিত অভিনয়ও করছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘করোনার কারণেই যে আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি, তা কিন্তু নয়। আসলে করোনাকাল শুরুর অনেক আগে থেকেই আমি চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পাচ্ছিলাম। তখন সেই প্রস্তাবগুলো আমার ভালো লাগেনি। ওয়ালটনেও অনেক আগে থেকেই কথা চলছিল। করোনাকাল শুরু এবং আমি নিজেও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে চাকরিতে যোগ দিতে বিলম্ব হয়। আমি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবেই অফিস করছি, পাশাপাশি অভিনয়ও করছি। তাই আমি কৃতজ্ঞ ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের কাছে। করোনাকাল শুরু হওয়ার আগে থেকেই আমি বেছে বেছে কাজ করছি। সেই ধারাবাহিকতা এখনো আছে।’

আজিজুল হাকিমের চাকরি শুরু করার তিন মাস পর তার স্ত্রী নাট্যকার জিনাত হাকিমও প্রতিষ্ঠানটিতে নির্বাহী পরিচালক হিসাবে চাকরি শুরু করেছেন। এদিকে চলতি মাসে চিত্রনায়ক নিরব ‘শ্রেষ্ঠ’ নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হেড অব পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশন পদে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় ছিল। প্রায় সময়ই তার সঙ্গে আড্ডা হতো। তিনি হঠাৎ করেই এ পদে আমাকে চাকরি করার প্রস্তাব দেন। আমি যেভাবে চাইব, সেভাবেই আমাকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। তাই এতে যোগ দিয়েছি। করোনার মধ্যেও কিন্তু আমি অনেক নতুন ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। স্বাভাবিক সময়ের মতোই বলা যায় অভিনয় ব্যস্ততা আমার। করোনার কারণে আমি চাকরিতে যোগ দিয়েছি, বিষয়টি কিন্তু এমন নয়।’

নিরবের মতোই অভিনেত্রী শবনম ফারিয়াও ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ইভ্যালি’র মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন প্রধান হিসাবে যোগ দিয়েছেন গত জুনে। তিনিও অভিনয়ের পাশাপাশি এ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আরজে নিরব দীর্ঘকাল রেডিওতে চাকরি করলেও এখন অন্য ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। করোনাকালেই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালক হিসাবে তিন বছরের চুক্তিতে যোগ দিয়েছেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি। চাকরি, অভিনয় এবং পরিচালনা-এ তিন মাধ্যমেই সক্রিয় তিনি। এ প্রসঙ্গে মিমি বলেন, ‘করোনাকালে বিনোদন জগৎটাই স্থবির হয়ে আছে। তারপরও যতটুকু সম্ভব কাজ করে যাচ্ছি। করোনার কারণে কাজ কমে যাওয়াতেই নতুন চাকরি শুরু করেছি, বিষয়টি এমন নয়। শিল্পকলার মতো সম্মানজনক প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্ব পালন করার বিষয়টিকে আমি একটি অর্জন হিসাবেই মনে করি। কারণ, এখানে কাজ দেখানোর সুযোগ আছে। প্রার্থনা করি দ্রুতই করোনাকাল কেটে যাক, সবাই আবার প্রাণবন্তভাবে কাজ করুক, এ কামনা করি।

জানা গেছে, ঢালিউডের প্রতিশ্রুতিশীল চিত্রনায়ক সায়মন সাদিক, কায়েস আরজুরাও চাকরি শুরু করেছেন করোনাকালে। তবে করোনার আগে থেকেই চাকরি করেন চিত্রনায়ক আমিন খান। বিনোদনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাকাল দীর্ঘায়িত হলে তারকারা আয়ের বিকল্প উৎসের দিকে বেশি ঝুঁকবেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবই ব্যক্ত করছেন তারকারা।